চিকিৎসক অনুপস্থিতির অবাস্তব উপসংহার ও বাস্তব সমীকরণ

সরকারি ডাক্তারদের অনুপস্থিতি যেমন আছে, অতি উপস্থিতিও আছে! অতি-উপস্থিতির ব্যাপারটা কি আমি বলি। একটা মানুষের আসলে ২৪ ঘন্টার মাঝে কাজের সময় কতটুকু? আন্দাজে অনেকে অনেক কিছু বলবেন কিন্তু কর্মঘন্টার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে৷ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার বেশি কাজ করা শ্রম আইন বিরোধী আবার ডাক্তারদের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ৩৫-৪৮ ঘন্টা সপ্তাহে কাজ করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। শুধু তাই নয়, ডাক্তারদের কাজ রোটেশন ভিত্তিক হওয়ায় কেউ যদি একটানা ডিউটি করে (১৩ ঘন্টা, ২৪ ঘন্টা, ৪৮ ঘন্টা, ৭২ ঘন্টা ইত্যাদি) সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৪৬-৪৮ ঘন্টা পূর্ণাংগ ডিউটি ফ্রি থাকাটা বাধ্যতামূলক, অন্যথায় জরিমানার বিধান আছে অনেক দেশেই (goo.gl/sydA2N)

বাংলাদেশের কথা বলি, আমার কথাই বলি। ২০১৫ সালে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করতাম আবার সপ্তাহে ২ দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরই একটি প্রকল্পে কাজ করতাম “জনস্বার্থে”! টাইম ম্যানেজ করতে উপজেলায় শনি/রবি থেকে সোম/মংগল টানা ৪৮/৭২ (এমনকি ৯৬ ও) ঘন্টা ডিউটি করতাম। এরপর ৫ ঘন্টা জার্নি করে ঢাকা পৌছে পরের দুদিন ৮+৮ ষোল ঘন্টা ডিউটি করতাম। তাতে সপ্তাহে গড়ে আমার ডিউটি সময় হলো ৬৪-৯৬ ঘন্টা৷ যদি সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা আমার অফিস আওয়ার ধরি যা অধিকাংশ অন্যান্য সরকারি চাকুরেদের জন্য সত্য তাহলে আমি প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ২৪-৫৬ ঘন্টা ডিউটি করেছি। আমার এই উপস্থিতি কে গুনবে? যে ২-৩দিন আমি উপজেলায় থাকতাম না সে ২-৩ দিন যদি কেউ ইনস্পেকশনে যেয়ে আমাকে না পেত, আমি যত ডিউটিই করিনা কেন আমাকে অনুপস্থিত দেখাতো।

আজ দুদকের একটি অভিযানের খবর এসেছে সারা দেশে ৪০% ডাক্তার নাকি অনুপস্থিত। অনুপস্থিত কথাটি সত্য, তবে সেটা কি রোস্টার ডিউটির ন্যায্য পাওয়া হিসেবে নাকি ফাকিবাজি হিসেবে সেটা আমলে নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। টেকনিক্যাল একটি বিষয়ের ইনস্পেকশন সে বিষয়ের টেকনিক্যাল লোক ছাড়া হতে পারেনা কোনভাবেই। সারা পৃথিবীতে ফিজিশিয়ান বার্নআউট তথা ডাক্তারদের অতিরিক্ত ডিউটির কারনে শারিরীক ও মানসিক ক্ষতির পরিমান নিয়ে খুব কড়াকড়ি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে কেননা ডাক্তারের শারিরীক ও মানসিক সুস্থতা রোগীর জন্য জরুরী। তাহলে আমরা কেন আমাদের দেশে ডাক্তারদের কর্মঘন্টা জনিত সুস্থতা অসুস্থতা ও বিশেষ ছুটির কথা ভাববো না? যারা বলেন সরকারি চাকুরিতে কর্মঘন্টা নাই, ২৪ ঘন্টাই ডিউটি তাদের বলবো সরকারি চাকরি আর সরকারি ডাক্তারি এক কথা না। এর টেকনিক্যাল জটিলতা যদি না বোঝেন তো এখানে পারদর্শী চিকিতসক রোবট নিয়োগ দেন, মানুষ এ কাজের উপযুক্ত না।

ফাকিবাজির অনুপস্থিতি যে একেবারেই নেই তা নয়, বিশেষ করে নন ক্লিনিক্যাল পদে, পেরিফেরির প্রতিষ্ঠানে বেশি দেখা যায়, তাদের জন্য উপযুক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা হোক। পেশাটাকে মানুষের পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হোক এটাই চাওয়া।

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

দ্রুত আরও ১০ হাজার ডাক্তার নেয়া হবেঃ একাত্তর জার্নালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান

Tue Jan 22 , 2019
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ডেস্কঃ ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমেই আরও দশ হাজার ডাক্তার নেয়া হবে, এমনই ইঙ্গিত দিলেন মাননীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত একাত্তর জার্নালে টেলিভিডিওর মাধ্যমে আলোচনার এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, খুব দ্রুত আরও ১০ হাজার ডাক্তার নেয়া হবে৷ স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সরকারের উন্নতি […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo