নতুন পরিবেশে ঘুম ঠিকভাবে কেন হয় না ?

জানেন তো? নতুন জায়গায় কেন আপনি প্রথম রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না?
অনেকদিন পর আপনি কোথাও ঘুরতে গেলেন, দামি হোটেলে সীট বুকও করলেন। যথারীতি রাতে ঘুমাতে গেলেন। অনেক আকর্ষণীয় রুম, আরামদায়ক বিছানা, দামি বেড সীট, নরম বালিস-আপনার ভালো ঘুমের জন্য কি নেই বলুন! কিন্তু, ছোট্ট একটা সমস্যা! এতকিছুর পরেও ভালো ঘুম আসছে না। দোষটা কিন্তু আপনার বিছানার না, আসল অপরাধী হচ্ছে আপনার স্বয়ং মস্তিস্ক! যখন আপনি নতুন পরিবেশে ঘুমাতে যান তখন আপনার মস্তিস্কের একটি অংশ বেশি সতর্ক অবস্থায় থাকে, বিশেষকরে প্রথম রাতে। একারণে এই ঘটনাকে বলা হয় “First Night Effect (FNE)” গবেষণায় দেখা যায়, কোনো নতুন পরিবেশে প্রথম রাতে ঘুমানোর সময় মস্তিস্কের দুই হেমিস্ফিয়ার (hemispheres) কাজের তারতম্য দেখায়। তখন একটি হেমিস্ফেয়ার অন্যটির চেয়ে কম নিস্ক্রিয় থাকে। মস্তিস্কের এই কম নিস্ক্রিয় অংশটি ঘুমের সময় বেশি সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে, ছোট্ট একটা শব্দেও বড় প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আপনাকে জাগিয়ে দেয়। অজানা কারণে, কম নিস্ক্রিয় অংশটি সবসময় আপনার মস্তিস্কের বাম অংশ বা বাম হেমিস্ফিয়ার। জেনে অবাক হবেন, মানুষের মস্তিস্কের এই আচরণ অনেকটা পাখির মস্তিস্কের মতই। কিছু পাখি আছে, যখন তারা ঘুমায় এক চোখ খোলা রেখে এবং মস্তিস্কের একটি অংশকে জাগিয়ে রেখে ঘুমায়, যাতে কেউ আক্রমণ করতে এলে অনেক দ্রুত বুঝতে পারে এবং দ্রুত পাল্টা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি মস্তিস্কের কোন অংশকে জাগিয়ে রাখবে তা সে নিজে নির্ধারণ করতে পারে, যা এটা নির্ভর করে সে কোথায় ঘুমাচ্ছে তার উপর। আমরা পাখির মতো এক চোখ খোলা রেখে ঘুমাই না ঠিকই কিন্তু নিজের অজান্তেই আমাদের বাম মস্তিস্ককে সজাগ রেখে ঘুমাই।

 

আরেকটি ব্যাপার, First night effect টি পুরোটাই প্রাকৃতিক এবং বিবর্তনমূলক আত্মরক্ষার ব্যবস্থা। এই দক্ষতাটি আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছি। নতুন পরিবেশকে মস্তিস্ক আপনার জন্য বিপদজনক হিসেবে ধরে নেয়। এই জন্য মস্তিস্কের একটি অংশ নিজ থেকেই সজাগ থাকে। এটা অনেকটা নিজেই নিজেকে খেয়াল রাখার মতো! আদিকালে আমাদের পূর্বপুরুষরা খাবারের সন্ধানের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেত। সেই নতুন পরিবেশ তাদের জন্য সুবিধার ছিল না। হিংস্র পশু বা অন্য দলের মানুষদের ভয় তো ছিলই। এই বিপদসংকুল পরিবেশ থেকে বাঁচতে তাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হতো, এমনকি ঘুমের সময়েও। আর এই ক্ষমতাটাই আমরা বিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে নতুন পরিবেশে গিয়েও ভালো ঘুম সম্ভব? যদি হোটেল রুমকে আপনি আপনার বাসার রুমের মতো করতে পারেন তাহলে First night effect কে কমাতে পারবেন। ভাবছেন তা কীভাবে সম্ভব! তাই না?… খুবই সহজ সেটা। যাদের বেশি এই সমস্যাটি হয় তারা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় আপনার বাসার বেড সীট, বালিশ সাথে নিয়ে আসবেন। বালিশ আনা সম্ভব না হলেও অন্তত বালিশের কাভার নিয়ে আসবেন। এগুলো আনতে বলছি কারণ, আপনার খোদ মস্তিস্ক এতে ধোঁকা খাবে। ভাববে আপনি আপনার পরিচিত জায়গাতেই ঘুমাচ্ছেন! আরেকটি কথা, সবসময় চেষ্টা করবেন প্রতিবারে একই হোটেলে থাকার। এতেও আপনি রাতে ভালো ঘুমাতে পারবেন। আজ এতটুকুই, ধৈর্য সহকারে লিখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
References: CNN Eight Sleep
news.com.au
nosleeplessnights.com
tiredfeelingtired.com
লেখকঃ আকিব নিয়াজ জোহা
JINZHOU MEDICAL UNIVERSITY (CHINA)
Session: 2016-17

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সমালোচিত রম্য বইয়ের লেখক পরিচিতি শুধুমাত্র সার্কাজমের উদ্দেশ্যেঃ লেখক

Mon Feb 11 , 2019
বইমেলা ২০১৯ এ, অন্যান্য বছরের মতই চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বইমেলার একটি আলোচিত বই হল, ভারপ্রাপ্ত প্রেমিক। বইটি মেডিকেল ক্যাম্পাসকে পটভূমি করে, রম্যের আদলে লেখা। বইটি আলোচনায় আসার মূল কারন হল, বইটির লেখক পরিচিতি। বইটি সম্পর্কে না জেনে, শুধুমাত্র লেখক পরিচিতি, প্রথমবার পড়লে আপনি নিঃসন্দেহে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo