চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে জলাবদ্ধতা, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ আগস্ট, ২০২০, রবিবার
প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে ভাসছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। গত ১৭ আগস্ট থেকে এই পানির কারণে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালটির স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

১৭ আগস্ট (সোমবার), বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচ তলা। ফলে নিচতলার বহির্বিভাগগুলো তিন তলায় সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই বহির্বিভাগের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়াও নিচতলার শিশু স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে ভর্তি থাকা রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ছবিঃ তিন তলায় বহির্বিভাগের কার্যক্রম

এরপর থেকে প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময়ে জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে হাসপাতালটির একটি ভবনের নিচ তলা। এই হাঁটুপানির কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এর মাঝেই তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়ার।

প্রতিদিন যানবাহনের অপ্রতুলতার সাথে বাড়ছে, যানবাহনের ভাড়া। যানবাহন না পাওয়ায়, রোগীকে বাড়ি নিতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান স্বজনরা। এই পানির কারণে একটা নির্দিষ্ট সময় হাসপাতালে আটকা পড়ছেন অনেকেই। এছাড়াও দূষিত পানির কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই এর মত পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবনতি, বর্জ্য পদার্থ, দূষিত পানি – হাসপাতালের পরিবেশ সেবাদানের অনুপযুক্ত করে তুলছে। বাড়ছে রোগী, রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চর্মরোগের ঝুঁকিও।

ছবিঃ পানিতে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের একাংশ (১৭ তারিখ)

ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল (আই পি সি) এমন একটি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা যা রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ইনফেকশন প্রতিরোধ নিশ্চিত করে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ক্ষতিকর। এটি প্রতিরোধ নিশ্চিত করে ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল (আই পি সি)৷

এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮ – এর উপধারা ৭(১) অনুযায়ী,
বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সেবা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে বা মানসম্মত না হলে, কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের আইন রয়েছে।

এই নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায়, যে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে দূষিত পানি থেকে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মোর্শেদ সি প্লাস টিভিকে (১৭ আগস্ট) এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“পানি প্রত্যেক বছর উঠে, জোয়ারের পানি। এটার জন্য আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হয়, তারপরও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এটার একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। এটার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও। কারণ চিহ্নিত করতে হবে। একবার মহেশখালে সুইস গেইট দেওয়ার কথা হলেও কতদূর কাজ হয়েছে আমরা জানি না। সিডিএ মহা পরিকল্পনা নিয়েছে শুনেছি, তবে এর কোন সুফল পাচ্ছি না। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তিনিই শেষ ভরসা। এই নিচু এলাকাগুলো পানি থেকে রক্ষার জন্য একটি মহা পরিকল্পনা দরকার।”

ছবিঃ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সামনের রাস্তার জলাবদ্ধতা

এই সমস্যাটি নতুন নয়। প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে, নোংরা বয়ে নিয়ে আসা জলের ছবি পত্রিকায় দেখা যায়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হলেও স্থায়ী কোন সমাধান পাওয়া যায় নি এখনও। হাসপাতাল ছাড়াও আশে পাশের এলাকায় জোয়ারের পানির কারণে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। হাসপাতালের রোগী, রোগীর স্বজন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায়, দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্ল্যাটফর্ম ডেস্ক রিপোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৩৪ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৯৭৩ জন

Sun Aug 23 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১,৯৭৩ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৪ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ৩,৫২৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২,৯৪,৫৯৮ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৩,৯৪১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ১,৮০,০৯১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo