৬ জন চিকিৎসকের সাময়িক বহিষ্কার, চিকিৎসকদের জবাব

১৩ এপ্রিল ২০২০: গত ৯ এপ্রিল কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন হাসপাতালের ৬ জন চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ও কোভিড-১৯ কেন্দ্রে চিকিৎসা প্রদানে অসম্মতির কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার (১১ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পৃথক আদেশে উল্লেখিত চিকিৎসকদের সাময়িক বহিস্কার করা হয়। সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২ ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব চিকিৎসকদের বরখাস্তের ব্যপারে এ নির্দেশনা দেন।

প্রচারের পরপরই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এই নির্দেশনা। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রাপ্ত এক চিকিৎসক ৭১ টিভিতে এক লাইভ ফোনকলে নিজের অবস্থান ও বক্তব্য সবার সামনে তুলে ধরেন। তার বক্তব্যটি হুবহু দেয়া হল:

“আমি ডা. মো. ফজলুল হক, আমি আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারী হাসপাতালে কাজ করে যাচ্ছি। আমার মেইন পোস্টিং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। আমি সেখানেও বাংলাদেশে যখন প্রথম ইবোলা ভাইরাস হয়, সেই কেইসটি লিখি এবং সেটার পুরস্কার হিসেবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমাকে ওখানে রেগুলার পোস্টিং করে দেন এবং এখানেও আমি জানুয়ারি থেকে একদম রেগুলার কাজ করে গেছি। আমি কখনোই চিকিৎসা দিতে অপারগতা বা অনিচ্ছা প্রকাশ করি নাই। বাংলাদেশে প্রথম যে করোনার রোগী এখানে আসেন, তাকেও আমি রিসিভ করি। চীন থেকে যারা আসেন, তাদেরকে রিসিভ করেছি এবং বাংলাদেশের যেই রোগীটা প্রথম মারা যায়, সেই রোগীটার কফিন পর্যন্ত আমি এম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিয়ে তারপরে আমি আমার দায়িত্ব শেষ করি এবং ৩১ তারিখ পর্যন্ত এভাবেই আমি ফোকাল পার্সন হিসেবে কাজ করতে থাকি। ৩১ তারিখের পরে এপ্রিল মাস থেকে আমাদের রোস্টার হয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের জন্য। আমি সেখানে স্যারকে বলি যে, আমাকে দ্বিতীয় সপ্তাহে দেয়া হোক। আমাকে ১৫ তারিখ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে রোস্টারে দেয়া হয় এবং আমি সেই রোস্টারের, যেহেতু ১৫ তারিখ হতে রোস্টার, আমি ১ তারিখ থেকে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকি। আমি উত্তরায় ১ নং সেক্টরের একটি হোটেলে ৭০৬ নং রুমে বুকিং দেই এবং কোয়ারেন্টিনে আমি সেখানে অবস্থান করি এবং আমি নিজেকে তৈরি করতে থাকি। আমি ডিউটি পালন করবো এবং আমি স্যারকে বলি,” স্যার আমি এর আগেও এরকম দুর্যোগ মুহুর্তে জাতির কাজে আমি ঝাপিয়ে পড়েছিলাম ইবোলা ভাইরাসের সময় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। ”
আমি কখনোই অনিচ্ছা স্বীকার করিনাই, বলিও নাই। আমি আমার ডিউটি অবশ্যই পালন করবো। এই ১ থেকে ১১ তারিখের মধ্যেই দুই তিনবার হাসপাতালে যাই। আমার রোস্টার ডিউটি নাই, তারপরেও হাসপাতালে গিয়েছি। গত বুধবারেও হাসপাতালে যাই আর আজকে শনিবার দিন, আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি যে, আমার নামে একটা চিঠি আছে কৈফিয়ত তলব করে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে আগে থেকে কোনো কিছু ইনফর্ম করে নাই। সেখানে সময় দেয়া ছিলো যে, ডাইরেক্টর এডমিন স্যারকে সকাল ১০টার সময় জানাতে হবে। কিন্তু আমাকে জানানো হয় নাই। আমি সাথে সাথে চিঠি পেয়েই সেটার উত্তর লিখি এবং স্যারকে জানাই। স্যার আমাকে বলেন যে, আগামীকাল এটার আমি ব্যবস্থা করবো। কিন্তু যখন সন্ধ্যাবেলা আমি দেখি যে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হয়েছি, তখন আমি অবাক হয়ে যাই!
এই হাসপাতালে এতো কাজ করলাম! আমি এই হাসপাতালে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছি। ৪টা, ৫ টা পর্যন্ত, রাত ১০টা, ১১ টা পর্যন্ত কাজ করেছি সবাই জানে। তারপরেও আকস্মিক এই সংবাদে আমি হতাশ হয়ে যাই এবং অনেক কষ্ট পাই। যখন সামাজিকভাবে এটা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে আমি মানসিকভাবে অত্যন্ত কষ্ট পাই এবং এটার জন্য আমি সামাজিকভাবে হেয় হই এবং ডাক্তাদের কাছেও আমি হেয় হই। এজন্য আমি এটার সুবিচার প্রার্থনা করছি।”

উল্লেখ্য, উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর ১২ এপ্রিল, ২০২০ তারিখ এক চিঠি প্রেরণ করা হয়। উক্ত চিঠিতে অপর একজন চিকিৎসকের কথা উল্লেখ করা হয় যিনি ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিজের ডিউটি শেষ করে পরবর্তী রোটেশনের অপেক্ষায় ছিলেন।

বিএমএ মহাসচিব বলেন যে, চিকিৎসকদের বরখাস্তের পূর্বে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেয়া হয় নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন কাজে যে কেউ নিজেকে নিবৃত করতে পারবেন। তবুও এসকল চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কেউই কোভিড-১৯ রোগী দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেন নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকগণ অত্যন্ত সাহসের সাথে করোনা মোকাবেলা করছেন সেখানে এধরনের আদেশ হঠকারী এবং অনভিপ্রেত। তিনি এ হয়রানিমূলক আদেশের প্রেক্ষিতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানান।

নিজস্ব প্রতিবেদক

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

চীনে আবারও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা

Mon Apr 13 , 2020
১৩ই এপ্রিল ২০২০ এখনো সারিসারি মৃতদেহের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠতে পারেনি চীন। কোনও মতে দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত চীনে আবারও হানা দিল করোনা ভাইরাস। গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে ১৪৩ জন শনাক্ত হয়। তারপর থেকে আক্রান্ত সংখ্যা অনেকটা কম ছিল। কিন্তুু গত শনিবার (১১ই এপ্রিল) খবর পাওয়া গিয়েছে চীনে নতুন করে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo