প্রয়োজনীয় তথ্য না জেনে রক্ত পরিসঞ্চালনে বাড়তে পারে মৃত্যু ঝুঁকি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, বৃহস্পতিবার 

ডা. ফারহানা ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল মহাখালী, ঢাকা।

ছবিঃ ডা. ফারহানা ইসলাম।

ধরুন আপনার বাবার রক্তশূন্যতা। হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। জরুরী রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে। আপনার বাবা আর আপনি দুজনেই একই রক্তের গ্রুপ। ধরা যাক, বি পজিটিভ। তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বাবার জন্য রক্ত দেবেন এবং সেটা করাই স্বাভাবিক।

আপনি বাবাকে রক্ত দিলেন। বাবা একটু সুস্থ। আপনার বেশ ভাল লাগছে। নিজেকে পরিতৃপ্ত মনে হচ্ছে। ১০- ১৪ দিন পর আপনার বাবার জ্বর এলো। সাথে আবার রক্ত শূন্যতা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, ত্বকে ফোস্কা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো গেলো না! হঠাৎ এমন অসুস্থ হবার কারণটাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। বিষয়টি ভাবুন, আপনজনের রক্ত পরিসঞ্চালন করার পর টিএ-জিভিএইচডি হতে পারে। খুব কম সংখ্যক হয় কিন্তু হলে শতকরা ৯৫ ভাগ মৃত্যু হার। রোগীকে ফিরিয়ে আনা যায় না।

ছবিঃ টিএ-জিভিএইচডি।

তবে ইরেডিয়েটেড করে রক্ত দিলে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা সবখানে নেই। অতএব, আপনজন ডোনার না হওয়াটাই শ্রেয় (যেমনঃ বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে)। আবার, স্ত্রীর রক্তশূন্যতা, রক্ত লাগবে। আপনি স্বামী। খুব ভালবাসেন স্ত্রীকে। যেহেতু রক্তের গ্রুপ এক, তাই আপনিই রক্ত দিলেন। এবার আপনার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। বাচ্চাটা বেড়ে উঠছে, আপনি জানেনও না আপনার দেওয়া রক্তের অন্য কোনো এন্টিজেনের বিরূদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয়ে আছে আপনার স্ত্রীর শরীরে। প্লাসেন্টা দিয়ে সেই এন্টিবডি বাচ্চার শরীরে যাচ্ছে এবং লোহিত রক্ত কণিকা ভাঙছে। এটা হিমোলাইটিক ডিজিজ অব নিউবর্ন। বাচ্চা প্রসবের পর তার এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন লাগছে। বাচ্চাটাকে নিয়ে টানাটানি চলছে। অতএব প্রজনন বয়সে স্বামী স্ত্রীকে রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। আপনি জানেনও না আপনার শরীরে থ্যালাসেমিয়া নামক অসুখের জিন আছে। কারণ আপনি মাইনর বা ট্রেইট। আপনার বিয়ের সময় অবশ্যই যার সাথে বিয়ে তার থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা জেনে নিন। কারণ আপনার একটু রক্তশূন্যতা হওয়ায় পরীক্ষায় পাওয়া গেছে আপনি এই জিন বহন করছেন।

ছবিঃ থ্যলাসেমিয়া রোগের বিস্তার।

বিপদটা কোথায়?                                        আপনি এবং আপনার স্ত্রী দুজনই যদি এই জিন বহন করেন তবে বংশধরেরা এটা পাবে এবং কেউ না কেউ হয়তো রোগটাকে নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে।আর তাকে ৩/৪ মাস পর পর রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে। তার সাথে আরো কত বিষয় জড়িত! রক্ত পরিসঞ্চালন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী। এটা কোনো টনিক নয়, স্যালাইনও নয়। শরীরের জীবিত কোষ প্রতিস্থাপন।নানান রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। প্রয়োজন ছাড়া রক্ত পরিসঞ্চালন থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। আরো অনেকভাবে চিকিৎসা করা যায়।

Sadia Kabir

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ডা. শুভাগত চৌধুরীর স্বাস্থ্যবার্তা : যে দশটি অভ্যাস ক্ষতি করতে পারে আপনার কিডনির

Thu Sep 24 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার  অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী৷ আমরা কোন সন্দেহ ছাড়াই বলতে পারি যে কিডনি আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান৷ কিডনি  রক্তকে ডিটক্সাইফাই করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ফিল্টার করতে সহায়তা করে। কিন্তু কিছু কিছু অভ্যাসে ক্ষতি হতে পারে আপনার কিডনির৷ যে দশটি অভ্যাস […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo