কোভিডে মৃত চিকিৎসকদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা আজও অনিশ্চিত

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার

করোনা সংক্রমণ রোধে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা, করোনা সন্দেহ হলে কোয়ারেন্টাইন আর সংক্রমিত হলে আইসোলেশন- এত সব নির্দেশনার মাঝেও প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনার সংক্রমণ। করোনার শুরু থেকে আজ অব্দি সম্মুখসারিতে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। করোনা সংক্রমণের আতংকে সবচেয়ে কাছের মানুষটিও যখন নিরাপদ দূরত্বে, তখন পাশে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসকেরা, হাল ধরেছেন ভংগুর স্বাস্থ্যসেবার। উপযুক্ত সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত ছিল না, সারা বিশ্বে চলমান ছিল সংকট। নকল সুরক্ষা সামগ্রীতে বাজার সয়লাব। অবশেষে করোনা আঘাত হানার কয়েক মাস পর সরকারিভাবে সরবরাহকৃত সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত হলো। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসা থেমে থাকেনি। সুরক্ষাহীন এ যেন এক অসম যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক।

ছবিঃ প্রতীকী

এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৮১৩৫ জন চিকিৎসক (সূত্রঃ প্রথম আলো), আক্রান্তের সংখ্যার সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ১২ এপ্রিল ২০২০, ডেন্টাল সার্জন ডা. ফেরদৌস রহমান করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রথম মারা যান। সেই থেকে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে মোট ১৫১ জনের নাম (প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটির তথ্যমতে)। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর মারা যান রাজশাহী জেলার বিশিষ্ট সনোলজিস্ট ডা. সাইদুল ইসলাম।

করোনাতে কোনো চিকিৎসক (সরকারিভাবে কর্মরত) আক্রান্ত হলে বা মৃত্যুবরণ করলে দেয়া হবে অনুদান- এমন একটি প্রজ্ঞাপন গত ২৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত অনুদান পেয়েছেন ১ জন (৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী)। চিকিৎসক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে প্রতিনিয়ত দিশেহারা হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে অনিশ্চয়তার মাঝেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন বেশ ক’জন বেসরকারিভাবে কর্মরত চিকিৎসক। শুরুতে সব হাসপাতালে সীমিত পরিসরে চিকিৎসা চালু রাখার চেষ্টা ছিল। কিন্তু প্রায় সব হাসপাতালে সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব, বেশ ক’জন চিকিৎসকের সংক্রমিত হওয়া, কোভিড- ১৯ চিকিৎসার অপ্রতুলতা ও কয়েকজন চিকিৎসকের মৃত্যুতে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়ে। সরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে সংক্রমণের শিকার ও মৃত বেসরকারি চিকিৎসকদের পরিবারের জন্য এখনো পর্যন্ত দেয়া হয়নি কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। এদিকে, করোনা সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকদের পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,

“করোনায় মারা গেলে সরকারি চাকুরের পরিবার পাবেন ২৫-৫০ লাখ টাকা। আক্রান্ত হলে পাবেন ৫-১০ লাখ টাকা। এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে কার্যকর ধরা হবে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ যে কেউ সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলে গ্রেড ভেদে এ টাকা পাবেন। যারা ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন তারাও এর অর্ন্তভুক্ত হবেন।”

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ‘করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় ক্ষতিপূরণ’ সংক্রান্ত বরাদ্দকৃত খাত থেকে দেওয়া হবে। অর্থবিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে। এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/ আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে দেওয়া হবে। আর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস পজিটিভের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণিক বা মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফর্মে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবে। আর মৃত্যুবরণ করলে নির্দিষ্ট ফর্মে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীর স্ত্রী/ স্বামী/ সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/ মা ক্ষতিপূরণের দাবি সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।

করোনার সম্মুখ যোদ্ধা তাঁরাই, যারা নির্ভয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সরকারি- বেসরকারি অনুদান ভেদে থেমে থাকেনি অকুতোভয় স্বাস্থ্যসেবায় কর্মরতরা। তবে কেন তাঁদের অবর্তমানে পরিবার পরিজনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে এত অনিশ্চয়তা তার সদুত্তর মিলছে না কোথাও। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ঘোষিত অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার কথা গণমাধ্যমে উঠে এলেও কবে নাগাদ তা হাতে পৌঁছাতে পারে, নিশ্চিত করে বলতে পারেননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ।

বিপন্ন পরিবারগুলো আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা পাবে, এটাই প্রত্যাশা।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মেডিস্পেল : সিজন-১ | কে হলেন সেরাদের সেরা?

Thu Dec 10 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার শব্দের সঠিক বানান এবং উচ্চারণ আমাদের ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন এবং শিক্ষাজীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষায় আসার পর থেকেই আমরা নানা রকম কঠিন শব্দের বানান নিয়ে বেশ হিমশিম খাই। সঠিক বানান জানা ও মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয় টিকে মাথায় রেখে প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo