দু:খু মিয়ার গল্প-১৯

ডা: হতে যাচ্ছি ভেবে নিজেকে আজ বড় না অনেক ছোট লাগছে।নিজেকে অসহায় লাগছে,কেমন জানি ঘৃণা মিশ্রিত একটা অনুভুতি।

লোকটা মুক্তিযোদ্ধা। কদিন যাবত লোকটা আমার মাথা শেষ করে দিচ্ছে,হাজার বার ফোন।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে একটা ধমক মারি।কিন্তু সেই ধৃষ্টতা আমার হয়ে উঠে নি।হাজার হোক একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ।

ছেলে অসুস্থ।Stricture urethra & bilateral Hydro ureter,hydronephrisis with Bilateral parenchynal disease.আমার কাছে উদ্দশ্য কিছু সাহায্য পাওয়া।ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগানোর জন্য মানুষের কাছে কাছে গিয়ে সাহায্য চাচ্ছে।
আজ আসতে বলেছিলাম,সকাল ৮:৩০ এ।উদ্দেশ্য ভিবিন্ন ক্লাসে গিয়ে বলে দিয়ে আসা ওনার কথা।কলেজ বিল্ডিং এর লিফটে ওঠার আগে আমি ফোন দিয়ে জানলাম চলে এসেছে।বল্লাম,”চাচা আপনি চলে আসেন ৬ তলায়।আমি আছি।আমি উঠলাম।গিয়ে দেখি আজ জুনিয়র ব্যাচের ক্লাস নেই।ততক্ষনে চলে এসেছেন উনি উপরে।সেই লিফটেই আমরা নিচে নামলাম।বল্লাম,” চলেন দেখি কি করা যায়।”গ্রাউন্ড ফ্লোরে যখন লিফটের দরজা খুলছিল তখন একজন ডা: কে বলতে শুনলাম-‪#‎এই_সকাল_বেলা_ফকির_মিসকিন_গুলো_যে_কই_থেকে_এসে_লিফটে_উঠে‬…………
বিশ্বাস করেন,ইচ্ছা করছিল আমি মরে যাই।লজ্জায়,তার দিকে আমি তাকাতে পারছিলাম না।কিছু না বলেই কমন রুমের কোনায় গিয়ে বসলাম,তাকেও বসালাম।

চাচা কাগজপত্র আনতে বলছিলাম নাহ??,দেখি বের করেন।

বের করে দিল অনেক অনেক কাগজ।ওখানে বসে ওনেকেই খাচ্ছিল।তাই বল্লাম,নাস্তা করেছেন?
-করছি বাবা।একটা বিস্কুট খাইছি।
.এখানে পরটা আছে খান?
না করলো।কিন্তু,তারপরও কমন রুমের আপুকে ডেকে নাস্তা দিতে বল্লাম ওনাকে।

অত্যন্ত ক্ষুধার্ত মানুষের খাওয়া দেখতে অন্যরকম অনুভূতি।আমি দেখছি,তার খাওয়া।খেয়াল করললাম মানুষটাকে এখন ভালোকরে।কোন কথা বলছে না।সাদা শার্ট,শার্টের কোনায় মুক্তিযোদ্ধারর ব্যাচ,সাদা দাড়ি,গোল চশমা,ছেঁড়া, জরাজীর্ণ জুতা।লোকটি এমন ভাবে খাচ্ছিল যেন,তার খাবার কেউ কেড়ে নিবে।একটা নাগাড়ে খেয়েই যাচ্ছে।কোন কথা বলছিল না।পানি বের করে এগিয়ে দিলাম সামনে।তাকিয়ে দেখছিলাম আড় চোখে।আর তার সাথে আনা কাগজগুলো দেখছিলাম…..।

বাড়ি কই,চাচা?
-মীরপুর থানা,কুষ্টিয়া।
কোথায় যুদ্ধ করেছিলেন?
-৮ নম্বর সেক্টর বাবা।অধিনায়ক-ক্যাপটেন মঞ্জুর এর অধীনে।
বিয়ে করছিলেন?যেতে দিল বাড়ি থেকে।
-নাহ(হাসি),যেতে দেয় নি প্রথমে।চুরি করে গেছিলাম।
কেন গিয়েছিলেন?
-দেশের টানে,বাবা।
দেশ কি দিল চাচা?
-ওটা আপনারাই বিচার করেন বাবা।
তারপর কি জানি ভেবে বললো,দেশ দিল সন্মান।

আমি এবার হেসে দিলাম।সত্যি?এবার একটা কথা না বলেই পারলাম না।
.সন্মান???এই যে আপনাকে ফকির-মিসকিন বললো?!এটার নাম,সন্মান??

এবার কোন উত্তর দিল না।শূন্য দৃসটিতে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।খেয়াল করলাম চোখ দুটো ভিজে উঠলো।টুপ,টুপ করে চোখের পানি পড়া শুরু করলো যেভাবে বৃষটির পড়া শুরু করে।
টিশ্যু এগিয়ে দিয়ে বল্লাম,আমার উপর কষ্ট নিয়েন না।আমার জন্য অনেক অপমানিত হলেন।
আমার হাত ধরে বললো,”এ কিছু না বাবা।আমার লজ্জা,মান কিছুই নাই এখন।এর চাইতে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে।ফ্লোর দেখিয়ে বললেন,”আমার সন্মান এখন এটার সাথে মিশে গেছে।”

ওয়ার্ডের দেরি হয়ে যাচ্ছে।মানুষটিকে নিয়ে হাটা শুরু করলাম।জানে না এখন তিনি কই যাবেন,কি করবেন।শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।সাথে বুকে ব্যাথা।তাকে নাকি বসতে হবে।বসলে ব্যাথা কমে।

ব্যথা যায় কিভাবে?
জিহ্বার নিচে ওষুধ দিতে হয়।
কই ওষধ?
নাই বাবা।টাকা নাই ওষধ কেনার।
বুঝলাম GTN।কিছু বল্লাম না।তাকিয়ে থাকলাম।পরে যোগাযোগ করবো বলে বের হয়ে আসলাম।পিছনে ফিরে একবার তাকালাম।বসে আছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।একহাতে বুক চেপে ধরা অন্য হাত হাটুর মাঝে।
মনেমনে ভাবলাম,এই ব্যাথা সাধারন ব্যাথা না।বুকে হাত চেপে কোন লাভ নেই,বাবা।
…….

‪#‎পরিশেষ‬: এরকম মানুষের অভাব নেই দেশে।যাদের জন্য স্বাধীনতা এসেছে তাদের অস্তিত্ত্ব প্রায় শেষের পথে।অধিকাংশরাই অবহেলায়,না খেয়ে,কষ্টে হারিয়ে যাচ্ছে।অথচ,আমরা কুলাংগার জাতীরা একবারও ভাবছি না,এই মানুষগুলো না থাকলে এর পরিনাম কি হতো!!!
ওনার ফোন নাম্বার,০১৯৪৫৭২৮৩৫৫।

সবার সাহায্য কামনা করছি।
প্লিজ সবাই একটু এগিয়ে আসুন।পুরোপুরি না পারি,অন্তত্য অল্প কিছু দিনের জন্যেও তো পারি সবাই মিলে অল্প কিছু টাকা(যে যা পারি) দিয়ে মানুষটার দু:খ কমাতে।

আমি জানি,একটু চাইলেই পারি।সেই জন্য থাকা দরকার সেই ধরনের একটা মন,মনভাব।মানুষের কষ্ট বুঝার ক্ষমতা।আর কিছু না।

‪#‎এডিটেড‬ : অনেকেই B-kash নাম্বার চেয়েছেন।তাই দিলাম।ওনার নাই।
আমার- ০১৯১১৫৬৬৮৬৪ (personal)

প্ল্যাটফর্ম ওয়েব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শোক সংবাদঃ ডাঃ নুরুজ্জামান খোকন সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত

Sat Apr 11 , 2015
¤শোক সংবাদ¤ গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে দশটায় আমাদের প্রিয় সহকর্মী,অগ্রজ,অভিভাবক ডাঃ নুরুজ্জামান খোকন ভাই নারায়নগন্জের আড়াইহাজারে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থোপেডিক কন্সালটেন্ট হিসেবে উনি কর্মরত ছিলেন,স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ১৫তম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন ভাইয়া। র্ঘটনায় তার বোনও মারা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo