লাইফ ইন লকডাউন, ডে টু হান্ড্রেড

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ নভেম্বর ২০২০, রবিবার

ডা. শুভদীপ চন্দ

সভাপতি বাবু একবার ইতস্তত করলেন জুতা পায়ে ঢুকবেন কিনা। মা-ই তো নেই, মা কে নিয়ে গেছে। সারা শহর ঘুরে নদীতে বিসর্জন দিবে। আগে তিনিও যেতেন, এখন আর পারেন না। ছেলে ছোকরাদের সাথে ঠিক পেরে উঠেন না। জুতা নিয়েই ঢুকলেন। মা ছাড়া মায়ের আর ঘর কি? সব ঘরই সমান।

প্রতি বছরই মা আসেন, মা চলে যান। গত ত্রিশ বছর ধরে তিনি এ মণ্ডপের সভাপতি। আর সবকিছুতে অভ্যস্থ হলেও, এ খারাপ লাগায় কেন জানি অভ্যস্থ হতে পারেন নি। বিসর্জনের বিকেলে এতো খারাপ লাগে যেন প্রিয়জন হারানোর কষ্ট। হঠাৎ সবকিছু শেষ। ভীড়- বাট্টা, হাঁক- ডাক, পূজা- আর্চা, ঢাকের বাড়ি, এর অভিযোগ ওর অভিযোগ- সব শেষ। এক বছরের প্রতীক্ষা ফুস করে শেষ। কেমন জানি শূন্যতা, দম বন্ধ লাগে। উনার আগেই অর্থ সচিব চলে এসেছেন। খরচপাতির হিসেব কষছেন। তাদের জন্য টেবিল- চেয়ার দেয়া হয়েছে। গতকালও এ জায়গায় তিল দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। আজ ফাঁকা। ডেকোরেটরের লোক চেয়ার, টেবিল, জলের ড্রাম নিয়ে গেছে। দূরে গেট খোলার কাজ চলছে। লাইটিং এর লোকেরা এখনো আসে নি। এসে পড়বে খন। পুরোহিত মশায় শূন্য বেদিতে ঘুমাচ্ছেন। মার বিদায়ে তার উপরের ঝড়ও শেষ হলো। বড্ড চাপ গেছে এবার। সে মহালয়া থেকে শুরু।

সভাপতি মশায় টের পেলেন তার হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েছে। পাঁচ ছয়দিন ধরে সুগারটা কন্ট্রোলে নেই। বাড়ির সবাই না করছিল এখন এ সন্ধ্যায় না বেড়োতে। কিন্তু তিনি প্রায় জোর করেই বের হয়েছেন। মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ছে। জানেন না সামনের পুজোয় আবার মায়ের দেখা পাবেন কিনা। শরীর আজকাল যখন তখন খারাপ হয়। প্রেশারের ঠিক নেই, সুগারের ঠিক নেই, প্রস্বাবও ঠিক মতো হয় না। আবার এক বছর প্রতীক্ষা। সভাপতি মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। সিদুঁরে মেঝেটা মাখামাখি হয়ে আছে। বাড়ির ছোটদের বই এক পাশে রাখা। ফুল ও বেল পাতা এক কোনায় স্তুপ হয়ে আছে। কর্কশিটের উপর ভগবান শিবের ছবি অনাদরে ঝুলছে। লাইটিং এর লোক এখনো এসে সাড়েনি। মরিচ বাতিগুলো জ্বলছে নিভছে। সবই আছে, শুধু যার জন্য সব সে মা নেই। টেবিলের উপর রাখা রেজিস্টার খাতা। উপরে লাল কালিতে লেখা ‘অভিযোগ বহি’। ‘দাদা, এবার অভিযোগ গতবারের চেয়ে বেশি পড়েছে’- তাকে দেখে অর্থ সচিব বললেন।

তিনি চেয়ারে বসে দূরের আলো দেখতে লাগলেন। হলুদ- লাল- সবুজ মরিচ বাতি জ্বলছে নিভছে। মাঝের কয়েকটি বাতি নষ্ট। জ্বলছে না। ‘আশ্চর্য, এ কয়দিন কারো চোখে পড়ে নি? এগুলোর কথা বলতে হবে। পয়সা তো কম নিবে না!’ গত পাঁচদিনের কথা খুব মনে পড়ছে। বোধন, পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ, আরতি। আবার এক বছর। মা কী দেখা দিবেন? না কী এবারই শেষ বিদায়? ভাল করে শেষ প্রণামও যে করা হয় নি। ‘কী যে বলছিলে অভিযোগ নিয়ে’ অস্ফুট স্বরে সভাপতি বললেন ”সারাজীবন শুধু এ এক দুই নষ্ট বাতিই দেখে গেলাম, চারপাশে ওই এতো এতো আলো- দেখলাম না!” সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে। তুলসী তলার সে প্রাচীন সন্ধ্যা।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কুমিল্লায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আট হাজার

Mon Nov 2 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০২ নভেম্বর ২০২০, সোমবার গতকাল রবিবার (০১ নভেম্বর, ২০২০) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, এই পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা ভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার নয়শত ৭২ জন। রবিবার নতুন ৫৭ জন করোনায় আক্রান্তের তথ্য দেয়া হয় এই দফতর থেকে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, কুমিল্লাতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo