দেশ-বিদেশ, ডাক্তারী ও কিছু কথা || পর্ব-৮

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ১১ আগষ্ট ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. সাদিয়া হোমায়রা সোহানা
এফ.সি.পি.এস. (পার্ট-১; গাইনী)
এম.আর.সি.ও.জি (পার্ট-১)
প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার, সুলতান কাবুস হাসপাতাল, সালালাহ, ওমান।

ওমানে ফিরে এলাম মেয়েকে নিয়ে, এবার শুরু হলো একলা চলা। তবে বেশিদিন না, মাত্র দুই মাস। তবে ওই সময় আশেপাশের বন্ধু, ভাই, ভাবিদের সাহায্য ছাড়া মনে হয় না কাটাতে পারতাম। অনকলের দিনগুলোতে মেয়ে থাকতো আমার এক ভাবির সাথে। অন্যদিন মেয়েকে সকাল বেলা স্কুলের পর কিছুক্ষণ রাখতাম একটা হোম ডে কেয়ারে। একজন কেরালার ভদ্রমহিলা বেশ কয়েকটি বাচ্চাকে দেখাশোনা করত। আমার মেয়ে যে স্কুলে পড়ত, তাতে বেশিরভাগ বাচ্চা ওমানি বা আরবি ভাষী। তাই কিছু কিছু আরবি সে ভালই রপ্ত করেছিলো। ডে কেয়ারে যাওয়ার পর দেখি সে দু একটা মালায়ালাম (কেরালার ভাষা) শব্দ বলা শুরু করেছে।

আমার পরিস্থিতি যাই হোক, হাসপাতালের কিন্তু কোন হিলদোল নাই। বরং ছুটি কাটিয়ে আসার পর ডিউটি সংখ্যা আরো বাড়ে। আমার তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

এরমধ্যে আমার হাজব্যান্ড ফিরে আসে। তারপরও আমার বাবা মাকে নিয়ে আসার চিন্তা করি অন্তত কিছুদিনের জন্য। ভিসার জন্য বারবার প্রশাসনিক অফিসে ধর্ণা দিতে হয়। এখানকার অফিসগুলোতে গেলে কাজের ধীরগতির জন্য নিজেরই অস্থির লাগে। এটা ভাববেন না যে, তারা ফুলুস (টাকা) নেয়ার পায়তারা করছে, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। চা-পানির টাকা তাদের চাওয়া নয়, বরং তাদের প্রিয় শাহী সুলেমানী (রং চা) ও সিগারেটের বিরতির সময় যদি যান, কম্ম সারা। কি প্রয়োজনে এসেছেন তা বলতেই সময় লেগে যাবে। তবে প্রত্যেকটিবার আপনাকে আশ্বস্ত করবেন এই বলে যে “ইনশাআল্লাহ” আভিধানিক অর্থ যাই হোক, এর বাস্তব মানে হচ্ছে উনি নিজেও জানেন না কবে আপনার কাজ হবে। আবার আপনি যখন আর অপেক্ষা করাই ছেড়ে দিবেন, দেখবেন একদিন আপনার কাজ হয়ে গেছে।

সার্বিকভাবে ওদের আমার ভালো মানুষ মনে হয়, যদিও বা একটু অলস প্রকৃতির। আসলে সব সুযোগ সুবিধা, চিকিৎসা, জমি সব সরকারের কাছ থেকে পাওয়া গেলে কে না একটু আয়েশী জীবন চাইবে। তবে উচ্চশিক্ষিতদের ব্যবহার ও কাজের ধরণ ভিন্ন।

এরমধ্যে হাসপাতালে একদিন শোনা গেলো, বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে কোথাও। সব ডিপার্টমেন্ট থেকে ইমার্জেন্সি দায়িত্বরত সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা হল জরুরী বিভাগে। রোগী আসা শুরু হবে আনুমানিক আধা ঘন্টা পরে।ওটি, ল্যাব, ব্লাডব্যাংক, আই সি ইউ এ সতর্ক করা হলো। ডাক্তার, নার্স, অর্ডারলি সবাই একবার ড্রিল করলো কিসের পর কি করবে তার। গাইনী অবসের ডাক্তার ডাকা হয়েছে যদি কোন প্রসূতি রোগী থাকে সে সন্দেহে। শুধু বড় দুর্ঘটনা নয়, লেবার রুমেও কিছুদিন পর পর পর্যায়ক্রমে সব ডাক্তার/ মিডওয়াইফ/নার্সদের ড্রিল হয় বিভিন্ন অবস ইমার্জেন্সি গুলোর ম্যানেজমেন্টের ধাপগুলো। সব ডাক্তারকে পাঠানো হয় বেসিক লাইফ সাপোর্ট ট্রেনিয়েও। যার কারণে সত্যি যখন জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয় টীমের কাজের সমন্বয় করতে অনেক সুবিধা হয়, ডাক্তার-নার্স জানে কার অবস্থান কোথায়।

ভিসা হওয়ার কিছুদিন পর আমার বাবা মা আসলেন বেড়াতে। এখানকার সাবলীল জীবন তাদেরকেও মুগ্ধ করে। এই সুযোগে আমিও একটা পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নেই, সাথে আমার বন্ধু কলীগ। পরীক্ষা দিতে যেতে হবে পাশের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। পরীক্ষার দু’দিন আগে ফ্লাইট, পরিবারের কাউকে ছাড়া সেই প্রথম কোথাও যাওয়া। ট্যাক্সি দিয়ে যেতে যেতে অবাক চোখে দুবাই শহর দেখলাম। পরীক্ষা শেষে আমাদের হাজব্যান্ড এবং বাচ্চারাও আসে, সবাই একসাথে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরি। দুবাই শহরের পুরোটাই কৃত্তিমতায় ভরপুর। উচু দালান, পৃথিবী বিখ্যাত মল, আস্ত একটা দ্বীপও তারা বানিয়ে ফেলেছে পাম গাছের আকৃতিতে।

নিজের দুর্বলতাকে কিভাবে শক্তিতে পরিণত করতে হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দুবাই। শুনেছি এই শহরের তেলের মজুদ সবচেয়ে কম হওয়ায় তারা শুরুতেই মন দেয় পর্যটনে, তৈরি করে পৃথিবী বিখ্যাত স্থাপনা। আজকের দুনিয়ায় কেনাকাটা আর ভ্রমণের জন্য অনেকেরই গন্তব্য দুবাই, ৯০ সালে যার এ রূপের কোন অস্তিত্বই ছিলোনা।

সালালাহ তে ফিরে আসার পর আবার সেই হাসপাতাল, ডিউটি, ঘোরাঘুরি, দাওয়াত। রোজার মাসে আবার দাওয়াত ইফতার, ডিনার থেকে সেহরি অব্দি গড়াত। কোরবানির ঈদের সময় সবাই মিলে গরু কোরবানির পাশাপাশি বাগানবাড়িতে একসাথে মজা করে খাওয়া দাওয়া হত। জীবন চলতে লাগলো গতানুগতিক ধারায়।

এরমধ্যে ছন্দপতন। শুনতে পেলাম আবহাওয়া রিপোর্ট, ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড়।

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৩৩ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ২৯৯৬ জন

Tue Aug 11 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২,৯৯৬ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৩ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ১,৫৩৫ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২,৬৩,৫০৩ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৩,৪৭১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ১,৫১,৯৭২ জন। দুপুর ০২.৩০ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo