গর্ভকালীন সময়ে প্রস্রাবে সংক্রমণ ( মূত্রনালীর সংক্রমণ)

৩১ অক্টোবর,২০১৯

অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়ে থাকে।

গর্ভবতী মায়েদের এইসময় তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারন এই ইনফেকশন থেকে নিজের সমস্যার পাশাপাশি গর্ভের শিশুরও কিছু সমস্যা হতে পারে।

আসুন জানি সেই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা আমাদের জানার পাশাপাশি গর্ভবতী ও তার পরিবারের সদস্যকেও কাউন্সিলিং করতে হবে, বুঝাতে হবে।

♣  মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) এর লক্ষনসমুহ

১।।  বারবার মূত্রের চাপ/ বেগ হওয়া
২।।  বারবার মূত্র ত্যাগ করা
৩।।  ইউরিনে জ্বালাপোড়া
৪।।  আটকে থাকা
৫।।  ইউরিনের সময় ব্যাথা হওয়া
৬।।  জ্বর আসা
৭।।  বমি/ বমিভাব
৮।।  কোমর থেকে তলপেটে ও ২পাশে ব্যথা
৯।। ইউরিন ঘোলা হওয়া, এরসাথে রক্তও যেতে পারে।

♣ মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) কেন হয়??

👉 এমনিতেই মেয়েদের এই সমস্যা ছেলেদের থেকে বেশি হয়।  কারন মেয়েদের মূত্রনালী ছোট হয়। এবং এর অবস্থান যোনীপথ ও মলদ্বারের কাছে থাকে। যেখান থেকে সহজেই জীবানু মুত্রনালীতে প্রবেশ করতে পারে।

👉 প্রস্রাব আটকে রাখার জন্য

👉 প্রয়োজনের চেয়ে পানি কম খাওয়ার জন্য

👉 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যেমনঃ ডায়াবেটিস

👉 নোংরা পানি ব্যবহার করা

👉 সহবাসের আগে ও পরে প্রস্রাব না করা

👉 কিডনিতে পাথর

👉 প্রসাবের পর ঐ স্থান ভালোভাবে ও নিয়মমত পরিস্কার না করা।

👉 কোনো কারনে ক্যাথেটার ব্যবহার করলে

👉 পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব

👉 যৌনবাহিত কোনো রোগ থাকলে

👉 আগে একবার হয়েছিল কিন্তুু ঔষধের কোর্স ঠিকমতো কম্পিলিট করা হয় নাই।

ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

♣  কি কি সমস্যা হতে পারে??

🍃 জ্বর ও বমি/ বমি ভাব
🍃 দুর্বলতা, কিছু খেতে না পারা

🍃 তলপেটে ব্যাথা
🍃 বারবার টয়লেটে যাওয়ার দরুন অস্বস্তি অনুভব করা।

🍃 দীর্ঘদিন এমন অবস্থা থাকা এবং চিকিৎসা না করার ফলে কিডনির সমস্যা যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস,  ব্লাডার সমস্যা -সিসটাইটিস হতে পারে।

🍃 ইনফেকশনের জন্য এবরশন
🍃 প্রিটার্ম ডেলিভারি

🍃 আই.ইউ.জি.আর ( বাচ্চার বৃদ্ধি না হওয়া)
🍃 এমনকি আই.ইউ.ডি (বাচ্চা গর্ভেই মৃত্যু) হতে পারে।

♣ Recurrent UTI কি??

একবার প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে আবারও হতে পারে/ বারবার হওয়ার আশংকা থাকে। মুত্রনালীতে সাধারনত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের ফলেই ইনফেকশন হয়ে থাকে।

বছরে যদি ৩ বার অথবা এর অধিকবার  প্রসাবে ইনফেকশন হলে তাকে Recurrent UTI বলে। এটা একই জীবাণু বা ভিন্ন ধরনের জীবাণু দিয়েও হতে পারে।

বারবার ইনফেকশন হলে এর কারন বের করতে হবে যেমনঃ কিডনি/ মুত্রথলিতে কোনো পাথর আছে কিনা, আগে ঔষধের কোর্স ঠিকমতো কমপ্লিট করেছিলো কিনা, ঠিকমতো নিয়মকানুন মানে কিনা, ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা,  মুত্রতন্ত্রের গঠনগত কোন সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি।

♣ চিকিৎসক কি কি বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে?

১।।  ANC schedule মতো চেকআপ হয়েছিল কিনা
২।।  ডায়াবেটিস আছে কিনা
৩।।  বাচ্চার নড়াচড়া ঠিকমতো হয় কিনা
৪।।  আগে কখনো ইউরিন ইনফেকশন হয়েছিল কিনা
৫।।  ঐসময় ঠিকমতো চিকিৎসা করেছিল কিনা
৬।। পানি কেমন খাওয়া হয়
৭।।  প্রস্রাব আটকে রাখে কিনা
৮।।  মুত্রস্থান পরিস্কারের নিয়ম
৯।।  কোনো ধরনের কিডনি রোগ , যৌনবাহিত রোগ আছে কিনা।
১০।।  ব্যাথার ধরন, জ্বর কত থাকে(যদি হয়)
১১।।   কোনো টেস্ট করেছেন কিনা? আগের ঔষধের প্রেসক্রিপশন/ ঔষধের নাম বলতে পারেন কিনা।
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

♣  চিকিৎসক আপনাকে কি কি পরীক্ষা করতে দিতে পারে ??

👉 Routine Pregnancy test (যদি করা না থাকে তাহলে করতে দিতে হবে)

👉 Urine R/M/E

👉 Urine C/S

👉  Blood sugar (যদি ডায়াবেটিসের হিস্ট্রি থাকে)

👉  S. Creatinine  (যদি কিডনির সমস্যা থাকে)

♣ চিকিৎসা ও করণীয়

📝 এন্টিবায়োটিক (প্রেগনেন্সিতে সেইফ ড্রাগস)
📝 ব্যাথার জন্য এন্টি-স্পাস্মোডিক

📝 জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল
📝 বমি/বমিভাবের জন্য এন্টি-এমিটিক

📝 প্রচুর পানি পান করবেন দিনে ২-৩লিটার
📝  প্রসাব আটকে রাখবেন না, চাপ হলেই টয়লেটে যাবেন এবং ভালোমতো প্রসাব করবেন।

📝 প্রস্রাবের পর প্রচুর পানি ব্যবহার করবেন।
📝 স্থান পরিস্কার করবেন এবং মুছার জন্যে যে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করেন সেইটা সামনে থেকে পিছনের দিকে(মানে মুত্রস্থান/যোনীস্থান থেকে মলদ্বারের দিকে) যাবেন। পিছন থেকে সামনে আসা যাবেনা। কারন মলদ্বারে প্রচুর জীবানু থাকে যা মুত্রপথে/ যোনীপথে যেয়ে আবার ইনফেকশন করবে।
প্রয়োজন হলে আলাদা আলাদা টিস্যু দিয়ে মুত্রপথ ও মলদ্বার মুছবেন।

📝 সহবাসের আগে ও পরে প্রস্রাব করা।

📝 ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে এবং এই বিষয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে। কোনো যৌনরোগ/ সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করা।

📝 অন্তর্বাস একটানা অনেকক্ষন ব্যবহার না করে মাঝেমধ্যে চেন্জ করবেন।
📝 পরিস্কার কাপড় পরিধান ও ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।

📝 যেখানে সেখানে থেকে ঔষধ নিয়ে খাওয়া যাবেনা, ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করে ঔষধ খেতে হবে। এবং ঔষধের কোর্স কম্পলিট করতে হবে এবং উপদেশ/ নিয়মগুলো মেনে চলা।

♣ নোট

📋✒ বারবার ইনফেকশন হলে  urine c/s  করে যে এন্টিবায়োটিক সেনসেটিভ এবং প্রেগনেন্সিতে সেইফ সেইটা এডভাইস করা।

📋✒ অনেকসময় অনেকেই বলেন যে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না, ঝরে, এইসময় আমাদের করনীয় আসলেই কি প্রস্রাব ঝরছে নাকি লিকিং মেমব্রেন হচ্ছে এটা বুঝতে হবে। এরজন্য “Maternity Pad” ব্যবহার করতে বলবো। যদি প্যাড হলদেটে এবং গন্ধযুক্ত (ইউরিন) হয় তাহলে বুঝতে হবে এটা ইউরিন আর যদি সাদা বা ঘোলাটে হয় এবং কোনো গন্ধ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড।

✒📋 প্রেগনেন্সিতে প্রস্রাবে ইনফেকশনে যে এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়ঃ  Cefuroxime, Cefixime, Nitrofurantoin, Ceftriaxone etc etc.

✒📋 উপদেশগুলো ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।

Dr. Tania Hafiz
Z.H Sikder Women’s Medical College and Hospital

কারিতাস ঠিকানা প্রকল্প
মিরপুর, রুপনগর, ঢাকা-১২১৬

কারিতাস বাংলাদেশ

প্ল্যাটফর্ম স্টাফ রিপোর্টারঃ জামিল সিদ্দিকী

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শিশুবান্ধব সাজে সাজলো ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড

Fri Nov 1 , 2019
১ নভেম্বর ২০১৯: শিশুদের হাসপাতাল ভীতি দূর করতে রঙিন শিশুবান্ধব সাজে সাজলো ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে তাদের ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের দেয়াল রঞ্জিত করেন। তারা তাদের দেয়ালে আঁকা ছবিগুলোতে গাছপালা, পশুপাখি এবং বিভিন্ন রকম মাছের মাধ্যমে একটা শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন। তারা বিশ্বাস […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo