প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুন, ২০২০, শুক্রবার
করোনাকালীন দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে চিত্রটি বেরিয়ে এসেছে তাতে এবার বেশ মোটা দাগের আলোচনায় ছিল স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বরাদ্দ। মহামারি কালীন স্বাস্থ্যখাত সামলাতে অবশেষে বাজেটে বেড়েছে বরাদ্দ। জাতীয় বাজেটে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাস্থ্যখাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেছেন।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় গৃহিত কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতের জন্য এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম ১৩ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
এছাড়া এ বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে নতুনত্ব পরিলিক্ষত হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ হিসেবে ১০হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে।এটি একটি বড় নতুনত্ব। করোনা রোধে ২টি বিশেষ প্রকল্প এ বরাদ্দ ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। করোনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানীতে বরাদ্দ ৮৫০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা গবেষণা তহবিল এ বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা।
বহু বছর ধরেই স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থহীন ব্যয়ের অভিযোগও উঠছে। সরকারি স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশার কারণে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিশাল একটি চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা। যেখানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় অন্যান্য খাতের তুলনায় স্বাস্থ্যখাত বাজেটে বরাবরই কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির বিচারে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বাংলাদেশে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলছেন, ”বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য এই পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। এ খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ১ হাজার ৫৩৭ টাকা। এ কারণে মানুষকে নিজের পকেট থেকে প্রায় ৬৬ শতাংশের মতো খরচ করতে হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের পেছনে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় ৩৪ টাকা এবং বাকি ৬৬ টাকা রোগী নিজে বহন করে। এই টাকা খরচ করা অনেক মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।”
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, শুধুমাত্র বরাদ্দ বাড়িয়ে স্বাস্থ্যখাতের নাজুক অবস্থার পরিবর্তন হবে না, এজন্য দরকার বরাদ্দ বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কার্যকর ব্যবহার।


