চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সমকামিতা | ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি

[এই আর্টিকেলটি প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের উদ্দেশ্যে রচিত। আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় কিংবা এই ধরণের লেখায় যদি আপনি অভ্যস্ত না হন, তবে অগ্রসর না হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।]

ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি

সমকামিতা। হালের আলোচিত টপিক। কারো কাছে মানবিক, স্বাভাবিক। কারো কাছে পাশবিক, বিকৃতি। কারো কাছে ‘ঘেন্নার’, তবে ‘এটাও একটা ধরন’, ওদেরও আছে সমাজে বসবাসের অধিকার, ইত্যাদি। নিজের পছন্দমত যৌনচর্চার অধিকার। বিষয়টির বিভিন্ন দিক রয়েছে। কথার কথা, পিল বা সিজারিয়ান সেকশন এখন শুধুমাত্র ডাক্তারির বিষয় না, এটা সামাজিক ইস্যুও বটে। তেমনি সমকামিতা জিনিসটা কী— এর অনেক দিক রয়েছে: বৈজ্ঞানিক, সামাজিক, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক। এটা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক, সে উত্তর শুধু সায়েন্স দিয়ে দেয়া যাবে না। শুধু ‘প্রাণিজগতে আছে, তাই নর্মাল’ এই কথা বলে সিদ্ধান্ত দেয়া যায় না। ১৯৯২ সালে জানা গিয়েছিল এটা জেনেটিক, একাডেমিয়ায় পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হল, ২০১৯ সালে জানা গেল গে-জীন বলে কিছু নেই। বিষয়গুলো লিনিয়ার না, অবিসংবাদিত সত্যও না। বিতর্কিত বিষয়কে ধ্রুবতা দেয়াও অসততা। এভাবে বলা যায়, ‘পক্ষেও আছে, বিপক্ষেও মত আছে’ এবং এটাই একাডেমিক ভাষা।

ডাক্তার হিসেবে আমাদের গ্রেটার কনসার্ন স্বাস্থ্য। ঠিক-বেঠিক, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক সবকিছু আমাদের সবার বোধগম্য নাও হতে পারে, দরকারও নেই। কিন্তু প্রতিটা ডাক্তারের এটুকু বুঝা উচিত, সমকামিতার স্বাস্থ্যগত অবস্থান কেমন। পুরুষের সমকামিতা সর্বদা লিঙ্গ-পায়ুতে সীমাবদ্ধ নয়, কিন্তু পুরুষের সমকামিতার চূড়া হিসেবে অনস্বীকার্য। আর নারীদের সমকামিতা একটা ভিন্ন বিষয় পেনিট্রেশন না থাকায়।

মূল আলোচনা

যে ধরনের আবরণী কলার যেটা সহ্য করার ক্ষমতা নেই, সেখানে সেটা হলে (Stress) একটা সমস্যা হয়।
যেমন ধরেন, পাকস্থলীর ভিতরের আবরণে আছে স্তম্ভাকার কোষ। এরা সেখানে এসিড, শ্লেষ্মা ও অন্যান্য রসটস তৈরি করে। এখন, অন্ননালীর আবরণ আবার আঁইশাকার। যদি কারও দীর্ঘদিন পেটের খাবার উপরে উঠে আসার সমস্যা থাকে (Reflux), তাহলে ঐ আঁইশাকার কোষগুলো এসিডের ছ্যাঁকায় ছ্যাঁকায় পরিবর্তন হয়ে স্তম্ভাকার হয়ে যায়, এই প্রক্রিয়াকে বলে মেটাপ্লাসিয়া (Metaplasia)। এটা ভালো জিনিস না, ক্যান্সারপূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। এই অসুখকে বলে ‘ব্যারেটস ইসোফ্যাগাস’।

আবার পিত্তথলিতে পানি শোষণ ও পিত্তরস সংগ্রহ হয়, এখানে আবরণী কলা ‘স্তম্ভাকার’। যদি দীর্ঘদিন কোন পাথর থাকে, তাহলে পাথরের ঘষায় ঘষায় এখানেও মেটাপ্লাসিয়া হতে পারে। কেননা ঘষার উপযোগী তো আঁইশকার কোষ। একই কাহিনী হতে পারে পেশাবের ব্লাডারেও।

আবার শ্বাসনালীতে থাকে স্তম্ভাকার কোষ যাদের কাজ শ্লেষ্মা উৎপাদন। শেষপ্রান্তে গ্যাস অণু বিনিময়ের জন্য থাকে আঁইশাকার। ধূমপানের কারণে যে ক্যান্সার হয় তা মূলত নিকোটিনের কারণে না, তামাকের অন্যান্য উপাদানের কারণে, যেমন টার, বেনজিন। এসব কেমিক্যাল সহ্য করা স্তম্ভাকার কোষেরও কাজ নয়, একস্তর আঁইশেরও কাজ নয়। কেমিক্যাল সহ্য করতে চাই ত্বকের মত বহুস্তর আঁইশাকার কোষ, তাও আবার উপরে থাকতে হবে জড় কেরাটিন স্তর। ফলে এখানেও হবে মেটাপ্লাসিয়া। এবং ক্যান্সারে রূপ নেবে যদি কেমিক্যাল টর্চার চলতেই থাকে। স্তম্ভগুলো আঁইশে রূপান্তরিত হয়ে যে ক্যান্সার হবে তাকে বলে ‘আঁইশাকার কোষ ক্যান্সার’(Sqamous Cell Carcinoma, SCC)। আর আঁইশগুলো ঘনকাকার হয়ে যে ক্যান্সার হবে তার নাম ‘ঘনকাকার কোষ ক্যান্সার’(Small Cell Carcinoma)। আশা করি এতটুকু ক্লিয়ার।

এবার মূল আলোচনা শুরু। পয়লা আমরা যোনিপথের (Vagina) গঠন দেখব। এটা একটা নালী বা টিউবের মত অঙ্গ। স্বাভাবিক অবস্থায় এর দৈর্ঘ্য থাকে ২.৭৫ ইঞ্চি থেকে ৩.২৫ ইঞ্চি। আর নারীর উত্তেজিত অবস্থায় বেড়ে দাঁড়ায় ৪.২৫-৪.৭৫ ইঞ্চি। [1] পুরো যোনিপথ তো বটেই, সেই সাথে পুরুষাঙ্গ যেখানে গিয়ে ধাক্কা দিতে পারে, মানে সারভিক্সের যে অংশ যোনিপথের দিকে বেরিয়ে থাকে(Ectocervix), সে অংশও মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষে আবৃত (ঘর্ষণ উপযোগী)। যদিও মূল সারভিক্সের (Endocervix) আবরণ একস্তর স্তম্ভ কোষের [2]।

এবার প্রথমত, পায়ুর গঠনটা দেখি চলেন। ছবিটা দেখতে হবে খুব ভালো করে। পায়ু একটা নালী (Tube)। মাঝখান থেকে লম্বালম্বি চিরে ফেললে এমন দেখাবে। ছোট ছোট ঢেউয়ের মত কাল দাগ দেয়া আছে দেখেছেন? ঐ বর্ডার থেকে লোমওয়ালা বর্ডার পর্যন্ত এলাকাটা হল ‘পায়ুপথ’ (Anal canal), মাত্র ৪ সে.মি. (৩-৫ সেমি) [3]। এই এলাকাটুকু মার্ক করে ‘Anoderm’ লেখা আছে, মানে হল এখানে আবরণ আমাদের চামড়ার মতই, কেবল লোম-ঘামগ্রন্থি এসব নেই। এর উপর থেকে রেক্টাম বা মলাশয় শুরু। মানে হল কালো ঢেউ ঢেউ দাগের [ছবি-২] নিচের টুকু জড় কেরাটিন যুক্ত মাল্টিলেয়ার আঁইশাকার কোষের আবরণ (ত্বকের মত), আর উপরের অংশ রেক্টামে একস্তর স্তম্ভটাইপ কোষের আবরণ (পৌষ্টিকনালীর বাকি অংশের মত)[4]। নিচের ছবিতে তীর চিহ্নিত অংশে লক্ষ্য করুন, আবরণ হঠাৎ বদলে গেছে। বাম পাশে গোল গোল শ্লেষ্মাগ্রন্থি বিশিষ্ট পরিপাক আবরণী (digestive epithelium), আর ডানে মাল্টিলেয়ার আঁইশ টাইপ কোষ। বামে রেক্টাম, আর ডানে পায়ুপথ। আগের ছবিতে দেখেন সুপরিসর রেক্টাম থেকে বেশ চিকন পায়ুপথে মল আসার সময় বেশ ঘর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাই মাল্টিলেয়ার আঁইশ দেয়া হয়েছে। এখন আমার কথা হলঃ

১.
এখানে আমরা দেখলাম, পায়ুপথের মাত্র ৪-৫ সেমি জায়গা ঘর্ষণ উপযোগী। পরের এলাকাগুলো মোটেও ঘর্ষণ উপযোগী নয়। পুরুষের গড় উত্থিত লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চি, আমরা এক ইঞ্চি কমিয়ে ধরলাম। ৪ ইঞ্চি মানে ১০ সেমি। মানে লিঙ্গের বাকি ৫ সেমি গিয়ে আঘাত করবে রেক্টামের স্তম্ভাকার কোষের আবরণে, যা ঘর্ষণের জন্য অনুপযোগী [১ নং ছবি]। আর আমরা আগেই দেখেছি যে কাজের জন্য যা উপযোগী না, সেখানে সে কাজ হলে মেটাপ্লাসিয়া ঘটে। কোষের ধরন বদলে যায়, যা উপযুক্ত পরিবেশে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সমকামীদের মলদ্বারের ক্যান্সারের ঘটনা সাধারণ মানুষের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। [5] আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানাচ্ছে, পায়ুমিলন পায়ুক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। আরও বেশি সম্ভাবনা বাড়ে সমকামী পায়ুমিলনে।[6]

২.
যেহেতু এমন জায়গায় গিয়ে আঘাত হচ্ছে যা একস্তরী স্তম্ভ কোষ, মাল্টিলেয়ার না। ফলে প্রতিবার সেক্সে ইনজুরি হবেই। আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। ফলে এইডস ভাইরাস, প্যাপিলোমা ভাইরাস ইনফেকশন ছড়ায় দ্রুত। এইডস তো এইডস-ই, আর প্যাপিলোমা ভাইরাস-ই মূলত ৮০-৯০% মলদ্বারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী [7]।

.
টিউমার-এর খারাপ জাতটাকেই (malignant) বলে ক্যান্সার। টিউমার বড় হতে সাহায্য করে আমাদের দেহে উৎপন্ন প্রোস্টাগ্লান্ডিন (PG) নামক কেমিক্যাল গ্রুপের PGE2 ও PGF2. আর টিউমার তৈরি শুরু হতে সাহায্য করে PGE2, PGF2, ও PGE1. এবং এই ৩ ধরনের PG-ই অত্যধিক পরিমাণে আছে বীর্যে। দেহস্থ অন্য যেকোন রস বা টিস্যুর চেয়ে বেশি। [8] মানে বীর্য সহ্য করার ক্ষেমতাও পায়ুর নেই, যা জরায়ুর আছে।

৪.
এবার একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতামত তুলে ধরব। ডাক্তার Stephen E. Goldstone, MD সাহেব Mount Sinai School of Medicine, New York এ assistant clinical professor হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এবং তিনি gayhealth.com এর মেডিকেল ডিরেক্টর। তিনি ২০০০ সালের American Society of Colon and Rectal Surgeons এর বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, ১৯৯৭ সালের আগে আমি আমার পুরো ক্যারিয়ারে একটা পায়ু ক্যান্সারের রোগী পেয়েছি। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত আমি আমার চেম্বারে রেফার হয়ে আসা ২০০ পুরুষ রোগীর ডাটা সংগ্রহ করি। এদের সবাই নন-ক্যান্সার সমস্যা নিয়ে এসেছিল। এদের ৬৬% ছিল এইচআইভি পজেটিভ। বায়োপসি করে পেলাম, এদের ৬০% এর হাইগ্রেড আঁইশ কোষের টিউমার ক্যান্সার যা এখনও ছড়িয়ে পড়েনি (high-grade squamous intraepithelial lesions (HSIL) আর ৩% এর পেলাম ছড়িয়ে পড়া (invasive) ক্যান্সার। যদিও এদের কারোরই ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। [9] ফাইনালি তিনি সিদ্ধান্ত দেন, সমকামী পুরুষেরা পায়ুপথের যেকোন সমস্যা নিয়ে এলেই তাদের গভীর পরীক্ষা (aggressive screening) করা দরকার। হতে পারে ভিতরে ক্যান্সার-পূর্ব আরও মারাত্মক কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে।

৫.
পায়ুপথের অধিকাংশ ক্যান্সার Adenocarcinoma টাইপ, মানে গ্ল্যান্ড টাইপ। আঁইশকোষ ক্যান্সার (Sqamous Cell Carcinoma, SCC) খুব বিরল। কিন্তু অধুনা এই আঁইশকোষ ক্যান্সার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান University of California-র professor of clinical pathology জনাবা Teresa M. Darragh, MD ও associate director for gynecologic pathology জনাবা Barbara Winkler, MD.[10]
এই ক্যান্সার হচ্ছে ঠিক যে জায়গায় স্তম্ভাকার-টু-আঁইশাকার চেঞ্জটা হয়েছে তার সংলগ্ন উপরের অংশে যেখানে পুরোটাই স্তম্ভকোষ (squamo-columnar junction with the rectal columnar mucosa)। তাঁরা বলেন, পায়ুমৈথুনে (receptive anal intercourse) আঘাত-ইনজুরি-মেরামত চলতে থাকে, যা মেটাপ্লাসিয়া প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। (In this area of transition, there is active changeover of columnar epithelium to squamous epithelium through the process of squamous metaplasia. This process is accelerated by trauma, healing, and repair such as might be expected to occur with receptive anal intercourse.)

আবার দেখুন ছবিটা। কালো জীগজ্যাগ দাগটা হল সেই জাংশন [ছবি-২]। এর উপরে শার্পলি স্তম্ভকোষ শুরু, নিচে শার্পলি মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষ শুরু। দাগের ঠিক উপরের জায়গাটাতেই মেটাপ্লাসিয়া বেশি হয় আমরা জানলাম, সমকামীদের ক্ষেত্রে। দেখেন এই জায়গাটা বাকি রেক্টামের চেয়ে উঁচু, লম্বা লম্বা ভার্টিকাল ভাঁজ আছে । মানে ঘষা এখানে লাগে বেশি, বাকি রেক্টামের চেয়ে। যা ঘষা লাগার জন্য তৈরি হয়নি, তাতে ঘষা লাগতে লাগতে একসময় তাই ঘটে যা আমরা আগে বলেছি—মেটাপ্লাসিয়া। এই মেটাপ্লাসিয়া থেকে হচ্ছে এই ক্রমবর্ধমান হারে আঁইশ কোষ ক্যান্সার।

৬.
এবার [ছবি-৩] ছবির নীল রঙের জায়গাটা লক্ষ্য করুন। নীল যেগুলো দেখছেন, এগুলো শিরা, উচু জায়গাটাকে বলে‘কুশন’ (coushion)। এখানে যে বিখ্যাত অসুখটা হয়, তার নাম আপনারা সবাই জানেন— পাইলস (haemorrhoid)। দেখুন, ঐ নীল অংশটাই বেড়ে গোটার মত হয়
পায়ুর এই জায়গাটা অতিমাত্রায় রক্তনালীসমৃদ্ধ। দুটো ভিন্ন রক্ত পরিবহন সিস্টেমের মিলনস্থল এটা (Porto-systemic anastomosis)। [ছবি-৪] আবরণীর নিচেই রয়েছে প্রচুর রক্তজালক (venous plexus)। আঘাত/ঘর্ষণের জন্য এ জায়গাটা মোটেই নিরাপদ না। আসলে এই শিরাজালিকা চওড়া হয়ে ও মোটা হয়ে ঝুলে পড়ে হয় পাইলস। পাইলসের কারণগুলো যদি আমরা দেখিঃ [11]

– শিরা থেকে কম রক্ত ব্যাক করাঃ দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা, গর্ভাবস্থা, পায়ুপেশীর অধিক সংকোচন
– কোষ্ঠকাঠিন্য
– পেটে অধিক চাপ দেয়া
– গর্ভাবস্থা
– পারিবারিক ইতিহাস
– Lack of erect posture
– Familial tendency
– Higher socioeconomic status
– Chronic diarrhea
– Colon malignancy
– Hepatic disease
– Obesity
– Elevated anal resting pressure
– Spinal cord injury
– Loss of rectal muscle tone
– Rectal surgery
– Episiotomy
Anal intercourse
– Inflammatory bowel disease, including ulcerative colitis, and Crohn disease
তাহলে দেখা গেল পাইলসের একটা কারণ হল পায়ুসঙ্গম। পায়ুসঙ্গম নিজেই অনেকগুলো রোগের কারণ।

৭.
রয়টার্সের রিপোর্ট। ৬১৫০ জন নরনারীর ডাটা বিশ্লেষণ করলেন গবেষকগণ। এদের ৩৭% মহিলা একবার হলেও পায়ুসঙ্গম করেছেন। আর ৫% পুরুষ পাওয়া গেল যারা একবার হলেও পায়ুসঙ্গম করেছেন। প্রধান গবেষক Dr. Alayne Markland, University of Alabama জানান, পায়ুসঙ্গমের সাথে ‘পায়খানা ধরে রাখতে না পারা’র (fecal incontinence) সম্পর্ক আছে। এবং সেটা মেয়েদের চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি। এই ৩৭% মহিলার ৫০% এরই মাসে একবার হলেও fecal incontinence হয়, মানে কাপড় নষ্ট হয় আর কি। আর পুরুষের ৩ গুণ বেশি হয় এই দুর্ঘটনা। [12]

৮.
পিরোনীজ ডিজিজ (Peyronie’s Disease) নামে একটা অসুখ আছে। গবেষকগণ মনে করেন, লিঙ্গে ইনজুরি হয়ে লিঙ্গের অভ্যন্তরে রক্তপাত হতে পারে। অনেকসময় ইনজুরি লক্ষ্য করার মত না-ও হতে পারে, তবে ভিতরে রক্তপাত হয়ে থাকে [13]।

অত্যধিক পরিমাণে রক্তনালী থাকার কারণে সামান্য ইনজুরি হলেও রক্তক্ষরণ হতেই পারে, আপনার অজ্ঞাতেই। ফলে সেখানে তৈরি হয় স্কার (বাংলায় ‘চল্টা’ বলা যেতে পারে), এদের বলা হয় ‘প্লাক’। ফলে লিঙ্গ বেঁকে যেতে পারে বা এবড়োখেবড়ো হয়ে যেতে পারে। কারো কারও প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে, এমনকি লিঙ্গ উত্থিত হবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে। জানাচ্ছে American Urological Association.[14]

Southern Illinois University-র urologist Tobias Köhler, M.D. সাহেব জানাচ্ছেন ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকাকে, বেশি চাপ দিয়ে হস্তমৈথুন করলে হতে পারে এই অসুখটা [15]। তার মানে সামান্য এই ‘হাতের চাপেই’ রক্তক্ষরণ হয়ে যেতে পারে লিঙ্গের ভিতরে, কেউ তো আর কিল-ঘুষি দিয়ে মাস্টারবেশান করে না। বিছানা বা বালিশে ঘষাঘষি তো আরও মারাত্মক ব্যাপার। নিচের টেবিলটা খেয়াল করুনঃ [ছবি-৫]167 mm Hg মানে 22264.8 প্যাসকেল চাপ। অর্থাৎ ৩.২২ পাউন্ড ওজন এক বর্গইঞ্চিতে যে পরিমাণ চাপ দেয়। মানে ১.৪৬ অর্থাৎ প্রায় দেড় কেজি একটা বাটখারা লিঙ্গে বেঁধে দিলে যে চাপ অনুভব হবে অতখানি চাপ দেয় মলদ্বার সংকোচন (লিঙ্গের গোড়ার ক্ষেত্রফল এক বর্গইঞ্চি ধরেছি)। অনেক প্রেসার। লিঙ্গের মত সেন্সিটিভ অঙ্গের জন্য এটা অনেক প্রেসার। লিঙ্গ প্রবেশনের জন্য মলদ্বার খুবই রিস্কি জায়গা। মলদ্বারের চাপ নেবার মত ক্ষমতা নেই পুরুষাঙ্গের। আর স্কুইজ ছাড়া সারাক্ষণ প্রেসার থাকে ৭৭০ গ্রাম ওজন ঝুলিয়ে দিলে যেমন লাগবে, তেমন। হস্তমৈথুনেও এত চাপ দেয়া হয় না। নিঃসন্দেহে পেনিসে ইনজুরি হতেই হবে। পেনিস আর মলদ্বারে ইনজুরি না করে সমকাম করা অসম্ভব।

আমরা পায়ুপথে আঙুল দিয়ে একটা পরীক্ষা করি (Digital Rectal Exam, DRE)। তখন টের পাওয়া যায়, কত শক্তভাবে মলদ্বার চাপ দেয়। এছাড়া একটা স্বয়ংক্রিয় সংকোচন আছে মলদ্বারের যাকে বলে Anal Reflex/Anal wink. অর্থাৎ পায়ুর আশেপাশের ত্বকে কোন খোঁচা/ চিমটি দিলে পায়ু সংকোচন হয়। [16] পায়ুমৈথুনে এই চাপ অতিক্রম করে চাপের বিরুদ্ধে লিঙ্গ প্রবেশ ও চালনা করাতে হয়। আবার ভিতরেও রেস্টিং প্রেসারের বিপরীতে লিঙ্গচালনা করতে হয়। সেখানে প্রচুর শিরাজালকের উপস্থিতিও আমরা দেখলাম। মোদ্দাকথা লিঙ্গ ও পায়ুর দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান ইনজুরি না করে পায়ুমৈথুনের কোন সুযোগই নেই।

এজন্যই পায়ুমৈথুনে ২০ গুণ বেশি এইডসের সম্ভাবনা । আর এই রিস্ক আরও বাড়ে যদি আগে থেকেই রেক্টামে কোন ইনফেকশন থাকে [17]। আর আমরা দেখলাম, ইনজুরি ছাড়া পায়ুমৈথুন অসম্ভব। এক তো আবরণ ঘর্ষোণোপযোগী না, সিঙ্গেল লেয়ার, তার উপর আবার প্রেসার বেশি, ইনপুট প্রেসারও দিতে হবে বেশি, আবার রক্তজালিকা বেশি। তার উপর এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জীবাণু প্রজাতি E. coli যারা রক্তে এন্ট্রি পেলেই ইনফেকশন করে।

৯.
যোনিপথের Skene’s ও Bartholin’s গ্রন্থি থেকে প্রচুর পিচ্ছিল তরল নির্গত হয়। একজন মহিলার কোন উত্তেজনা ছাড়াই প্রতিদিন ১.৫ গ্রাম তরল বের হয়। আর উত্তেজিত হলে তা বহুগুণে বেড়ে যায় (arousal fluid)। আর অর্গাজমের সময় তা আরও বৃদ্ধি পায় [18]।

যোনিপথের মত পায়ুতে যথেষ্ট পিচ্ছিলকারকের উৎপাদনও নেই, ফলে প্রচুর লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে হয়। অনেক বিজ্ঞ সমকামী ভাইয়া বলতে পারেন, জেলী ব্যবহার করলেই তো আর আঘাত-ঘর্ষণের ফলে ইনজুরি আর হলো না। আচ্ছা, ২০১০ সালে International Conference on Microbicides এ ২ টা গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। ৪৭ টি দেশের সহস্রাধিক মাইক্রোবায়োলজিস্ট অংশ নেন। এই দুটি রিপোর্টের সারমর্ম হল, পায়ুকামে জেলী(lubricants) ব্যবহারে এইডসের রিস্ক আরও বাড়ে [19]। একটিতে বাল্টিমোর ও লস এঞ্জেলসের ৯০০ পুরুষ ও মহিলার ডেটা নেয়া হয়। গবেষকগণ দেখেন, যারা জেলী ব্যবহার করে তারা ৩ গুণ বেশি যৌনবাহিত রোগের (rectal sexually transmitted infections) ঝুঁকিতে আছে। আরেকটা স্টাডি বলছে, জনপ্রিয় জেলীগুলোকে ল্যাবে নিয়ে দেখা গেছে, সেগুলোর অনেকগুলো রেক্টাল কোষের জন্য মরণঘাতী(toxic)। যার ফলে এগুলো ব্যবহারে এইডসের ভাইরাসের প্রবেশ হয় আরও সহজ। এমনকি পুরুষ না কি নারী, এইডস আছে না কি নেই, কোন শহরে থাকে, কনডম ইউজ করে কি না, গত মাসে কতজন যৌনসঙ্গীর সাথে মিলিত হয়েছে— এই সবগুলো ফ্যাক্টরকে সমান সমান নিয়েও দেখা গেছে, পায়ুমৈথুনের (receptive rectal intercourse) আগে জেলী (lubricant) ব্যবহার করার সাথে পায়ুর যৌনবাহিত রোগের সম্পর্ক জোরালোই রয়ে গেছে। (Even after controlling for gender, HIV status, city, condom use, and number of sex partners in the past month, the association between use lubricant before receptive rectal intercourse and rectal STIs remained strong) জানাচ্ছেন গবেষকদলের প্রধান Dr Pamina Gorbach যিনি School of Public Health এবং University of California, Los Angeles-এর David Geffen School of Medicine-এর একজন চিকিৎসক।

University of Pittsburgh ও Magee-Womens Research Institute এর Charlene Dezzutti, Ph.D এর নেতৃত্বে পরিচালিত আরেকটা গবেষণার রিপোর্টে বহুল প্রচলিত ৬ টা জেলী নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে,

– এতে অনেক বেশি পরিমাণে লবণ ও শুগার থাকে যা কোষের পানি টেনে নেয়। ডিহাইড্রেশান হয়ে মারা যায় আবরণী কোষ। ইনফেকশনের জায়গা করে দেয়।
– আবার কোনটা পায়ুর ভালো ব্যাকটেরিয়ার পুরো বসতিই জ্বালিয়ে দেয়। ফলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া আসার সুযোগ পায়।

মোটকথা, যোনিতে যেখানে প্রচুর লুব্রিক্যান্ট ক্ষরণের ব্যবস্থা আছে, সে তুলনায় পায়ুতে প্রায় জিরো। লুব্রিক্যান্ট নিয়েও শেষরক্ষা নেই, ইনফেকশান হবেই। কেননা আগেই দেখেছি, কেমিক্যাল সহ্য করার জন্য চাই মাল্টিলেয়ার আঁইশ কোষের আবরণ। রেক্টামের একস্তর স্তম্ভকোষ মারা যাবে অহেতুক কেমিক্যাল টর্চারে।

রেফারেন্স:
[1] https://www.webmd.com/women/features/vagina-size#1
[2] Junqueira’s Basic Histology – Text and Atlas (13th Ed), Page 1031, 1034
[3] https://emedicine.medscape.com/article/1990236-overview
[4] Junqueira’s Basic Histology – Text and Atlas (13th Ed), Page 709-710
[5] Daling, J., Weiss, N., Hislop, T., Maden, C., Coates, R., Sherman, K., et al. (1987). Sexual practices, sexually transmitted diseases, and the incidence of anal cancer. The New England Journal of Medicine, 317(16): 973–7.
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব এইডস অর্গানাইজেশান এর সাইট (https://www.afao.org.au/article/gay-men-anal-cancer/#n17)
[6] https://www.cancer.org/cancer/anal-cancer/causes-risks-prevention/risk-factors.html
[7] ঐ আর্টিকেলেই আছে। বরাতঃ International Journal of Cancer এর দুইটি রিসার্চ পেপার।
(1) De Vuyst, H., Clifford G., Nascimento, M., Madeleine, M., Franceschi, S. (2009). Prevalence and type distribution of human papillomavirus in carcinoma and intraepithelial neoplasia of the vulva, vagina and anus: a meta-analysis. International Journal of Cancer, 124(7), 1626–36.
(2) Hoots, B., Palefsky, J., Pimenta, J., Smith, J. (2009). Human papillomavirus type distribution in anal cancer and anal intraepithelial lesions. International Journal of Cancer, 124(10), 2375–83.
[8] Journal of American Medical Association (JAMA) এর
[9] http://www.cancernetwork.com/gastrointestinal-cancer/anal-cancer-incidence-rising-homosexual-men
[10]http://www.captodayonline.com/Archives/pap_ngc/NGC_analrectalcyto.html
[11]https://emedicine.medscape.com/article/775407-overview#a6
[12]American Journal of Gastroenterology, published online January 12, 2016 এর বরাতে রয়টার্স https://www.reuters.com/article/us-health-analsex-incontinence-idUSKCN0VD2RH
[13] https://www.webmd.com/men/peyronies-disease#1
[14] https://www.urologyhealth.org/urologic-conditions/peyronies-disease
[15] https://nypost.com/2016/02/01/if-this-happens-to-you-youre-masturbating-too-much/
[16] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK424/
[17] https://www.sciencedaily.com/releases/2010/05/100525094900.htm
[18] Lentz, Gretchen M. (2012). Comprehensive Gynecology (6th ed.). Philadelphia, PA: Elsevier. pp. 532–533.
[19] https://www.sciencedaily.com/releases/2010/05/100525094900.htm

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড এইটি টু

Tue Oct 6 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার ডা. শুভদীপ চন্দ কেবল ক্রসফায়ার, মৃত্যুদণ্ড, দ্রুত গ্রেফতার, মোমবাতি প্রজ্বলন যথেষ্ট নয় ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য। প্রয়োজন হলিস্টিক এপ্রোচ। দরকারে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সে কমিটি সবকিছু নিয়ে সুপারিশ করবে যেন ভবিষ্যতে একটি ধর্ষণও না হয়। সে বৈবাহিক ধর্ষণ কিংবা আসুরিক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo