“আমি কৃপণ হতে পারি, মানুষ কিন্তু কৃপণ না”,শেষ কর্মদিবসে ডাঃ আজিজুল কাহ্হার স্যার

আমর পথপ্রদর্শক, শিক্ষক অধ্যাপক ডাঃ আজিজুল কাহ্হার স্যার এর শেষ কর্মদিবস এর কথা হতে নেওয়া
(৩১ জানুয়ারি ২০১৭)

সব শেষে স্যার সবার সাথে বসলেন।” সব সময়তো আমি বলি, আজকে আপনারা বলেন”এক সময় স্যার নিজেই বলা শুরু করলেন-”
মায়ের ইচ্ছায় আমি ডাক্তার হই, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসিতে তিন মাস পড়েছিলাম। বায়োকেমিস্ট্রিতেও আমার ভালো নলেজ ছিলো, আমার তো এখনো মনে হয় অন্য কোথাও গেলে হয়তো আমি আরো বেশি কিছু করতে পারতাম। কিন্তু এই যে রিকশাওয়ালার বউ থেকে শুরু করে সচিব, মন্ত্রি, পুলিশের বড় কর্মকর্তা- সমাজের সব স্তরের মানুষ কে যে আমি কাছ থেকে দেখতে পারলাম,তাদেরকে জানতে পারলাম, তাদের সেবা দিতে পারলাম – এই সুযোগ আমি অন্য কোনও পেশায় পেতাম না।

একবার এক ভদ্রমহিলা ওনার নয় বছরের ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে আসলেন, মহিলা আমার রোগি। উনার ছেলে নাকি আমাকে দেখতে চাচ্ছিলো। ছেলেটা আমার দিকে তাকালো -মনে হলো সে বলতে চাইলো সে এখন নিশ্চিত তার মায়ের চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে। এরপর ভদ্রমহিলা কিংবা তার স্বামী যতবারই আমার কাছে এসেছেন -ছেলেটা সাথে আসতো। এটা আমার আজীবন মনে থাকবে।

সিনসিয়ারিটি, ডিটারমিনেশন, ইন্টেগ্রিটি, ডিভোশন- এই চারটা জিনিস থাকলে জীবনে যে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব।জীবনে একটা পর্যায়ে আসার পর তোমার সকল সিদ্ধান্তের দায়ভার তোমার।

আমার ব্যাচমেটদের অনেকেই এখন ইরানে। আমার ও সুযোগ হয়েছিল, চিঠিও এসেছিল। ওই রাতটা আমার নির্ঘুম কাটে। সারা রাত আমি চিন্তা করি। সকালের দিকে আমি চিঠিটা একটানে ছিঁড়ে ফেলি। না, আমি দেশে থাকবো।..

আমাকে যখন যেখানে পাঠানো হয়েছে আমি সেখানে গিয়েছি। দিনাজপুর পাঠিয়েছে, গিয়েছি। পাবনা পাঠিয়েছে, গিয়েছি । উপজেলায় গিয়েছি। বদলির আদেশ পরিবর্তনের কোনও চেষ্টা করি নাই। পুরো দেশটাই তো বাংলাদেশ।..

.জীবনে বড় কিছু হতে হলে অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। জীবন থেকে অনেক কিছুই বাদ দিতে হয়, দিতে হবে।সেটা মেনে নিতে হবে “..

আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, আমাদের অনেক কষ্ট করেই এতদূর আসতে হয়েছে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তো আর সবাই জন্মায় না। ….রাত দশটা, সাড়ে দশটা পর্যন্ত পড়ে বাসায় ফিরতাম, আমার কাছে রিকশা ভাড়াটাও থাকতো না। হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতাম।..

জীবনে চলার পথে ভুল হতেই পারে। কোনো ভুল হয়ে গেলে নিজেকে জিজ্ঞেস করবে, ভুল স্বীকার করবে, সেটা সংশোধন করবে। ভুল আকড়ে পরে থেকো না।

আমি কৃপণ হতে পারি, মানুষ কিন্তু কৃপণ না, মানুষ অনেক উদার। মানুষ যখন দেয় তখন হিসাব ছাড়াই দেয়।..

“স্যার মিনিট বিশেকের কথায় গোটা জীবনের গাইড লাইন দিয়ে দিলেন

লেখক ঃ ডা নেসার আহমেদ,চিটাগং মেদিকেল কলেজ

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

4 thoughts on ““আমি কৃপণ হতে পারি, মানুষ কিন্তু কৃপণ না”,শেষ কর্মদিবসে ডাঃ আজিজুল কাহ্হার স্যার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশঃ প্রশ্নপ্রণেতাদের চিহ্নিত করা হোক

Sat Feb 4 , 2017
ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্র রচয়িতাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ প্রশ্নপত্রের একটি অংশে ডাক্তারদের দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এতে একটি পেশার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক নেতারা। ইতিমধ্যে আপত্তি তুলেছে পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও চিকিৎসকদের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo