বিসিএস নিয়ে যা যা জানা প্রয়োজন

যারা প্রথমবার বিসিএস দিবেন তাদের জন্যঃ

১.বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা।সার্কুলার থেকে প্রিলি,রিটেন,ভাইভা,নিয়োগ পর্যন্ত ২.৫-৩ বছর সময় লাগে।এই দীর্ঘ সময়ে অনেক টেনশন, হতাশা আসবে,কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে।
২.বিসিএস এর অনেকগুলা ধাপঃপ্রিলি,রিটেন,ভাইভা,স্বাস্থ্য পরীক্ষা,ভেরিফিকেশন(পুলিশ,এনএসাই,ইউএনও,স্পেশাল ব্রাঞ্চ), গেজেট,পোস্টিং।

ফরম পূরণঃ
১.টেকনিক্যাল ক্যাডার ও বোথ ক্যাডার।যারা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ক্যাডার দিবেন,তাদের চয়েস একটাইঃবিসিএস(স্বাস্থ্য),রসায়ন, গণিত ইত্যাদি।আর যারা বোথ ক্যাডার দিবেন তারা প্রথমে প্রশাসন,ফরেইন,পুলিশ,ট্যাক্স ইত্যাদি দিবেন,এরপর স্বাস্থ্য/নিজের সাবজেক্ট।
২.ফরম পূরনের সময় স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই দিলে ভাল।না হয় দুই জায়গায় ভেরিফিকেশন হবে।তবে স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি বা জমি থাকতে হবে।স্থায়ী ঠিকানা পরে পরিবর্তনের সুযোগ নাই।
৩.নাম,বাবার নাম,জন্মতারিখ ইত্যাদি এস এস সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিতে হবে।
৪.স্নাতক লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেই Appeared সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা যায়।

প্রিলিমিনারী পরীক্ষাঃ
১.প্রিলিতে সবার জন্য পাস মার্ক/কাট মার্ক একই।অর্থাৎ প্রায় ২,৫০০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যে ১০-১২ হাজার প্রিলিতে ঠিকবে আপনাকে এর মধ্যে একজন হতে হবে।এখানে কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না,তাই সেই লেভেলের প্রস্তুতি নিতে হবে।
২.প্রিলি একটি বাছাই পরীক্ষা।এই নাম্বার পরবর্তীতে যোগ হবে না।তাই ১ম হয়ে প্রিলি পাস করা আর ১০,০০০ তম হয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা।

রিটেন পরীক্ষাঃ
১.যারা বোথ ক্যাডারে দিবেন তাদের জন্য পরীক্ষা হল ১১০০ নাম্বারের।আর যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিকাল/শুধুমাত্র জেনারেল ক্যাডার তাদের ৯০০ নাম্বারের পরীক্ষা।ট্যাকনিকালদের বাংলা ২য় পত্র ও বিজ্ঞান পরীক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট ট্যাকনিক্যাল বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।বোথ ক্যাডারদের জেনারের ক্যাডারের সব বিষয় সাথে নিজ বিষয়ের ২০০ নম্বরের পরীক্ষা।
২.লিখিত পরীক্ষা পাস নম্বর গড়ে ৫০%।সবাইকে অবশ্যই ৫০% মার্কস পেতে হবে ভাইবা দেওয়ার জন্য।আপনার ক্যাডারে যত সিটই থাকুক আপনি যদি রিটেনে ৫০% মার্কস না পান,তাহলে আপনি রিটেনে ফেল।তবে শুধুমাত্র ৫০% মার্কস ক্যাডার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে না।যত বেশি মার্ক পাবেন রিটেনে তত ক্যাডার প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়বে।
৩.রিটেন পরীক্ষায়ও কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না।
৪.কোন পরীক্ষায় ৩০% এর কম পেলে ওই সাবজেক্টের নাম্বার যোগ হবে না।
৫.বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিখিত পরীক্ষা।এখানে যে যত বেশি পাবে,তার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে।

ভাইভাঃ
১.ভাইভা পরীক্ষা ২০০ নম্বরের,পাস মার্ক ১০০।ভাইভা বোর্ডে ৩ জন পরীক্ষক থাকেন।১ জন পিএসসির মেম্বার,বাকি দুজন বাইরের এক্সটারনাল।
২.যারা জেনারেল/বোথ ক্যাডারে ভাইভা দিবেন তাদের এক্সটারনাল যে কোন বিষয়ের হতে পারে।
৩.যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে ভাইভা দিবেন,তাদের বোর্ডে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টের দুইজন এক্সটারনাল থাকবেন।যেমনঃ স্বাস্থ্য দুজন ডাক্তার(যে কোন সাবজেক্টের),গণিতে দুই জন গণিতের শিক্ষক ইত্যাদি।
৪.ভাইভার উপর ক্যাডার প্রাপ্তি নির্ভর করে না।কারণ ভাইভাতে বেশিরভাইগই পাস করে এবং এভারেজ একটা নাম্বার পায়।অল্প কিছু পরীক্ষার্থী খুব ভাল ভাইভা মার্কস পান।নিজেকে সাধারণ ভাবুন।ধরে নিন এভারেজ ভাইভা দিবেন,কিন্তু অসাধারন রিটেন দেওয়ার প্রস্তুতি নিন।
৫.কোন ধরনের তদবির থেকে দূরে থাকুন।বিসিএস ই একমাত্র চাকুরি যা তদবির ছাড়া পাওয়া যায়।
৬.রিটেন ও ভাইভার প্রাপ্ত নাম্বার যোগ করে কোটা এপ্লাই করে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
চূড়ান্ত ফলাফলের কিছুদিন পর অনুষ্টিত হয়।বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ /ইন্সস্টিটিউট এ হয়।ওজন,উচ্চতা,প্রশ্রাব,চক্ষু ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাধারণত কেউ বাদ পড়ে না।

ভেরিফিকেশনঃ
১.পুলিশ,এনএস আই,ইউ এন ও,স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইত্যাদি সংস্থা ভেরিফিকেশন করে।এখানে দেখা হয় কোন মামলা আছে কিনা,রাজনৈতিক পরিচয় নিজের এবং আত্মিয়স্বজনের,স্থায়ী ঠিকানা ঠিক আছে কিনা,স্কুল কলেজ ও মেডিকেল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এ ও ভেরিফিকেশন করা হয়।
২.মামলা থাকলে ভেরিফিকশনে বাদ যাবে।
৩.বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেউ হলে নিজে কিংবা ফ্যামিলি তাহলে বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা।এগুলা আগে থেকেই যে কোন ভাবে ম্যানেজ করতে হবে।
৪.কোটাধারীদের কোটা সংক্রান্ত কাগজপত্র খুব ভালভাবে যাচাই,বাচাই করা হয়।
৫.অনেকে মনে করেন ট্যাকনিকাল (স্বাস্থ্য,শিক্ষা,ইঞ্জিনিয়ারিং) ক্যাডারের জন্য ভেরিফিকেশন সহজ।আসলে তা নয়।একই ব্যক্তিই এক এলাকায় সব ক্যাডারের ভেরিফিকেশন করেন,তাই সব ক্যাডারে সমানভাবেই সব যাচাই বাচাই করা হয়।

গেজেটঃ
সব রিপোর্ট ওকে থাকলে তারপর সরকারী গেজেটে নিজের নাম দেখা যাবে।

জয়েনিংঃ
১.গেজেট দেওয়ার ১৫-৩০ দিনের মধ্যে নিজ মন্ত্রণালয়ে জয়েন করা লাগে।
২.মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর পর কর্মস্থলে জয়েনিং এর জন্য আলাদা গেজেট প্রকাশিত হয়।এটা মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর ৭ দিনের মধ্যে হয় সাধারণত।

এতগুলা প্রসিডিউর সফলভাবে শেষ করতে পারলে তবেই আপনি বিসিএস ক্যাডার।গুরুত্বপূর্ণ হল রিটেন পরীক্ষা,রিটেনে ভাল নাম্বার পেলেন তো আপনি ক্যাডার হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেলেন।এরপর যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ভেরিফিকেশন।মামলা যদি থেকে থাকে যে কোন ভাবে মামলা তুলে নেওয়ার/সমাধান করার চেষ্টা করুন।রাজনৈতিক বিরোধ মিটমাট করুন।ভেরিফিকেশন শুরু হওয়ার আগে প্রতিবেশী /এলাকাবাসীকে /চেয়ারম্যান-মেম্বার এদের হাতে রাখুন।
তো স্বপ্নের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য আজকে থেকেই শুরু করুন প্রস্তুতি। শুভকামনা সবার জন্য।

লিখেছেন:
ডা. আমিনুল ইসলাম
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ
(৩৪ ও ৩৫ তম বিসিএস উত্তীর্ণ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

পুকুরে ডুবে কলেজ ছাত্র মৃত্যুর জের ধরে, গৌরীপুর হাসপাতাল ভাংচুর

Wed Jul 19 , 2017
১৮ জুলাই ১৭ ইং মঙ্গলবার বিকালে গৌরীপুর হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে কলেজ শিক্ষার্থীরা। এতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন অফিসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হামলার ঘটনায় পুলিশ তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি। সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ( দাউদকান্দি সার্কেল) মহিদুল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo