চিকিৎসক যেখানে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি

Captureসার্জারিতে অভিনব এবং অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “আছির মেমোরিয়াল” স্বর্ণপদক পেয়েছেন মেজর জেনারেল অধ্যাপক হারুনুর রশীদ। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম “Bladder Exstrophy with Epispadias” রোগের সর্বপ্রথম সফল অপারেশন এবং চিকিৎসার জন্য গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ১৩তম ইন্টারন্যাশনাল সার্জিক্যাল কংগ্রেস ও সার্ক সার্জিক্যাল কংগ্রেসে এ তিনি পদক পান। ‘সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে চারদিনের এ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত শ্রেষ্ঠ সার্জন হিসেবে ‘আইকন অব সার্জনস’ খেতাব পান অধ্যাপক গোলাম রসুল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সার্কভুক্ত ৫টি দেশের ৩০ জন সার্জনের পক্ষ থেকে সার্জনদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
1

রোগ এবং রোগের চিকিৎসার বাইরে, রোগীর দূর্বিষহ জীবনে একজন চিকিৎসক দেবদূতের মত আবির্ভূত হয়ে কত বড় ভূমিকা রাখতে পারেন-১০ম “আছির মেমোরিয়াল” স্বর্ণপদকের পেছনের গল্পটি সাধারণ মানুষতো বটেই চিকিৎসকদেরও মুগ্ধ করেছে। বাংলানিউজ২৪ কে বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের “প্ল্যাটফর্ম” থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি রোগী শাহ মোঃ সায়েমের জীবনে চিকিৎসক মেজর জেনারেল হারুনুর রশিদের অবদান “একটি অনন্য সাফল্যের গল্প” ফিচারে তুলে আনার জন্য। এটি শুধু একজন সায়েম বা একজন ডাক্তার হারুনুর রশিদের গল্প নয় বাংলাদেশের ৭৫ হাজার রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কোটি সাধারণ মানুষকে সেবার একটি দৃষ্টান্ত মাত্র যা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।

চিকিৎসক যেভাবে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিঃ প্রস্রাবের পথে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বড় হতে থাকে সায়েম। নিজের প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারত না। সায়েমের বাবা মা ছেলের চিকিৎসার জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যান। সায়েম ততদিনে কৈশোর পেড়িয়ে ২৫ বছরের যুবক। চিকিৎসক মেজর জেনারেল হারুনুর রশিদের কাছে তাঁরই শিক্ষক সেনাবাহিনীর অধ্যাপক চিকিৎসক মেজর জেনারেল সিরাজ জিন্নাতরে চিঠি নিয়ে আসে সায়েম। ডাঃ হারুনের কাছে তাঁর শিক্ষকের অনুরোধ সায়েমের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার। সময়টা ১৯৯৬ সাল। বাংলাদেশে এ ধরনের অসুখের চিকিৎসায় তখনো সাফল্য আসেনি। দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা, জটিল অপারেশনের দায়িত্ব নিলেন ডাঃ হারুনুর রশিদ। পেশাগত দায়িত্ববোধ, উচ্চতর পড়াশোনা, গবেষণা এবং নিজ যোগ্যতা দক্ষতার প্রমাণ রেখে সায়েমের অপারেশন তিনি করেন ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশে এ ধরনের অপারেশনে প্রথম সফল হলেন ডাঃ হারুনুর রশিদ। সায়েমের বয়স এখন ৪২, অপারেশনের পর ২০০০ সালে তিনি বিয়ে করেন এবং দু’সন্তানের জনক। সম্মেলনে সায়েমের স্ত্রী এবং দুই শিশু পিতার চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। চিকিৎসক হারুনুর রশিদ সম্পর্কে সায়েম বলেন- “হারুন স্যার আমার কাছে স্রষ্টার প্রতিনিধি”। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সায়েমের আরেকটি অপারেশন করবেন মেজর জেনারেল হারুনুর রশিদ।

চিকিৎসক হারুনুর রশিদঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ৩৫ বছর চাকরি করে বর্তমানে মেজর জেনারেল হারুনুর রশিদ সেনাবাহিনীর কনসালট্যান্ট সার্জন জেনারেল ও চিফ ইউরোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত। প্রয়াত অধ্যাপক মোঃ আছিরউদ্দিনের সম্মানে প্রবর্তিত “আছির মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল” এবং “আছির মেমোরিয়াল লেকচার” এর ব্যবস্থাপনা করে থাকে “সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ’। সেনাবাহিনী থেকে মেজর জেনারেল হারুনুর রশিদ প্রথম এ স্বর্ণপদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন, এ পর্যন্ত ১০জন গুণী চিকিৎসক এ সম্মাননা অর্জন করেছেন।

প্ল্যাটফর্মের পক্ষে, ডাঃ মোহিব নীরব

ডক্টরস ডেস্ক

6 thoughts on “চিকিৎসক যেখানে সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি

  1. আমার খুব ভাল লাগছে যে, স্যারের মত সাদা মনের মানুষ এই পুরস্কার পেয়েছেন…।সে অনুষ্ঠানে স্যারের সাথে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিঃ এফসিপিএস পার্ট ওয়ান (মেডিসিন) ১

Tue Dec 8 , 2015
FCPS Part 1 in MEDICINE :- প্রস্তুতিসহায়ক লেখা অভিজ্ঞতার আলোকে (প্রথম পর্ব) এফসিপিএস পরীক্ষার বাকি আর মাসখানেকের মত।আশা করি সবারই প্রস্তুতি চলছে। নিজের সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা আলোচনা করছি পেপারভিত্তিক, ইনশাআল্লাহ সবারই উপকার হবে। প্রতিটি টপিকের জন্য ডেভিডসন এবং অ্যানাটমি-ফিজিওলজি-ফার্মাকোলজি এই দুই ভাগ হিসেবে পড়তে হবে।ডেভিডসন পড়তে হবে ২২তম […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo