লাইফ ইন লকডাউনঃ ডে হাণ্ড্রেড ফিফটি এইট

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

ছোট্ট মনে বড় কষ্ট নিয়ে চলে গেল মেয়েটি। আরেকজন মেয়ে আত্মহত্যা করেছে অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হয়ে। পত্রিকা পড়ি না। পড়লেও খারাপ লাগা খবর বেছে বেছে বাদ দেই। আমরা প্রতারক। ছোটখাটো প্রতারণা এখানে দোষের কিছু নয়। এসব আমরা জানি।

পড়ছিলাম সুন্দরবন জঙ্গলের কথা। জঙ্গলে বানরের সাথে হরিণের বিশাল বন্ধুতা। বানর কেওড়া গাছের ফুল, পাতা ছিঁড়ে নিচে ফেলে আর কু কু করে হরিণকে নেমন্তন্ন করে। খাওয়ার লোভে হরিণের দল আসে। মানুষও একি কায়দায় হরিণকে ডাকে। হরিণ আসলে গাছের উপর থেকে গুলি করে। যাকে বলে গাছাল দেওয়া।

আমরা গাছাল দেই প্রেমের নামে, শিক্ষকতার নামে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার নামে। দশটি ঘুমের ঔষধ খেয়ে এসেছে ছেলেটি। অত অল্প ডোজে মরবে না। কিন্তু এখন মরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছে। কে ‘গাছাল’ দিছে জানতে চাই। ওরা বুঝে না। ছেলেটি বুঝে। ছবি দেখায়। মেয়েটির পরনে এক ছাপা শাড়ি। শাড়ির জমির রঙ কলাপাতা সবুজ, তার উপরে যেন কুচো কুচো কুড়ি ছিটানো। আঁচল গাঢ় লালের টান। বলি ‘কী বিয়ে হয়ে গেছে’? সে উপর নিচ মাথা নাড়ে। ‘আজকে’? আবার নাড়ে। এক ইমার্জেন্সি ডিউটি করতে গেলে সব মাথায় রাখতে হয়। কবে বিয়ের দিন যাচ্ছে, ধান তোলার মৌসুম কখন যাচ্ছে, কোথায় ফ্রী খিচুড়ি দিচ্ছে, কোথায় মারামারি হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা, বৃষ্টি- সব।

স্কুল খুলুক না খুলুক, প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার চালু হয়ে গেছে। বাড়ির মালিক ষাটোর্ধ্ব, দরজা বন্ধ করে ব্যাচ ছাত্র পড়ান। সক্রেটিসের যখন মৃত্যু হয় প্লেটোর বয়স তখন ঊনত্রিশ। এথেন্সের শ্রেষ্ঠ নাগরিকটির মৃত্যু তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল। তিনি বুঝেছিলেন আলো ছড়িয়ে না দিলে আলো ধরে রাখা সম্ভব নয়। তিনি স্কুল খুলেছিলেন। আরেক গ্রীক কিংবদন্তি একাডেমাসের নামে নাম রেখেছিলেন ‘একাডেমি’। তারপর গোটা পৃথিবী জুড়ে কত কোটি একাডেমি যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল! আমি নিজেই দুই একাডেমিতে পড়েছি। এখন একাডেমিওয়ালারাই জানে না একাডেমি মানে কী!

প্লেটোর মতে স্পর্শনীয় সব কিছু বস্তু। বস্তু চির ক্ষয়িষ্ণু, বস্তু নিয়ে ভাববার কিছু নেই। ভাবতে হবে আইডিয়া নিয়ে, থিম নিয়ে। যা চিরন্তন। তাঁর কাছে বস্তুজগতের বাইরে বাস্তব জগৎ ভাবজগৎ। বস্তু ঊনিশ বিশ, ভাব হচ্ছে আসল ছাঁচ। ছাঁচ অবিনশ্বর। ছেলেটি প্রেম করলো, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কষ্ট পেলো, সে ভুলার চেষ্টায় ঔষধ খেলো। এখানে ভাবগুলো চিরস্থায়ী। সেসব নিয়ে ভাবা যেতে পারে। ছেলে বা মেয়েটি নিয়ে ভেবে কী হবে?

কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে খোঁজ রাখছিলাম। অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিনে এক ব্যক্তির নিউরোলজিকাল সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেজন্য এক সপ্তাহের জন্য ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছে। রাশিয়ার ভ্যাক্সিন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ডাক্তাররা। তারা বলছেন প্রকাশিত ডাটা ‘ভেরি মাচ আনলাইকলি’। আমেরিকান ভ্যাক্সিন ট্রায়ালের শেষদিকে আছে। ভ্যাক্সিনটির সাইড ইফেক্ট খুব কম এবং বয়স্কদের জন্যও সফল। চীনের ভ্যাক্সিন ব্রাজিল, মেক্সিকো, সৌদি আরবে ট্রায়ালে খুব ভাল করছে। ভারতের ভ্যাক্সিন এখনো দ্বিতীয় ফেজে আছে। পারফরম্যান্স তাদের ভাষ্যমতে রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের চেয়ে ভাল। কিন্তু আসতে আসতে সামনের বছর লাগবে।

আজ অনেকদিন পর ঢাকার বাজারে গেলাম। জিনিসপত্রের অনেক দাম অথচ কোন উচ্চবাচ্য নেই। আগে পাঁচশো টাকা নিয়ে বাজারে গেলে মাছ না কিনে সবজি কিনে আসা যেত। এখন শান্তিমতো শাকও কেনা যায় না। বন্যার জন্যে নাকি দাম বেড়েছে। বন্যার উপর দোষারোপ গত এক মাস ধরেই চলছে।

১১/০৯/২০২০

বাসায় বসেছিলাম। হঠাৎ ফোন আসলো আমার বড়ভাইয়ের শিশু ছেলেটি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। রক্তও ঝরেছে। দ্রুতই উড়ে গেলাম। দেখি চারজন ঘরের চারকোণায় উদাস বসে আছে। শূন্য দৃষ্টি। সবাই এ দুর্ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী করছেন। ছেলের মা রীতিমত ভ্যাঁ করে কাঁদছে। বাবুটা তার ঘাড়ে মাথা লুকিয়ে আছে। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম তেমন কিছু নয়।

শান্তির সুবাতাস তখনো বয় নি। খুব সহজ কাউকে দোষের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া। যার পোড়ে সে জানে পোড়ার জ্বলুনিটা কেমন। মাকে স্পর্শ করে এমন শুভাকাঙ্ক্ষী এক জীবনে নেই। মায়া মমতার মাঝে পড়া কোন কাজের কথা নয়। বরং ছোট ছোট নাটবল্টু খুলে মমতা থেকে পাত্র পাত্রীকে বের করে আনতে হবে। প্লেটো বলে গেছেন- শুধু ভাবটুকু চিরন্তন! মন নিয়ে আমাদের কাজ নেই আর মন বাদে শরীর তো মেশিন। বললাম ‘এরকম দুই একবার পড়বেই। অত অস্থির হলে হয় না। আছাড় না খেয়ে কেউ বড় হয় নি।

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ক্যান্সারের কথন: "ভিটেটা যদি বাঁচানো যেত"

Sat Sep 12 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, শনিবার ডা. নূর ইসরাত ICU MO, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল Resident, Medical oncology, NICRH ছবির হেডিং দেখে মনটা ভরে গেল। ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে রংপুর ক্যান্সার হাসপাতাল। ভাল লাগাটা যে একজন ভবিষ্যৎ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবে তা তো বটেই। এর চেয়ে বেশি […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo