লাইফ ইন লকডাউন, ডে ফিফটি নাইন

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ জুন ২০২০, শুক্রবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে। সন্ধ্যার পর শুধুই বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি ভিজে ভিজে বদলে যাওয়া নগরী দেখি। মানুষজন কম, গুটিকয়েক রিকশা। অল্পকিছু দোকানপাট খোলা। চাউল কেনার উছিলায় আমরা ঘুরে বেড়াই। টুপ করে আম পড়ে। কুড়িয়ে পাওয়া আম আমার বন্ধু রিকশাচালককে দিয়ে দেয়।

ছেলেদের প্রেম ভালোবাসা অদ্ভুত। বলা হয়- এ ম্যান’স লাভ ইজ দ্যা রিফ্লেকশন অফ হিজ ক্যারেক্টার। যদি সে ঝগড়ুটে হয়- পায়েপাড়া দিয়ে তর্ক করে ভালোবাসা প্রকাশ করবে। যদি সে আড্ডাবাজ হয় উদাসীনতা দিয়েই ভালোবাসবে। যদি সে মন খারাপের হয়- সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বাসবে। একবার আসবে তারপর হারিয়ে যাবে, তারপর আবার আসবে আবার হারাবে। যদি সে নরম সরম হয়, তুলোর মতো ভালোবাসবে। কোনো মেয়েকে প্রপোজ করার আগে ছেলের জানা উচিত সে কিরকম।

ম্যাসেঞ্জারে গল্পের ভীড় জমে। কতজনের ভেতরে যে কত কথা তৈরি হয়- ভাষা পায় না। অব্যক্ত কান্নারা চোখের জল খুঁজে বেড়ায়। ভুল মানুষের প্রেমে পড়ার চেয়ে সারাজীবন অপেক্ষা নিয়ে থাকা ভাল। অতটা অপেক্ষা যেখানে এন্টিবডি তৈরি হয় না। নইলে এন্টিবডি নিজের শরীরকেই ধ্বংসের অভিপ্রায়ে লেগে যায়।

আমরা এমন এক সময় পার করছি যখন প্রত্যেকদিন পরিচিত কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। কাল তিনজন ডাক্তার মারা গেলেন। নিজের পেশার কেউ মারা গেলে দূর থেকেও খুব আপন মনে হয়। মনে হয় আমিও তো থাকতে পারতাম ওখানে। অনেকেই লিখছেন বাবা মা কে নিয়ে। মৃত্যু জন্মের চেয়েও বেশি স্বাভাবিক। কিন্তু আমরাই হচ্ছি সে দুর্ভাগা প্রজন্ম- আমাদের বাবা মা আমাদের টেনে আনা বিষে মারা যাচ্ছেন। ভাগ্য ভাল আলাদা করে সে হিসেব হচ্ছে না!

গরিব দেশ, প্রণোদনা নিয়ে ভাবি না। এও জানি সময় পার হলে সবাই সব ভুলে যাবে। যতই যোদ্ধার তকমা দেওয়া হোক, অবসরের পর কেউ অউন করবে না। আমাদের ভাল থাকা বা মন্দ থাকা কারো হাতে নেই। হাসপাতালে যেতে হবে, রোগী দেখতে হবে, রোগী দেখতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হবে, মৃত্যু হতে পারে- সব স্বাভাবিক। এখন একটি ‘কনফেশন পেজ’ থাকলে ভাল হতো। কিছু কথা বলে যেতে পারতাম। পরিচয় হীন ভাবে। যেগুলো বলার সুযোগ হয়তো কখনো আসবে না। প্রত্যেকের ভিতরেই তো কিছু কথা জন্মে, কিছু ব্যর্থতা, কিছু অভিমান- বলে গেলেও শান্তি পাওয়া যায়। ডাক্তারদের এতো গ্রুপ এতো পেজ- এরকম গ্রুপ নেই কেন? কেউ কী ভাবে নি এর আগে!

আজকাল অনেক কথা বলি। সাইকোলজিক্যাল ট্রমার জন্য হতে পারে। (ডায়েরি লেখাটা ছাড়ছি না। কবে মরে যাই বা মেরে ফেলি!! শুধু নাম খানা সরিয়ে ফেললাম।) কোনো বন্ধুর হেরে যাওয়া গল্প শুনে যখন আপনি বলবেন ‘তুই কি করে এ ভুল করলি?’ আপনি তার দুঃখকে পাবলিক করে দিলেন। আর যখন বলবেন ‘সবাই চুতিয়া, তুই নস বলে ফল পেলি’। আপনি দুঃখটি শেয়ার করলেন। সে তখনো পরাজিত কিন্তু প্রাইভেটলি। সবার জীবনে এমন একজন বন্ধু দরকার- যে জাজ করবে না, চুপচাপ শুনবে, তারপর ভুলে যাবে। সে এতো ভেতরে যে পুরো ছবিটা দেখছে, আবার এতো বাইরে যে ছবির সব ফ্রেম থেকে বাদ পড়ছে! এমন তো চাইলেই পাওয়া যায় না। তাই ফেসবুক গ্রুপ চাইছি।

মানুষের আবিস্কারে সবচেয়ে বাজে আবিস্কার ঘড়ি। ভাল সময় হোক বা খারাপ সময়- একই গতিতে ছুটে। ষাট সেকেন্ডে এক মিনিট, ষাট মিনিটে এক ঘন্টা, চব্বিশ ঘন্টায় এক দিন। অথচ যার ভাল সময় তার অর্ধেক সময়ে এক একক হয়। আর যার খারাপ সময় তার দ্বিগুণ সময়ে এক একক। কারো বারো ঘন্টায় এক দিন, কারো আটচল্লিশ ঘন্টায় এক দিন। একদিনে দুইজনের বয়স কী সমান বাড়লো? আমরা বুড়ো হয়ে গেছি সে অনেক আগেই। অভিজ্ঞতা দিয়ে, স্থবিরতা দিয়ে। শত শত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে আসার পর প্রত্যেক রোগী আমাদের জন্য পরীক্ষা। প্রত্যেক ভুল প্রত্যেক মিস আমাদের জন্য অনুশোচনা। আমরা আমাদের ব্যর্থতাকে কতটা ঘৃণা করি সে হিসাব শুধু হাসপাতালের পাশে সিগ্রেটের দোকানগুলো জানে!

রাতের অন্ধকার আকাশ ততক্ষণই আকাশ যতক্ষণ সে মাথার উপর ঝুলে থাকে। যখন সে নেমে চোখের উপর ভেঙ্গে পড়ে তখন সে শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে পরিপূর্ণতা খুঁজে না, শূন্যতা খুঁজে। আমাদের প্রত্যেক প্রেমের গল্পই ভেঙ্গে পড়া একটি করে ‘রাতের কালো আকাশ’। সবসময়ই অপ্রকাশিত। আমৃত্যু।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

Prof. Dr. Md Shamsuzzaman has been appointed as the new Principal of RCMC

Fri Jun 5 , 2020
Platform news, 5th June, 2020, Friday Yesterday, 04 Jun, 2020 Prof Dr. Md Shamsuzzaman joined as the new Principal of Rangpur Community Medical College, Rangpur. He was already in charge of the Department of Pathology of Rangpur Community Medical College. He had also played an important role as the former […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo