পাখিপ্রেম ও ছবি তোলার গল্প: ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীম

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
[ ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীম
সহযোগী অধ্যাপক ইপিডেমিওলজি, এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী
(এনসিডিসি), স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর। ভালোবাসেন পাখি আর তাই পাহাড়, বন, চর, হাওর ঘুরে বেড়ান নতুন সব পাখির খোঁজে। এই ভ্রমণ সম্পর্কে জানবো তাঁরই লেখনীতে!]

আমার শখ ছবি তোলা। নিতান্ত শখ এর বশে পাখির ছবি তোলা শুরু করেছিলাম বছর দশেক আগে। সেই পাখি এখন আর শখ এর খোরাক নেই মোটেই বরং এটা আমার মনের খোরাক। শরীরের যেমন ক্লান্তি আসে মনও প্রতিনিয়ত ক্লান্ত হয় সংসার সমাজ আর অফিস এর নানা কাজের চাপে।

স্পট বিল ডাক

তাই সুযোগ পেলেই প্রকৃতি আর পাখ পাখালি দেখে দেখে,,, না না আসলে কথাটা হবে উপভোগ করে করে মনটা অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তুলি, স্বুস্থ করে তুলি। আমার এক মনঃরোগ বিশেষজ্ঞ বন্ধুর ভাষায় এটাকে বলে ইকোসাইকোলজিক্যাল ইনটারভেনশন।

বড় পানকৌড়ি

আমি পেশাদার আলোকচিত্রী না মোটেও তারপরও নতুন নতুন পাখির খোঁজে পাহাড়, বন, চর, হাওর কত জায়গায় যে যাই! এবার সেরকম ই যাওয়া হলো টাঙ্গুয়ার হাওর এ। যেতে একটু কষ্ট বৈকি, দূরের পথ আবার জায়গায় জায়গায় রাস্তাও খারাপ। কিন্তু কল্পনায় যখন আকাশ ঢেকে ফেলা হাঁসের ঝাক উড়তে থাকে, কানে বাজতে থাকে হাঁস এর কাকলি তখন মনকে বাধার সাধ্য কি!

ফ্যালকেটেড ডাক

হ্যাঁ, শীতে নানা রকম হাঁস আর জলাশয় এর পাখি র দেখা মেলে এখানে। অসাধারন সুন্দর সব হাঁস, নেশা ধরে যায়। অফিস থেকে ফিরে এঘর ওঘর পায়চারী করছি, একে ওকে ফোন করে সঙ্গী খুঁজছি। চপল ভাই বায়ার নিয়ে ব্যস্ত, মনির ভাই কক্সবাজার এর ওদিকে গেছেন। হঠাৎ করে সামিয়াত জিকো রাজী হয়ে গেলো। আমার ছেলেটার ইন্টার পরীক্ষা, তাই বাসায় বলার সাহস হচ্ছিলো না। গিন্নী আমার অস্থিরতা দেখে মুচকি হেসে বলল এই মৌসুমে আর বেরুবে না, এইবারই শেষ যাওয়া। কৃতজ্ঞ হয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে ক্যামেরা গিয়ার গুছিয়ে নিলাম মুহুর্তে।

রেড ক্রেষ্টেড পোচার্ড

মহাখালী থেকে বাসে সুনামগঞ্জ, সেখান থেকে অটোতে তাহিরপুর, তাহিরপুর থেকে অটোতে সোলেমানপুর ঘাট। সোলেমানপুর থেকে হাওর বিলাস, খসরুর বাড়ি। একরাত একসিট চারশ টাকা, প্রতিবেলা হাওর এর মাছ দিয়ে খসরুর বউ এর রান্না একশ সত্তর টাকা। গাড়ীতে বসেই খসরুকে ফোন দিয়েছি, ও জানালো সিট খালি নাই তবে ওর ভাগ্নের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করবে।

গ্লসি ইবিস

আমরা সব সময়ই ছোট মাঝি বাওয়া নৌকা নিয়ে সকালে বের হই, সন্ধ্যায় ফিরে আসি। চার থেকে পাচশ টাকা নেয়, সারাদিন বৈঠা টানে, মাঝির জন্য কিছু শুকনো খাবার, পানি নিলে আপ্লুত হয়। মাঝির মন ভালো তো নৌকা ভালো চলে, নৌকা ভালো চললে ভালো পাখি দেখার সুযোগ হয়।

হাওর পাড় এ পৌছে খসরুর হাতে ব্যাগ দিয়ে ছুটলাম পাখির খোঁজে। আমার এবারের মাঝি শাহীন।

বেগুনি বক

রুপাবই, রৌহা বিল পেরোলেই ছোট খাল। খাল পেড়িয়ে লেইছামারা বিল এর শেষ মাথা যেখানে এটা হাতির গাতা বিল এর সাথে মিশেছে সেই দিকে এগুচ্ছি আর ছবি তুলছি। কাঁচ এর মতো স্বচ্ছ পানি, ছোট ছোট ঢেউ এর সাথে দুলছে ভোরের আলো, দুলছে নৌকা, নাচছে মন।

বড় কোর্চে বক

এই মৌসুমে তিনবার গিয়েছি টাঙ্গুয়ার হাওরে, অনেক পাখি দেখেছি, ভালো ছবিও তুলেছি। কেন জানি মন ভরছিলো না, একটা বিশেষ পাখি দেখবো বলে। কেউ কেউ দেখেছেন এরই মধ্যে কেউ আবার সেই পাখিটার ছবিও তুলেছেন।

মালার্ড

মালার্ড, ফ্যালকেটেড ডাক পেলাম বেশ কবার, কিন্তু যার জন্যে বারবার আসা তার দেখা পাচ্ছি না। শতিনেক হাসের একটা ঝাঁক পেলাম, একটা একটা করে চেক করছি লুকিয়ে আছে কিনা, মাথা গুজে আছে কিনা। হঠাৎ কি একটা এক ঝলক দেখে দম বন্ধ হয়ে এলো। কমন টীল পাখির আড়ালে বৈকাল টীল ই তো ওটা!! শেষতক ভোরের আলোয় মন আলো করিয়ে তার দেখা মিলল।

বৈকাল টিল

বৈকাল টীল নাম তার, চোখে লেগে থাকার মতোন রূপ। বুকের ভিতরটা কেমন করছিলো সেটা যারা ছবি তুলেন তারা নিশ্চয়ই বুঝবেন।হাওর এ ঘুরতে ঘুরতে আকাশ এর সাথে দেখা, ঢাবি এর জুওলজির শিক্ষক, দূর থেকে অনু তারেক ভাইকে দেখলাম, সিরাজ ভাই, ফয়সাল ভাই এর সাথে আড্ডা হলো।

বনমোরগ

মন কানায় কানায় ভরে আছে, সুখ উপচানো মন নিয়ে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলাম।আসলে প্রকৃতি উপভোগ করা একটা মানসিকতা ও চর্চার বিষয়। প্রকৃতি আপনার অস্থিরতা, হতাশা, কষ্ট শুষে নেয়। প্রকৃতি মন ভালো করে দেয়।

ইস্টার্ন ওয়াটার রেইল

***তবে পাখি দেখার কিছু নিয়মও আছে। নীচের লিংক চাইলে পড়তে পারেন
https://www.facebook.com/groups/2403154788/permalink/10158366624499789/

ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীম

Fahmida Hoque Miti

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কেন হাঁটবেন, কিভাবে হাঁটবেন

Sun Mar 1 , 2020
ডিপ্রেশন, এংজাইটি রোগীদের ঔষধের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটতে হবে। আমি প্রায়শই এ পরামর্শ দিয়ে থাকি। হাঁটলে ব্রেইনে কোষ থেকে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিক ভাবেই ডিপ্রেশন কাটাতে সহায়ক। কাজকর্মের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সময় হাঁটতে পারিনা। অনেক সময় হাই অফিসাররা বলেন, হাঁটার সময় পাইনা। তবে কিছু কিছু পদ্ধতি অনুসরণ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo