অদৃশ্য মহামারি থ্যালাসেমিয়া, চিকিৎসায় বছরে প্রয়োজন ১০ হাজার কোটি টাকা

বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

বাংলাদেশে রেজিস্ট্রারভুক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা অনেকটা অদৃশ্য মহামারিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসা ব্যয়ের ভার এতটাই বেশি যে, সব রোগীর জন্য সেবা দিতে বছরে প্রয়োজন অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ রোগটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য—যদি সচেতনতা এবং বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

বুধবার (৭ মে) আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসায় প্রতিমাসে একজন রোগীর খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে দেশে প্রায় এক লাখ রেজিস্ট্রারভুক্ত রোগী রয়েছে, যাদের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকৃত রোগী সংখ্যার ভিত্তিতে হিসাব করলে এই ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ যার ব্যয়ে কোনো উদ্বৃত্ত নেই। এর চিকিৎসা ব্যয় শুধু বাড়তেই থাকে। সমস্যা আরও গভীর হয় যখন দুইজন বাহক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তান জন্ম দেয়, যেটি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহন করে। একমাত্র সমাধান হলো সচেতনতা এবং বিবাহপূর্ব পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। আমি নিজে এই বিষয়ে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করব এবং আমার তিনটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি জায়গায় এই রোগ নিয়ে আলোচনার আয়োজন করব।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন শিশু হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক। তিনি বলেন, বিবাহপূর্ব থ্যালাসেমিয়া বাহক শনাক্তকরণ বাধ্যতামূলক হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

শিশু হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ, কিন্তু জনসচেতনতার অভাবে প্রতিদিনই নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, এই রোগীদের নিয়মিত রক্ত প্রয়োজন। তাই নিরাপদ রক্তের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাও জরুরি, যাতে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে নতুন কোনো রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. মো. সেলিমুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মো. মাজির হোসেন এবং অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন। বক্তারা সবাই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ের নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

দিনব্যাপী আয়োজনের মাধ্যমে উপস্থিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রক্তদান কর্মসূচি ও থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার আয়োজনও করা হয়।

প্ল্যাটফর্ম/

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সফল অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফিরল আহত খোকন

Wed May 7 , 2025
বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫ ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশজুড়ে আলোচিত খোকনচন্দ্র বর্মনের মুখমণ্ডলে রিকনস্ট্রাকশন সার্জারির প্রথম ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় পাঠানো এই সাহসী তরুণ আজ দেশে ফিরেছেন। বুধবার (৭ মে) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের (কিউআর -৬৪০) ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo