করোনা মানুষের সঙ্গে চলে: ডা. মুজিবুর রহমান

সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

করোনা ভাইরাসের হাত-পা নেই, সে একা চলতে পারেনা, মানুষের মাধ্যমে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যায় এবং সংক্রমণ ঘটায়। সুতরাং মানুষের চলাচল বন্ধ করতে লকডাউন আরও কঠিন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের বিষয়ে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, করোনা প্রতিরোধে আমরা ছুটি ঘোষণা করলাম। এই ছুটি বলাতে আমরা করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিটা জনগণকে বুঝাতে ব্যর্থ হলাম। ছুটি শুনে মানুষের মধ্যে একটা উৎসব ভাব লক্ষ্য করা গেল। সবাই ঈদের ছুটির মধ্যে বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে করে বাড়িতে চলে গেল। কিন্তু এটাতো কোনো উৎসবের জন্য ছুটি নয়। এটা হচ্ছে লকডাউন ঘোষণা। লকডাউন বলতে যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাকবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম যেদিন করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলো, দুই দুই জন রোগী শনাক্ত হওয়া মানে, তখন বাংলাদেশ আরও করোনা ভাইরাসের রোগী ছিল। আমাদের করোনাভাইরাস টেস্টের কিটের অভাব ছিল বলে তখন টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছিল না। গতকাল প্রায় চারশত টেস্ট করার ফলে একদিনেই নয় জন সনাক্ত হয়েছে। টেস্টের পরিমাণ বাড়ালে করোনা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

করোনা ভাইরাস বর্তমানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। প্রথমে আমরা যে রোগীদের পেতাম তারা কোনভাবে প্রবাসীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল। কিন্তু এখন যারা শনাক্ত হচ্ছে তাদের বিদেশের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গিয়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যখন হয় তখন বুঝতে হবে যে আমাদের দেশে নীরবে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন এবং সে স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিটির অনন্য মানুষকেও সংক্রমিত করছে।

দেশের জনগণের আরও সচেতন হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যারা দেশে আসলো, তারা কোয়ারেন্টিনে ঠিকঠাক মতো থাকলেন না, কোয়ারেন্টিনের বিধি নিষেধও মানলেন না। তারা কিন্তু ইতিমধ্যে সোসাইটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমিত করে ফেলেছেন। এটা বুঝতে পেরেই সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বললো, মাস্ক পড়তে বললো। ঢাকার কিছু স্থানে হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে এখনো মানুষজন হাটে-বাজারে বসে চা খাচ্ছে, বিনা কারণে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

তারা কিন্তু আবার মাস্কও পরছেনা। তাদের মধ্যে নূন্যতম সচেতনতাও নেই। ওই হাটে-বাজারে কোনোভাবে যদি একটা কেস চলে আসে, তাহলে করোনাভাইরাস কি পরিমাণে ছড়াবে সেটা ভাবনার বিষয়।

তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসটা বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে, কারণ আগামী ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। এটা একটা নতুন রোগ তাই এটা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতিও খুব সামান্য। এছাড়াও প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছিলাম এটা সামান্য সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো ভাইরাস, এতে তেমন কিছুই হবে না। যার ফলে আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতার জায়গাটাও অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে।

এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবেলা না খেয়ে হলেও বাসায় থাকতে হবে। কষ্ট হলেও যেকোনো পরিস্থিতিতেই বাসায় থাকতে হবে। খুব প্রয়োজনে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। দোকানে কিছু কিনতে গেলে একজনের পরে আরেকজন দোকানে প্রবেশ করতে হবে। সামাজিক দূরত্বটা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।

করোনার উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করতে হবে, রোগ ধরা পড়লে তাদেরকে আইসোলেটেড করতে হবে- যেন আক্রান্ত ব্যক্তি এই ভাইরাস অন্য কারো মধ্যে সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। So, Identify the case, isolate the case, prevent transmission & stay home.

নিজস্ব প্রতিবেদক / অংকন বনিক জয়

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

রমেক হাসপাতালের পাশে প্ল্যাটফর্ম পিপিই ব্যাংক

Mon Apr 6 , 2020
৬ এপ্রিল, ২০২০ কোভিড-১৯ এর মহামারী পরিস্থিতিতে সারাদেশের মানুষ যখন আতঙ্কিত, নিজেদের জীবন নিয়ে চিন্তিত, লক-ডাউনে ঘরে বসে নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করছেন ঠিক তখনি আমাদের দেশের ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী ঢাল তলোয়ার ছাড়াই নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহামারীর সাথে মহাযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। তাঁদের এই যুদ্ধেরই সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম পিপিই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo