লাইফ ইন লকডাউন, ডে টু হান্ড্রেড টু

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ নভেম্বর ২০২০, রবিবার 

ডা. শুভদীপ চন্দ

বৃদ্ধদের জন্য শিশু এক চমৎকার খেলনা। তাকে নিয়ে লোক চক্ষুর সামনে থেকেও আড়ালে চলে যাওয়া যায়। মহামূল্যবান এক সম্পদের প্রহরী হিসেবে নিজেকে মূল্যবান ভাবা যায়।

ছবিঃ প্রতীকী

শিশু কিন্তু নিরপেক্ষ নয়। পাঁচটা সাতটা বাজতেই অধীর আগ্রহে সদর দরজার দিকে চেয়ে থাকে। এ দরজা দিয়ে তার বাবা- মা আসবে। এ সময়ে বেজে চলা প্রতিটি কলিংবেলে তার আগ্রহ জুড়ে থাকে। আমি ভাবি তার এ অভিশাপ না কারো গায়ে লেগে যায়! বড় ভাইয়ের ছেলের বয়স দেড় বছর হয়। কথা কম বলে। চাঁদ দেখাতে বললে, আঙ্গুল তুলে চাঁদ দেখায়। শিশুরা সবার আগে দূরের যে বস্তুটি চেনে তা হলো চাঁদ। আজ এক চাঁদ উঠেছে। কালো বাটির মতো যে ঢাকনা আকাশ, সেখানে যেন এক বড় ছিদ্র আছে। সে ছিদ্র গলে অন্য জগতের আলো এ জগতে প্রবেশ করেছে। এ বাসার ছাদ টাইলস করা। সাদা টাইলসে বসার সিট বাঁধাই করা। সেখানে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়। পুরো ছাদে অসংখ্য টব। কতটিতে ফুল ফোটে। জানি না কোনটির কি নাম। শুধু গন্ধ শুঁকি। ফুলের পরিচয় ফুলে, নামে কী আসে যায়!

আমাদের হাসপাতালে এক রোগী ভর্তি আছে। নাম কবিতা। স্বামীর বাড়ি নেয় না, বাপের বাড়িও নেয় না। প্রতিদিন রাউন্ডে অনুরোধ করে- ‘আরও একদিন’। আমি ছেড়ে দেই। ইউএইচএফপিও এর কাছে কান্নাকাটি করে থাকার জন্য। ভাবি এ হাসপাতালে কেউ তো একজন আছে যে চাচ্ছে সময়টা ধীরে চলুক! দুইজন মানুষ পাশাপাশি থাকলেই কী প্রেম হয়? এক বিছানায় শুয়ে থাকলেই কী এক শরীরে মিশে যাওয়া হয়? সে জীবনটা কত কঠিন যেখানে এক বদ্ধ ঘরে অন্যজনের বিষাক্ত নিঃশ্বাস নির্বোধের মতো টানতে হয়। শ্বাস না নিয়ে তো বাঁচা যায় না। অত জায়গাও নেই যে অভিমান দেখানোর বিলাসিতা চলতে পারে। তারপর জেগে জেগে একসময় ক্লান্তিতে ঘুম। সে ঘুমে স্বপ্ন। স্বপ্নে দুইজনের দুই রকম মুক্তি। আরেকজন আছে যার স্বামী বিদেশ। কবে আসবে কেউ জানে না। কতদিন ধরে বিদেশ এ প্রশ্নের উত্তর ‘এক বছরে’ আটকে আছে সেও দুই বছর হয়। সে মেয়ে সাজতে ভালোবাসে। সেজেগুজে যে পাশ থেকে সবচেয়ে সুন্দর দেখায় সে ভঙ্গিতে ছবি তুলে। ছবি পাঠায়, ফোন করে। রাজ্যের ব্যস্ততা নিয়ে ওপাশের ফোন রিসিভ হয়। মেয়েটি সাদামাটা কথাও গায়ে পড়ে ফিসফিস করে বলে। তার হার্টের গতি যায় বেড়ে, সব কথা গলায় এসে আটকে থাকে বের হয় না। এমন পরিবর্তন সবার চোখেই পড়ে, সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে।

গায়ের রঙ একটু ময়লা। হাসপাতালে চাকরি করে। অল্প বিষ খেয়েছিল। সেদিন বুঝেছিলাম বাঁচার জন্য প্রেরণা প্রয়োজন, মরার জন্য প্রয়োজন আরও বড় প্রেরণার। আজ দেশের এক কোনায় আগুন লেগেছে ধর্মের নামে। ভয় হয় এ দেশের মাধুর্য বড়ই জীর্ণ, বড়ই নগ্ন আমাদের ভিতরের দীনতা। ঘর হোক বা রাষ্ট্র। এক, দুই ঘটনা না ঘটলে কেন যে চোখে পড়ে না- ভারী আশ্চর্য লাগে!

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অবশেষে মহামান্য আদালতে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের জামিন মঞ্জুর

Sun Nov 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২শে নভেম্বর, ২০২০, রবিবার অবশেষে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের জামিন মঞ্জুর করেছেন মহামান্য আদালত। মূলত, এএসপি আনিসুল করিম শিপনের অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় গত ১৭ই নভেম্বর, ২০২০ ইং তারিখে মঙ্গলবার ভোর ৫ টায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo