শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তে ভেজা খোলা চিঠি ২

এক বুক আশা আর পরম নির্ভরতা নিয়ে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে অভিভাবকরা পঞ্চাশজন ছেলেমেয়েকে সাদা এপ্রোন পরিয়ে পাঠিয়েছিলেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ গাজীপুরে। সেই থেকেই গাজীপুর শহরটাকে তাদের আপন করে নেয়া।আপন করে নেয়া শহরটার মানুষগুলোকেও। বিনিময়ে কিইবা চেয়েছে তারা??? সম্মান ও নিরাপত্তারর সাথে পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়ে বের হওয়া এই সামান্যই তো। কিন্তু সেদিন বুঝতে তাদের বড় ভুল হয়ে গেছিলো যা প্রথমদিকে স্যারদের স্নেহ,পড়াশোনার ভীড়ে অনুধাবন করতে না পারলেও গত দুই বছরে নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় তাদের বুঝতে বেশি দেরি হয়নি।ক্লাস শুরুর পর থেকেই একের পর এক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। কাহিনীর শুরু হয়েছিল জানুয়ারিরর কোন এক মধ্যরাতে।পড়ালেখায় ব্যস্ত গার্লস হোস্টেলের নিচতলার দুই শিক্ষার্থী। হঠাৎ জানালায় ভীষণ জোরে শব্দ। তাকিয়ে দেখতে পেল জানালায় বাইরে থেকে কে যেনো টর্চ দিয়ে জানালায় আলো ফেলছে রুমের ভেতর।ভয়ে বাকরুদ্ধ কারো আর পড়া হয়নি সে রাতে।এরপর থেকে যেন এসব নিত্যদিন এর কাহিনীতে পরিণত হল। কখনো কারো রুম এ টর্চ এর আলো তো কখনো কারো রুম এ ঢিল ছোড়া। জানানো হলো কলেজ কর্তৃপক্ষকে। জানল সবাই কিন্তু প্রতিকার হলো না কিছুর। আগাতে থাকলো ঘটনাদি। এক রাতে একজন ছাত্রী নিজ চোখে দেয়াল বেয়ে এক লোককে ছাদে উঠতে দেখার পর দৌড়াতে গিয়ে আহত হলো।এরপর ঘটনা আগালো আরো এক ধাপ।ছাত্রীদের রুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ,পায়ের আওয়াজ। এরপর একদিন যখন হোস্টেলের ভেতর এক জলজ্যান্ত লোককে ধরা হলো,কর্তৃপক্ষ তাকে পাগল সাব্যস্ত করে ছেড়ে দিলো নির্বিচারে।কিন্তু সেই থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে নিরাপত্তার বিষয়টা। তবুও শেষ হলোনা ঘটনার বরং একদিন রাতের ঘটনার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেল সব ঘটনাকে। এক ছাত্রীর রুমের সামনে অনেক ছাত্রীর উপস্থিতিতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করে চলে গেল। ভয়ে থরথর করে কাপতে থাকা শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাদের বলা হলো লোকগুলোকে চিহ্নিত করতে,হাজার মানুষের ভিড়ে।যেখানে ঘটনাগুলো ঘটে অন্ধকার রাতে।এমনই ছাত্রী হোস্টেলে যার চারপাশে কোনো আলোর ব্যবস্তা নেই। ছাত্রীরা সেইদিনই বুঝতে পারে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রনে সব কিছু নেই।এসব ব্যাপারে এখন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রয়োজন। কারণ গাজীপুরবাসীর আন্তরিকতার অভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষের সকল প্রচেষ্টা মলিন হয়ে গেছিলো। প্রফের আগের রাতেও তাই কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কল্যাণে ভাইভার পড়া বাদ দিয়ে তাই তাদের এক রুমে সবাই মিলে ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে থাকতে হয়। দামি মোবাইল চুরি হয়েছে কিন্তু তাতে কি!! নিজেদের সম্ভ্রম যখন হুমকির তখন এসব তুচ্ছ ঘটনা ভাবার সময় হয়নি কখনো। শুধু সিলেট, নীমফামারী কিংবা রাজশাহী থেকে আসা মেয়েটা মায়ের ফোন পেয়ে প্রতিবার চোখ মুছে বলেছে “কোনো সমস্যা নেই মা। আমি ভাল আছি। ঢাকায় থাকা মেয়াটার মা নিয়ে যায় বাড়িতে এই ভেবে থাক না হোক মেয়ে ডাক্তার তবু কিছু না হোক মেয়েটার। অবশেষে প্রশাসন এগিয়ে আসায় তারা আশ্বস্ত হলেও দুই দিনের প্রতীকী পুলিশ টহল। আর তারপর???? অজানা আশংকা আর নিরাপত্তাহীনতায় এভাবেই কাটছে দিন তাদের।

(সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ ছাত্রদের উপর বহিরাগত মাদকসেবীদের হামলা এবং কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বার বার বিভিন্ন মহল থেকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া আর কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সাথে ছাত্র ছাত্রীরা দেখা করতে চাইলে অসহযোগিতা করা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ বলছে কোন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরার ব্যবস্থা নেই। অথচ যে কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাড়ির ব্যবস্থা থাকে। আর কত দূর্ঘটনা ঘটার পর কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন? নিরাপত্তাহীনতার কারণে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তীব্র হতাশা দেখা দিচ্ছে, এবং পড়াশোনার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষার প্রসার এবং মান উন্নোয়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এ উদ্দেশ্যে এ বছর ও ২টি নতুন সরকারী মেডিকেল কলেজ খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালু হওয়া নতুন মেডিকেল কলেজগুলোর সব গুলো এখনো নিজ ক্যাম্পাসে ক্লাশ শুরু করতে পারেনি, ছাত্রছাত্রীদের স্থায়ী হোস্টেলের কোন ব্যবস্থা হয়নি। যেখানে খোদ রাজধানীর সব চেয়ে নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তার যে অবস্থা সেক্ষেত্রে অন্যান্য মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা কেমন হতে পারে? কর্তৃপক্ষের বিমাতাসূচক আচরণের জন্য যদি আর কোন শিক্ষার্থীর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হয় তার দায় দায়িত্ব কী নেবে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ অথবা বিএমডিসি। বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার মান,পড়াশোনার পরিবেশ, হোস্টেল সব কিছুর নিশ্চিত করার অভিভাবক সংস্থা বিএমডিসি কী কোন ব্যবস্থা নেবে না?)

ডক্টরস ডেস্ক

2 thoughts on “শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তে ভেজা খোলা চিঠি ২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

BCR Therapy …A Cybernetic pain relief

Fri Aug 28 , 2015
The word pain derives from ‘Poena’ (Latin) means ‘Penalty.’ In ancient Greece pain was considered as ‘God’s punishment.’ Time – the old Gypsy man boarded his caravan from ancient age to this era of cyber technology. But still people did not get rid of pain. Moreover gazette depended modern sedentary […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo