গবেষণায় “একুশে পদক ২০২১” পাচ্ছেন অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শুক্রবার

গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে একুশে পদক পাচ্ছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এর প্রধান এবং চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা।

ছবিঃ অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা

উল্লেখ্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ (একুশ) জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২১ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে যুগ্মসচিব অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একুশে পদক ২০২১ প্রদানের জন্য নির্বাচিতদের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতিক সময়ে গত বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর জিন রহস্য আবিষ্কার করে গোটা বিশ্বকে চমকে দেয় চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। আর এই জিন রহস্য আবিষ্কারের গবেষণায় মূল নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা এবং তাঁর কন্যা অণুজীববিজ্ঞাণী ড. সেঁজুতি সাহা- যিনি কিনা গত বছর বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর “পোলিও ট্রানজিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মনিটরিং” বোর্ডের বোর্ড সদস্য হিসেবে। দেশের শিশুদের সংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণায় ভূমিকা রাখায় ও সংক্রামক এসব রোগ হতে লক্ষ শিশুর প্রাণ রক্ষায় গত বছর ১৪ জানুুয়ারি বিলগেটস এর গেটস নোটেও অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা ও তাঁর কন্যা ড. সেঁজুতি সাহার নাম উঠে আসে।


নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, এন্টারিক ফিভার প্রভৃতি শিশুদের সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই সুপরিচিতি অর্জন করেন ড. সমীর কুমার সাহা। মূলত, উক্ত রোগগুলির প্রকৃতি, রোগ সংক্রমণকারী অণুজীব এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয় তাঁর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এসব রোগের প্রতিষেধক যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশসমূহে সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহে তা ছিল অনেকটা আকাশ কুসুম পরিকল্পনা। অধ্যাপক ড. সমীর তাঁর গবেষণার বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের সাহায্যে জনস্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশেও মেনিনজাইটিস ও নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক চালু হয়। বাঁচে লক্ষ লক্ষ শিশুর প্রাণ‌।

অন্যদিকে তাঁর কন্যা ড. সেঁজুতি সাহা ভূমিকা রেখেছেন বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগে শিশু মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে। ২০১৭ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা হুট করে বেড়ে যাওয়ায় তার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জেনেটিক ম্যাটারিয়াল এনালাইসিস এর মাধ্যমে সফলতা পান তিনি। তাঁর কাজের ফলাফল হিসেবে জানা যায় চিকুনগুনিয়া ভাইরাসই সেই বছর শিশুদের মেনিনজাইটিস সংক্রমণের মূল কারণ। তবে এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বরং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একই রকম রোগের সংক্রমণ সহজেই নির্ণয়ের জন্য স্বল্প খরচের একটি ডায়াগনস্টিক টুলকে সহজলভ্যও করেন ড. সেঁজুতি সাহা।

ছবিঃ কন্যা ড. সেঁজুতি সাহার সাথে অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা

ড. সমীর সাহা তাঁর অসামান্য গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজিতে আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও, আমেরিকান একাডেমি অফ মাইক্রোবায়োলজিতে ফেলোশিপে নির্বাচিত হন ড. সমীর কুমার সাহা। একই বছর তিনি মাইক্রোবায়োলজিতে ইউনেস্কো কার্লোস জে ফিনলে পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

ড. সমীর কুমার সাহা ১৯৫৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চন্দ্রকান্ত সাহা, মাতা দুলালী প্রভা সাহা। ডা. সমীর কুমার সাহা চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এছাড়া ১৯৮৯ সালে ভারতের বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. সমীর।

অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা ছাড়াও ২০২১ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন যারা তাঁরা হলেন-

ভাষা আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোতাহার হোসেন তালুকদার (মরণোত্তর), শামছুল হক (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর), শিল্পকলায় বেগম পাপিয়া সরোয়ার (সংগীত), রাইসুল ইসলাম আসাদ (অভিনয়), সালমা বেগম সুজাতা (অভিনয়), আহমেদ ইকবাল হায়দার (নাটক), সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী (চলচ্চিত্র), ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যয় (আবৃত্তি), পাভেল রমান (আলোকচিত্র)।

এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর)। এছাড়া সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী, গোলাম মুরশিদ এবং সমাজসেবায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান।

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢামেকের প্যাথলজী বিভাগের প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপকের মৃত্যু

Fri Feb 5 , 2021
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, শুক্রবার করোনা মহামারীতে শহীদদের সাথে যুক্ত হলেন আরো একজন চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন হিস্টোপ্যাথলজিস্ট ডা. নাজমুল হক (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র’জিউন)। আজ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, শুক্রবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কোভিড -১৯ আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo