ভুল অনুযোগে বিপত্তি, বিড়ম্বনার শিকার রোগী

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২০, রবিবার

ডা. মো. শহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি)
কনসালটেন্ট, মেডিসিন,
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা।

এক ভদ্রলোক এলেন তার ছেলেকে নিয়ে। ছেলের গিরায় ব্যথা, কোমরে ব্যথা। ডায়াগনোসিস লিখলাম, ঔষধ লিখলাম। তারপর বললাম, একজন রিউমাটোলজিস্ট দেখান। কারণ তাকে অনেক দিন ঔষধ খেতে হবে। ডায়াগনোসিসটা রিভিউ করলে ভালো হয়।

তিনি বললেন, “কাকে দেখাব?”

আমি তখন জেলা হাসপাতালে কাজ করি। সেখানে কোনো রিউমাটোলজিস্ট ছিল না। তাই বললাম, ঢাকা যান।

তিনি বললেন, “ভাল রিউমাটোলজিস্ট কে আছেন দু’একজনের নাম বলে দেন।”

আমি প্রথমেই সৈয়দ আতিকুল হক স্যারের নাম বললাম। তারপর আরও দু’একজনের। আতিকুল হক স্যারকে দেখানোর জন্য সিরিয়াল পাওয়া অনেক কঠিন, প্রায় অসম্ভব, সেটাও বললাম।

এবার তিনি নড়ে-চড়ে বসলেন। বললেন, এই অসম্ভব কাজটা তো আমি করেছি। পকেট থেকে স্যারের হাতে লেখা একটা প্রেসক্রিপশন বের করলেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে সেটা হাতে নিলাম। আমার খুব প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে স্যার অন্যতম।  কবিতা পড়ার আনন্দ নিয়ে প্রেসক্রিপশনটা পড়লাম। দেখলাম আমার ডায়াগনোসিস ঠিক আছে। বেশ কয়েকটা ঔষধ লিখেছেন। তার মধ্যে একটা ব্যথার ঔষধ আছে। বেশ লম্বা সময়ের জন্য লিখেছেন।

ভদ্রলোককে বললাম, “মাত্র কয়েকদিন হল স্যারকে দেখিয়েছেন। তারপর আবার আমার কাছে কেন আসলেন? আর প্রেসক্রিপশনটাই বা গোপন রাখলেন কেন? আমার পরীক্ষা নিলেন?”

ভদ্রলোক ক্ষমা চেয়ে বললেন, “আসলে ব্যাপারটা তা না। ভালো ডাক্তার শুনেই তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ভালো মানে যে এত ভালো, সেটা আপনার সাথে কথা বলার আগে বুঝতে পারিনি। তাঁর সিরিয়াল পাওয়া কঠিন। সেটা অনেকের ক্ষেত্রেই কঠিন। যা হোক আমি ওনার প্রেসক্রিপশনটা যখন এখানকার এক দোকানে দিলাম, দোকানদার বলল, ভাই আপনি কোথাকার কী ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন। বিশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। ব্যথার ঔষধ কেউ কখনও এতদিন ধরে দেয় না। ছেলের কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। আমি এই ঔষধ দিতে পারব না। আপনি অন্য একজন ডাক্তার দেখান।”

আমি বললাম, “ঔষধের দোকানদার একজন প্রফেসরের প্রেসক্রিপশনের ভুল ধরল আর সেটা আপনি মেনে নিলেন?”

তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, “দেখেন আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আমার ছাত্রদেরকে আমি শিখাই, মানুষ ভুলের উর্দ্ধে না।”

তাই তো। অকাট্য যুক্তি। সৈয়দ আতিকুল হক স্যার যত ভালো ডাক্তার হোন, যত জ্ঞানী হোন, কম্পিউটার তো নন, ফেরেশতাও নন। ভুল তো হতেই পারে।

তাকে আমি বললাম, “মানুষের সাথে কথা বলে আমার কী মনে হয় জানেন? মনে হয় চিকিৎসা করতে গিয়ে ভুল করে কেবলমাত্র ডাক্তাররা। আর এ ভুলগুলো চোখে পড়ে ঔষধের দোকানের কোনো সেলস ম্যানের, কোনো পল্লী চিকিৎসকের অথবা রোগীর কোনো নিকটজনের; যাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই। কারো কারো এমনকি বিজ্ঞান সম্বন্ধেও ধারণা নেই। তারা মনে করেন বিজ্ঞান আর সাহিত্য একই। কল্পনার রং মিশিয়ে একটা কিছু বলে দিলেই হল। অমুকের অমুক হয়েছিল তখন অমুক করা হয়েছিল, আমার রোগীর বেলায় অমুক না করে তমুক করা হয়েছে। কাজেই এটা ভুল। ব্যস, ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল। হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। আর একটা খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় আছে। ‘মানুষ মাত্রই ভুল’ এই প্রবাদটা কিন্তু কিছু জায়গায় খাটে না, এটা জানেন? আপনি দেখবেন, মানুষ হওয়ার পরেও কবিরাজ, পল্লী চিকিৎসক এবং বিদেশের ডাক্তার– এরা কখনও ভুল করে না।”

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের মৃত্যু

Sun Dec 6 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, রবিবার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে এবার শহীদ হয়ে চিকিৎসকদের মিছিলে যুক্ত হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজের প্রস্থোডন্টিকস্ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র’জিউন)। আজ ৬ ডিসেম্বর রবিবার সন্ধ্যা ৭ টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo