দেশ-বিদেশ, ডাক্তারী ও কিছু কথা || পর্ব-২; আপনি কি বিবাহিত?

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ৪ আগষ্ট ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. সাদিয়া হোমায়রা সোহানা
এফ.সি.পি.এস (পার্ট-১; গাইনী)
এম.আর.সি.ও.জি (পার্ট-১)
প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার, সুলতান কাবুস হাসপাতাল, সালালাহ, ওমান।

খুব সহজ একটা প্রশ্ন, যা আমরা রোগীকে করি। আসলে কি সহজ? কথায় আছে, এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি। এই সহজ প্রশ্নটাই অনেক জায়গায় খুব জাজমেন্টাল শোনাবে। যেমন নর্থ আমেরিকায় কোন রোগীকে এই প্রশ্ন করা মানে একটা খারাপ কথা বলার সমান। ধরুন, একজন রোগী আপনার কাছে এবরশন বা জন্মনিয়ন্ত্রণ এর পদ্ধতি জানতে এসেছে, তাকে এই প্রশ্ন একদমই করা যাবেনা, যদি না সে নিজ থেকে আপনাকে এই তথ্য দেয়। কারণ সে বিবাহিত কিনা, তা আমার জানার বিষয় না। তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপায় বলাটাই আমার কাজ। এখন হয়তো আমার ধর্মীয় বোধের কারণে আমি এবরশন করিনা, তার পূর্ণ অধিকারও ডাক্তারের আছে। তবে তাকে কোথায় গেলে এই সাহায্য পাবে, তাও জানিয়ে দিতে হবে।

আবার অন্য দিকে বাংলাদেশ বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যদি অবিবাহিত কাউকে জিজ্ঞেস করেন যে, সে শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত কিনা, আপনাকে গালাগালির পর সম্ভবত সে রোগী ফেসবুক পোস্ট লিখতে বসে যাবে যে, ডাক্তার কত খারাপ। তাহলে তথাকথিত ফ্রী (?) সেক্সের দেশে কি এই প্রশ্নটা খুব সহজ?

উত্তর হচ্ছে, না।

ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলো করা কোথাও সহজ না। এখানেও এই প্রশ্ন গুলো খুব গোপন হিসেবেই বিবেচিত। তাহলে উপায় কি? প্রশ্নগুলো করা তো খুবই জরুরী।

এর উপায় হচ্ছে “উঠ ছেড়ি তোর বিয়া” স্টাইলে বলা যায়না। প্রথমে একটু ভূমিকা দিতে হয়, গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে তা জানাতে হয়, তারপর বাড়িতে কার সাথে থাকে? অথবা কোন রিলেশনশিপ আছে কিনা, এত কথার পর আসল কথা “Are you sexually active?” তারপর আরও গোপনীয় প্রশ্ন করলেও রোগী ক্ষেপে যায়না।

অনেককে বলতে শুনেছি বাংলাদেশে তো বিবাহপূর্ব শারিরীক সম্পর্ক নিষেধ (সামাজিক ভাবে), তাহলে এই কাজের কথা আমি কেন জিজ্ঞেস করব। করব, কারণ এটাই বাস্তবতা। রোগ এবং রোগের সমাধান জানতে, জানতে হবে। আর ডাক্তার হিসেবে “মরাল পুলিশিং” এর কোন সুযোগ আসলে নাই। একজন রোগীর ক্ষেত্রে যখনই জাজমেন্টাল হবো, আমার আচার আচরণ আর স্বাভাবিক থাকবেনা।

এই গুগলের যুগে অনেকেই নিজের শরীর এবং সেক্সুয়্যাল হেলথ নিয়ে সচেতন, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম। তাদের আগ্রহ আর আবেগ দুইই বেশী। তারা যদি কিছু জানতে চায় আমরা শকড হই। মনে মনে বলি “আবাল জণগণ”, “বেশি বোঝা বাঙালী”। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই বেশী বোঝা বাঙালীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তেই থাকবে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবাই কিছুনা কিছু জানছে। কোন শারিরীক সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে আসার আগে গুগল করে নিচ্ছে যে কেন হচ্ছে এমন। এর বিপরীতে রাগ করে কোন লাভ নাই এবং নিজেদের অভ্যস্ত করার এবং আপডেট করার কোন বিকল্প নাই।

একবার এক অনলাইন টিচারের লেকচার শোনার সময় উনি বললেন, “নর্থ আমেরিকায় রোগীদের কাছে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশী শুনবে তা হচ্ছে, “why doc”? তার যে অসুবিধা হচ্ছে, কেন? ঔষধ দিচ্ছ, কেন? এই ঔষধ, কেন? কেন এর উত্তর দিতে দিতে সময় চলে যাবে।” উনার কথার ভঙ্গিতে হেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু ইন্টারনেটের সুবাদে এখন সারা দুনিয়ায় এই “why” এর ছড়াছড়ি।

ওমানে, একবার আউটডোরে কাজ করার সময় এক রোগী আসলেন। আগের দুই বাচ্চা সিজারিয়ান এর মাধ্যমে ডেলিভারি হয়েছে। আমারে বললো, “ডাক্তার, এবার নরমালের ট্রায়াল দিবা নাকি আমাকে?” আমি বললাম, “না, তোমার তো আগে দুই সিজারিয়ান, এক সিজারিয়ান হলে ট্রায়াল দেয়া যেতো।” সে আমাকে বললো, “কিন্তু আমি ইন্টারনেটে দেখেছি, অমুক অমুক দেশে তো ট্রায়াল দিচ্ছে এবং ডেলিভারিও হচ্ছে। আমি রীতিমতো চমৎকৃত হলাম। প্রাইমারি স্কুল পাশ, স্বল্পশিক্ষিতা মহিলাটি রীতিমতো গবেষণা করে এসেছে। পরে হেসে বললাম, অনেক জায়গায় হচ্ছে, কিন্তু এখানে এখনো শুরু হয় নাই। তাই তুমি ট্রায়াল দিতে চাইলে একমাত্র ওইসব দেশে গিয়েই সম্ভব।

রোগী ইন্টারনেট থেকে গবেষণা করে আসলে, তাহলে উপায় কি। মনে মনে বিরক্ত হলেও সম্ভবত মুখে প্রকাশ না করাই ভালো। আমার আব্বা ডাক্তারের কাছে একটু বেশি কথা বললেই ধমক খান এবং বেশ মন খারাপও করেন।

বদলে যাওয়া সময়ের সাথে বদলে না গিয়ে উপায় কি। ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক ভালো করতে হলে প্রথম ধাপে সম্ভবত আমাদেরই এগুতে হবে। নইলে হলুদ সাংবাদিকরা তো আছেনই আমাদের মুন্ডুপাত করতে।

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৫০ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৯১৮ জন

Tue Aug 4 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৯১৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৫০ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ১,৯৫৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২,৪৪,০২০ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৩,২৩৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ১,৩৯,৮৬০ জন। দুপুর ০২.৩০ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo