মরণঘাতী করোনা ভাইরাস পেরিয়ে চলল এক বছর

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

২০১৯ সাল, নভেম্বরের ১৭ তারিখ। তখনও পৃথিবী জানতো না কি করাল গ্রাস অপেক্ষা করছে সুস্থ পৃথিবীকে অসুস্থ করে দেয়ার জন্য। পৃথিবী ছুটে চলছিল তার নিজস্ব গতিতে, হঠাৎ ই কেমন যেন থমকে গেল সব। সুদূর চিনের হুবেই প্রদেশে শুনতে পাওয়া গেল কি যেন এক ভাইরাসের আগমন ঘটেছে। অন্য দেশগুলো তখনো জানতো না যে এই ক্ষুদ্র ভাইরাসটি শুধু এই দূর প্রদেশেই আটকে থাকবে না। সেই মরণঘাতী করোনা ভাইরাস আজ পার করলো এক বছর।

২০২০ এ কোভিড-১৯ এর বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত বিস্তার ঘটে। তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় সমস্যা নিয়ে সৃষ্ট হওয়া করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) দীর্ঘ এক বছরে অসংখ্যবার নিজের রূপ বদলের পাশাপাশি বদলিয়েছে রোগের লক্ষণকেও। ২০২০ সালের ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে একটি বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

চীনের হুবেইতে ১৭ নভেম্বর ২০১৯ সালে এক বর্ষীয়ান দম্পতি হাসপাতালে ভর্তি হন অদ্ভুত ধরনের এক নিউমোনিয়া নিয়ে। চিকিৎসকরা কিছুতেই পরীক্ষা নীরিক্ষা করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারছিলেন না। এরপর ২০০৩ সালের সার্সের লক্ষণ কিছুটা উঠে আসতে থাকে রোগীদের শরীর থেকে। এরপরই চীন জুড়ে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে পর পর একাধিক রোগীর দেহে নতুন এই ভাইরাসের চিহ্ন মিলতে থাকে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে বলা হয়, হুবেইর একটি সামুদ্রিক খাদ্য থেকে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। উহান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল বিষয়টিকে হাতে নেয়। এরপর উহানেও এমনই ঘটনার কথা জানা যায়। রোগীদের নিউমোনিয়া ধরে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেও হাল ছাড়তে থাকেন একের পর এক চিকিৎসক। করোনা ছড়িয়ে যেতে থাকে চীনের মানুষের মাঝে।

বর্তমানে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে ২১৩ টিরও বেশি দেশে। বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ কোটি পেরিয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ লাখ ২৮ হাজারের ঘরে। কোনো কোনো দেশে দ্বিতীয় এবং কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ এর আগমন ঘটেছে এরই মধ্যে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, যা কিনা গত ২৬ অক্টোবর ৪ লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। আজ ১৭ নভেম্বর ২০২০ বাংলাদেশ নতুন ২ হাজার ২১২ জনকে নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৪ জন হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫৪ জন। সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ জন হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটির দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৩৬ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয় কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হয়ে।

এদিকে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩২তম অবস্থানে।

একটি বছর প্রাণঘাতী এই ভাইরাস কেড়ে নিলেও এখনো আশা ছাড়েনি মানবপ্রাণ। বিবিসির তথ্যসূত্র মতে, শীঘ্রই ৯৫% কার্যকর ভ্যাক্সিন বাজারে আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। ভ্যাক্সিন আসার আগ পর্যন্ত তাই নিজেদের সচেতনতা ও মাস্ক ব্যবহার ছাড়া বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

চট্টগ্রামে প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল

Tue Nov 17 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ই নভেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার লেখাঃ কানাডা প্রবাসী চট্টগ্রামের সন্তান ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ক্যান্সার ডিপার্টমেন্ট ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি, কানাডা বর্তমানে চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। শুধুমাত্র একটি কোবাল্ট মেশিন দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ ন্যূনতম সেবা দিচ্ছে। পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি চট্টগ্রামে একশ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo