লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড নাইনটি ফাইভ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ অক্টোবর ২০২০, সোমবার

ডা. শুভদীপ চন্দ

জ্বর আছে? কাশি? শ্বাসকষ্ট? ভদ্রলোকের ‘নেই’ বলতে কষ্ট হচ্ছিলো। উনি এমনভাবে কিছু বলছিলেন যার অর্থ হয় ‘আছে বলতে পারছি না বলে- নেই’। উনি চান না উনার অসুখ হারিয়ে যাক। স্বজনদের সাথে যুদ্ধ করার শেষ অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে যাক। আসলে একটা সময় পর সবকিছুই হারিয়ে যায়। প্রতাপ, অর্থ, প্রভাব। শুধু শরীরটাই থাকে যুদ্ধ করার জন্য। যুধিষ্ঠিরের মতো পাশার দানে তোলা। যুধিষ্ঠির যখন শকুনির সাথে পাশা খেলায় হারছেন প্রথমে ধর্ম হারালেন, তারপর রাজ্য, অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, সম্মান, পাঁচ ভাই, বউ; সবার শেষে নিজেকে।

ছবিঃ প্রতীকি

এ কর্মক্ষম মানুষগুলোর গায়ে দ্রুত ‘বয়স্ক’ তকমা লাগছে। রাষ্ট্র নির্ধারণ করে দিচ্ছে আটান্ন, ঊনষাট, ষাট বছর অবসরের বয়স। একজন মানুষ প্রথম আবিস্কার করেন তিনি আর দশজনের মতো, এগারো জনের দলে তিনি নেই, বাসার ঠিকানায় চিঠি না লিখলে চিঠি আসে না, এক দিন সমান চব্বিশটি ঘন্টা। একটু বাড়তি এটেনশন, বাড়তি কেয়ার তার নেয়ার সাধ হয়। ততদিনে সবই খুয়েছেন ইচ্ছেটুকু ছাড়া। আর আছে শরীর। এ শরীর কেন বেয়ারা রকমের ভাল, সে শরীর কেন একটু চোখে লাগার মতো খারাপ হয় না- এ দুঃখে ঘুম আসে না! বসে বসে ডিউটি করি। পূজা আসছে। অনেকদিন আমাদের ডিউটি দেওয়া হয়নি। তাই একটু ডিউটির চাপ বেড়েছিল। উপজেলায় ইমার্জেন্সি ছাড়া আর কোনো ডিউটি ‘ডিউটি’ না। ইমার্জেন্সি এক বিকট জায়গা। বিচিত্র সব রোগী আসে। বিচিত্র যেমন রোগ, বিচিত্র তাদের মন মানসিকতা। মরে যাবে তবুও স্টোমাক ওয়াশ দিতে দিবে না! বসে বসে মানুষ দেখি। আরো আসে ড্যাডিস গার্ল। বাবাকে আদর্শ ধরে তারা বড় হয়। বাবা তাদের ছোটবেলার সবকিছু জুড়ে থাকে। বাবার ব্যক্তিত্ব, বাবার কর্তৃত্ব, বাবার জ্ঞান তারা মনোযোগী ছাত্রীর চোখে দেখে। ‘বাবা’ অঙ্কিত এক এক ইট গেঁথে তাদের চরিত্র গড়ে তোলে। তারপর যখন দুই ধাতুতে বিরোধ বাধে তারা মায়ের পক্ষাবলম্বন করে। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বাপ কিভাবে মাকে বঞ্চিত করেছে সারাজীবন- তারা নিপুণ বিশ্লেষণ করে। বাবার বিরোধিতা করতে করতে তারা এক সময় সম্পূর্ণ পুরুষ জাতির বিরোধিতায় নামে। এদের নিয়ে হয়েছে বিপদ। শরতের আকাশের মতো মন। নীল আকাশ, ছিটেফোঁটা মেঘ নেই। কিন্তু যখন হঠাৎ বৃষ্টি নামে অভিমানের বৃষ্টি। ঝরঝর করে পড়ে, পরিমাণ বোঝে না। সাধারণত প্রিন্সের জন্য প্রিন্সেস কিং-কে কুপোকাত করে। মেয়েরা খুব অদ্ভুত। তারা যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাকে কষ্ট দিয়েই নিজে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। একে কৃচ্ছ্রতা সাধন ভাবে। সমালোচনা করি না, বিদ্রুপও করি না। কারো জন্য নিজেকে কষ্ট দেয়া সহজকর্ম নয়। তারচেয়ে বড় কথা- যে ক্ষতের কষ্ট আমি অনুভব করছি না তাকে হেয় করা আমায় সাজে না। দিনের শেষ বাসটি হয় অন্যরকম। কিছুটা খোশমেজাজ আর কিছুটা নীরবতায় চলে। ড্রাইভার ঘাটেঘাটে থামার কথা ভাবে না। অন্ধকার চিড়ে জোরে চালায়। কন্ট্রাক্টর ক্লান্ত শরীরে যাত্রীদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করে। যাত্রীরাও ক্লান্ত। কেউ হেডলাইটে রাস্তার পানে চেয়ে থাকে, কেউ গান শোনে, কেউ বসে বসে ঢুলে। রাস্তা থেকে এক দুইজন উঠে তারা দৌড়ে বাসের পেছনে যায়। তাদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি। বাড়ি ফেরার আনন্দ। কাল যতই কাজ থাকুক, আজকের জন্য তো শেষ।

ভালোবাসায় ‘ঈর্ষা’ বলতে আমি এক পাশের অন্যায় অপছন্দগুলো বুঝিয়েছিলাম। কারো সাথে আড্ডা দেয়া, কথা বলা, ঘুরতে যাওয়াকে সে অপছন্দ করে। সে ঈর্ষান্বিত হয়। এটি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। ‘ঈর্ষা’ মানেই খারাপ নয়, অন্তত প্রেমের ক্ষেত্রে তো নয়ই। ফেসবুকে বিতর্কগুলো অহেতুক। হারজিত নেই। দিনশেষে যে যার বক্তব্য নিয়ে লগ আউটে যায়। যে যার অবস্থান থেকে সবকিছু দেখে। এক পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছিলেন ‘উই ডোন্ট সি থিংস এজ দে আর, উই সি থিংস এজ উই আর’।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড নাইনটি সিক্স

Mon Oct 26 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ অক্টোবর ২০২০, সোমবার  ডা. শুভদীপ চন্দ আজ এক ইকো করতে বসলাম অনেক চেষ্টা করেও ভাল ভিউ আনতে পারলাম না। এতো রাগ হচ্ছিলো যে ইচ্ছে করছিলো সামনে থাকা মেশিনটাকে ভেঙ্গে দেই! ভালো লাগে না। প্রত্যাশা ও সংসারের অসামঞ্জস্যতা আমার বিষের মতো লাগে। নিজেকে লাগে কেমন যেন বনসাইয়ের মতো- […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo