শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
এসএসসি পাশ করে করেছেন ডিপ্লোমা কোর্স। এরপর থেকে আরম্ভ করে প্রতারণা; নিজেই দেখেন রোগী, প্রেসক্রিপশন করে চিকিৎসা দেন সকল রোগের। এমনই ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল গারোবাজারে।

এসএসসি পাশ এই প্রতারকের নাম হান্নান। জানা গেছে, গত ছয়-সাত বছর ধরেই তিনি এমন প্রতারণা করে আসছেন।
সম্প্রতি তার প্রেসক্রিপশনে প্রাপ্ত নাম্বারে কথা হয় এই প্রতারকের সাথে। তিনি প্রেসক্রিপশন করতে পারেন কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তার প্রতারণার কথা স্বীকার করে নেন।
তিনি বলেন, “আমি যেহেতু ফার্মাসিস্ট, মানুষ আসে দেখি, টুকটাক কাটাছেঁড়ার ড্রেসিং করি, রোগীর একটু কাইটা গেছে ঐটা সেলাই করা, পাতলা পায়খানা নিয়ে আসলো বা জ্বর নিয়ে আসলো, দুই একটা ঔষধ বলে দেয়া,আসলে মুখে বললে রোগীরা মনে রাখতে পারে না!তাই সেই জিনিস টা একটু কাগজে লিখে দিই জাস্ট এই আর কি!”
‘নিজেকে ফার্মাসিস্ট পরিচয় দেয়ার জন্য কোন সনদ আছে কী-না’ – প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি হচ্ছি ফার্মাসিস্ট, আমি ডিপ্লোমা কোর্সও করছি। আমি রাঙ্গামাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ফুলবাড়িয়া ময়মনসিংহে চাকুরি করি ”
“বিএমডিসির আইন অমান্য করে চেম্বার করছেন কেনো?”– প্রশ্নের জবাবে প্রতারক বলেন “আমি তো বাহিরে কোথাও বসে এই কাজটা করতে পারিনা! বা খোলা মাঠে বসে এই কাজটা করতে পারি না!আমার চেম্বার তো আহামরি গ্লাস করে কোনো বড় চেম্বার করি এমন তো কিছু না! আপনি তো জিনিসটা বুঝতেছেন!”
আপনি তাহলে একজন ফার্মাসিস্ট হয়ে প্রেসক্রিপশন করে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন আবার ১০০ করে টাকাও নিচ্ছেন– এমন প্রতারণা করছেন কেন জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, “আসলে পরিচিত কিছু লোক আছে এরা আসছে , একটু কাটছে আমি পরিষ্কার করে দিছি বা একটু ক্ষত হইছে ঘা টা আমি পরিষ্কার করে দিছি তারা আমাকে ১০০ করে দিছে টাকা!”
একপর্যায়ে প্রতিবেদকের উপর ক্ষেপে গিয়ে প্রতারক বলেন, “এই বাজারে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে ডাক্তার না তারা নামের আগে ডাক্তার লেইখা এভেইলএবল প্রেসক্রিপশন করতেছে!এই বাজারেও দুই চার পাঁচ জন এমন আছে! এটা কিভাবে বলবেন বলেন? আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন একজন না পাঁচ ছয়জন পাবেন এই বাজারেই! আমি আইন জানি তাই ডাক্তার লিখি নাই, কিন্তু যারা লিখতেছে তারাও কিন্তু আইন জানে,আপনি যদি মনে করেন তারা আইন জানে না তাহলে এটা ভুল। আপনি সবার উপর ব্যবস্থা নেন।”

প্রতারক আরো বলেন, “আমার মতো এই বাজারে আরো চার পাঁচ জন আছে যারা জানে তাদের এই যোগ্যতা নাই! কিন্তু তারা প্যাড খুলে, বড় কাগজ করে, প্রেসক্রিপশন কইরা এভেইলএবল লিখতেছে।সে অন্যায় টা কি আমি করতেছি?!আমি যেটা করতেছি ‘ধরেন উনি যে আসছে উনি পায়ে ব্যথা পেয়ে আসছে, উনার একটা X- ray প্রয়োজন বা ব্যথার যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেটা আমি দিছি,আমি কি আহামরি বড় কোনো চিকিৎসা দিয়ে ফেলছি? এখন প্রাথমিক চিকিৎসা কি আমি দিতে পারি না?”
প্রতারকের প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদক “আপনি কোন ধরনের চিকিৎসা সেবাই দিতে পারেন না” এমন বললে প্রতারক হান্নান ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
টাঙাইলের সিভিল সার্জনের কাছে এ প্রতারকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
প্ল্যাটফর্ম/এমএ/এমইউএএস