শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবু বিজরিস মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

১৫ই নভেম্বর ১৯৭১ সকাল ছিলো ডা. হুমায়ুন কবীরের ইন্টার্ন হিসেবে যোগদানের দিন। শহরজুড়ে তখন কারফিউ চলছে। এলাকায় আল-বদর, আল-শামসের অনেক উৎপাত।

পরিবারের সকলেই ডা. হুমায়ুনকে মানা করেছিলেন যেতে। তাদের বাসারই নিচ তলায় থাকতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন ডা. আজহারুল হক। ডা. আজহারকে নিতে অ্যাম্বুলেন্স আসবে শুনে ডা. হুমায়ুন ঠিক করলেন তার সাথেই যাবেন। তার ছোটবোন সিঁড়ি পর্যন্ত নেমে এসেছিলেন তাকে ফেরানোর জন্য। কিন্তু তাকে ফেরানো যায় নি। তিনি গেটের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। তারা বুঝতেও পারেন নি যে তাদের জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স হাতিরপুল থেকেই বদর বাহিনী ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। গেটের সামনে থেকেই আল-বদরের কয়েকজন সদস্য তাদের তুলে নিয়ে গেলো। পরদিন সকালে খবর পাওয়া গেলো নটরডেম কলেজের পাশের কালভার্টের নিচে ড্রেনে দুইজনের চোখ-হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া গিয়েছে। আত্মীয়স্বজনেরা তাদের ডা. হুমায়ুন ও ডা. আজহার হিসেবে শনাক্ত করেন।

আল-বদরেরা দুইজন চিকিৎসককে হত্যা করতে বুলেট খরচ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে নি, পিটিয়েই মেরে ফেলে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, ১৯৬৪ সালে নটরডেম কলেজ থেকেই ডা. হুমায়ুন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তার লাশ পাওয়া যায় সেই নটরডেম কলেজের পাশেই এক ড্রেনের মধ্যে।

তাকে দাফন করা হয় সেইদিনই সন্ধ্যায়, আজিমপুর গোরস্থানে। পরে খবর পাওয়া গিয়েছিল,তাকে বদর বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজেরই ক্লিনিকাল প্যাথোলজিস্ট ডা. এহসানুল করিম। তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে জড়িত ছিলেন। সহকর্মী হিসেবে যাকে বিশ্বাস করেছিলেন, বিশ্বাসঘাতকতা আসলো তার কাছ থেকেই।

ডা. হুমায়ুন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-২৫ ব্যাচের ছাত্র। খুব সংস্কৃতিমনা ছিলেন। খুব ভালো তবলা, গিটার ও ব্যাঞ্জো বাজাতেন। স্কুলজীবনে স্কাউটিং করেছেন। নাট্যাভিনয়েও ছিলেন পারদর্শী। থার্ড ইয়ার থেকেই উনি নিজ গ্রামে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতেন। নিজের স্কলারশিপের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দিতেন। ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় ছাত্র সমাজে পরিচিত হয়ে উঠেন। তখন থেকেই তিনি পাক বাহিনীর নজরদারীতে থাকেন।

২৫ মার্চ রাতে তিনি হোস্টেলে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে তার পরিবারের সাথে তার দেশের বাড়ি শরীয়তপুর চলে যান। সেখানে তার বড় বোনের মেয়ে জন্ম নেয়। ভাগনীর জন্য তিনি সেই যুদ্ধের সময়েও বাজার থেকে সোনার চেন কিনে আনেন। ভাগনীর যখন দুই মাস বয়স তখন মেয়েটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তিনি চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে আসেন। সেখানে বিহারিদের বিরোধিতা ও অকথ্য গালাগালি সহ্য করে তিনি ভাগনীর চিকিৎসা চালান। কিন্তু তিনি মেয়েটাকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি এরপর ঢাকায় তার বাসায় বসে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন, তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন। তার উপর যাতে সন্দেহ না পড়ে এই জন্য তিনি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেন ও প্লেস করেন। কিন্ত দেশের মানুষের সেবা করার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা আর পূরণ করে যেতে পারেননি। স্বাধীনতার মাত্র একমাস আগে তাঁকে হত্যা করে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসর আল-বদর বাহিনী।

তথ্যসূত্রঃ Humans Of DMC
স্টাফ রিপোর্টার/নাজমুন নাহার মীম

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মিথ্যা বললে প্রসারিত হয় চোখের পিউপিল বা মণিরন্ধ্র

Sun Dec 15 , 2019
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ সাহিত্য ও শিল্পের দুনিয়ায় প্রচলিত তত্ত্ব হল, মানুষের চোখ নাকি তার মনের ভাষা প্রকাশ করে। চোখ মনের ভাষা কতখানি প্রকাশ করে এ নিয়ে দ্বিধা থাকলেও, মানুষের মিথ্যা যে চোখের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়, তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। মানুষ তাদের চোখের মনিরন্ধ্র বা পিউপিলের আকার নিয়ন্ত্রণ করতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo