করোনার দিনগুলি – ৫

২ মে ২০২০, শনিবার

জীবন যেখানে থমকে গেছে, সময় যেখানে ঘড়ির কাটায় সীমাবদ্ধ, মানুষ যেখানে চার দেয়ালে বন্দি, ঠিক সেই সময়ে কিছু মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছে নতুন জীবন কে স্বাগত জানাতে! কিছু মানুষের যন্ত্রণা ভোলাতে!

যে সুপার কিউট বাচ্চাটা দেখছেন, এই বাচ্চাটা আজ আমাদের হাসপাতালে ভূমিষ্ট হওয়ার মধ্যদিয়ে যুদ্ধরত পৃথিবীতে পা রাখল। তার এই আগমনকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সেই সাথে কিছু প্রশ্ন মনে উকি দেয়, কখনও কি সে জানতে পারবে, যে সময়ে ও জন্ম নিয়েছিল কতটা কঠিন ছিল সেই সময়! কে ছিল সেই সময় তার পাশে!

হাসপাতালে যারা কর্মরত আছে, তাদের এক একজনের গল্প এক একটা মহাকাব্য…!

এখানে অনেকেই আছে যারা তার সদ্য ভূমিষ্ট বাচ্চার মুখখানাও দেখার সুযোগ পায় নি, মনের মধ্যে চেপে গেছে, রাজ্যের শত কষ্ট।

কেউ বা বাবাকে হাসপাতাল বেডে রেখেই চলে এসেছে যুদ্ধে শরিক হতে, কেউ বা নিজের মাঝে বেড়ে উঠা সন্তানের কথা ভুলে কাধে কাধ মিলিয়েছে।

আর সবার গল্পের এক জায়গায় খুব মিল আছে, সবাই পরিবার কে ছাড়া আছে দেড় থেকে তিন মাস হবে!

আবার অনেকে যুদ্ধে সামিল হওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, কিন্তু পরিচয় জানার পর কেউ থাকার জায়গা দেয় নি। বাধ্য হয়ে নিজের ডাক্তার পরিচয় লুকাতে হয়েছে।

কেউবা তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে একা বাসায় রেখেই চলে এসেছে। একজনের তো গা থেকে হলুদের দাগটাও যায় নি।

আর একজনতো আর এককাঠি সরেশ, বাড়ি হাসপাতালের পাশে হলেও নিজেকে হাসপাতালেই আবদ্ধ রেখেছেন, রোগীর সেবায় সদা নিয়োজিত। এই ত্যাগের প্রতিদান তিনি পেয়েছেন। কোন রোগী আসলেই সেই স্যার কেই খুজে বের করেন, তার কথা যেন আরোগ্য লাভের মহা ওষুধ।

আজতো এক রোগী আমাকে বলেই বসলেন, আপনারা শুধু নিজের নিরাপত্তাই চিন্তা করেন, তখন খুব ইচ্ছা হচ্ছিল বলি, হ্যাঁ আমরা নিজের কথা চিন্তা করি দেখেই আমার এক ভাই কোভিড পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সে মনে হয় ভাইরাসকে ভালোবেসে আলিংগন করতে গেছিল।

আর বাচ্চাটা স্পাইডার ম্যানের ড্রেস পরে অন্য বিল্ডিং এ দাড়িয়ে মামনির সাথে ইশারায় কথা বলে। করোনা ডাইনিকে শেষ করে মায়ের কাছে যাবে। আবার কেউ কেউ কোভিড পজিটিভ রোগীকে সেবা দিয়ে ফিরে এসে, এখন অপেক্ষা করছেন কবে আবার ময়দানে ফিরবেন, বিয়েটাও আটকে আছে করোনার জালে।

না এখনও শেষ হয় নি, চট্টগ্রাম থেকে এসে নিজের বসতবাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন এই হাসপাতালকেই। সেই কবে মা তার ছানি পড়া আবছা চোখে দেখেছিল ছেলেকে। আজ তার মায়ের চোখের ছানি নেই, সব পরিষ্কার দেখতে পায় শুধু তার ছেলের দেখা পায় নাই তাও বেশিদিন না মাত্র তিন মাস।

এইগুলা একেক জন মানুষের গল্প, একজন বাবার গল্প, একজন বাবার মেয়ের গল্প, একজন মায়ের ছেলের গল্প, একজন সন্তান সম্ভবা মায়ের গল্প! এই গুলা একজন ডাক্তারের গল্প, একজন স্বাস্থ্য সেবিকার গল্প, একজন স্বাস্থ্য কর্মীর গল্প।

যাই হোক, হে নতুন অতিথি তোমাকে এই প্যান্ডামিক দুনিয়ায় আবারও স্বাগতম। তুমিই হয়ত একদিন আঙ্গুল তুলবে এই মানুষ গুলোর দিকে!

ডা. আশফাকুর রহমান
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাবুগঞ্জ, বরিশাল

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে টুয়েন্টি ফাইভ

Sat May 2 , 2020
২ মে ২০২০, শনিবার ডা. শুভদীপ চন্দ পাশের ফ্ল্যাটের সে পিচ্চিটা চলে গেছে। আজ একবারও শুনলাম না ‘রা-জে-শ্ব-রী.. ওই ও রা-জে-শ্ব-রী…’! গতকাল, পরশুও শুনি নি। ওর নাম জানি না। রাজেশ্বরী এখন একা একা পুতুল খেলে। নিশ্চয়ই- তার পুতুলের সাথে বিয়ে হওয়া পুতুলও দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে থাকে। কোভিড উনিশ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo