লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড থার্টি ফাইভ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

‘রেইন বিফোর সেভেন, স্টপস বিফোর এলিভেন’। ইংরেজি এ কথাটি হয়তো ব্রিটিশ মুলুকের জন্য প্রযোজ্য, বঙ্গ দেশের জন্য নয়। এখানে এতো ভদ্রতা রক্ষা করে বৃষ্টি হয় না। আকাশের যখন ইচ্ছে হয়, যতক্ষণ ইচ্ছে হয় বৃষ্টি পড়ে। বর্ষা বাঙলার শ্রেষ্ঠ ঋতু। অন্যসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রঙ-রূপ-গন্ধ আছে। বৃষ্টির সাথে বোনাস হিসেবে আছে শব্দ। সরকার বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন দিয়েছে, কাম কাজ নেই। ঘরে বসেবসে বৃষ্টি দেখি।

ছবি – প্রতীকী

এক প্রতিবেশী আছে, পোষা কুকুরের সাথে এমনভাবে কথা বলে যেন কোনো মানবী। শুধু মানবীই নয়, অন্তর্যামী। সবকিছুই আগে তার সাথে আলোচনা করে নেয়। গান্ধীজি বলেছিলেন- ‘দি গ্রেটনেস অফ এ ন্যাশন এন্ড ইটস মোর‍্যাল প্রগ্রেস ক্যান বি জাজড বাই দ্যা ওয়ে ইটস এনিমেলস আর ট্রিটেড’। মেয়েটি সম্ভবত কথাটিকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। আমাদের নিরানব্বই শতাংশ কুকুরের ভাগ্য নিয়ে এক শতাংশ কুকুর জন্মায়। তবে দেখতে ভাল লাগে। কুকুরের সৌভাগ্য দেখি।

আমার এক ক্লাসফ্রেন্ড ছিল- পড়াশোনায় তুখোড়। বিয়ে হয়ে গেল, আর পড়লো না। কিছুদিন এখানে সেখানে ডিউটি করলো, তারপর কিছু সংসারের চাপ আর কিছু পিছিয়ে পড়ার দুঃখে সেও বাদ দিল। আমরা অবশ্য ধারণা করি তার শ্বশুরবাড়ি চায় না সে ডাক্তারির মতো বাজারি জব করুক। এখন তিনদিন আগে তার শ্বশুরের জন্য আইসিইউ খুঁজছিল। ‘বিপদ্বিপদং সম্পৎ সম্পদং অনুবধ্যাতি’- বিপদ বিপদকে, সম্পদ সম্পদকে অনুধাবন করে। কাল থেকে তার স্বামীরও জ্বর। ফোন দেয় লাইন অফ ট্রিটমেন্ট নিয়ে। ভাবি কয়লার কালি মহামূল্যবান রত্নকেও ঢেকে দেয়, একসময় সে রত্নও নিজেকে চিনতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করলো। কিছু ছেলে আছে প্রচণ্ড অভিমানী, কিন্তু বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ। স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসায় একেবারে পূর্ণ। এদের সাথে প্রেম করা শক্ত। না যায় দূরে সরানো, না যায় দূরে সরা। তারা কেন জানি বুঝে না- ঈশ্বর তাদের অর্জন করার মতো বড় ভাগ্য দিয়ে সবাইকে পাঠান না। প্রত্যেক প্রেমেই একবার অন্তত নিজের মনে ধিক্কার আসে- ‘মূর্খতাবশত কেন উহার ভেতর প্রণয়ভাব সঞ্চার করিলাম?’ এদের জন্যে তা বারবার আসে। শেষে এক গভীর ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। কলিকালে সত্যযুগের প্রেম আশা করা অন্যায় ও পাপ।

সে প্রসঙ্গ বাদ থাকুক। প্রেমের নামে পরিচ্ছন্ন পুস্কুরিনী ভেবে পঁচা পুকুরে ডুব দেওয়া পাত্র পাত্রীর অভ্যাস! কী লিখতে কী লিখছি! লিখতে বসেছিলাম করোনাকালীন ডায়েরি। ভারতে এক স্টাডি বলছে প্রায় ২৫% শতাংশ ভারতীয় সেরোপজিটিভ হয়ে আছেন। মানে তাদের মধ্যে করোনার এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। ৬০-৭০% লাগবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে। তারা বলছেন মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তি এটি অর্জন করে ফেলেছে। গত দুই মাসে সেখানে আক্রান্ত সংখ্যা কোনোদিন ডাবল ডিজিটে যায় নি। কোনো দেশের ৪৫% মানুষ সেরোপজিটিভ হলেই গ্রাফকার্ভ সমতল হয়ে যায়। আমাদের দেশেও এরকম সেরো স্টাডি করা উচিত। আমরা হয়তো ৩০-৪০% লোক এমনিই এ ইমিইউনিটি পেয়ে বসে আছি।

ভবিষ্যতে ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয়তো আসলেই পড়বে না। তবে যদি ঔষধ তৈরি হয় সে বিক্রি হবেই। বিভিন্ন স্টাডি ফাডি দিয়ে তার ভিত শক্ত করা হবে। এ পৃথিবীতে ‘প্রয়োজন’ বেশিরভাগ সময় তৈরি করা হয়। এটি পুঁজিবাদী বিশ্ব।

.

এরমাঝে গতকাল চশমা ভেঙ্গে ফেললাম। যারা বড়লোক ও যারা ফ্যাশন সচেতন তাদের দুই তিনটি চশমা থাকে। আমার একটি চশমা। সে চশমা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখি না। কিছুক্ষণ চোখে না থাকলে প্রচণ্ড মাথাব্যথাও করে।

একদিন ঘুম থেকে উঠে চশমা পাই না। মাকে বললাম, মা সব কাজ বাদ দিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। মা-ও পায় না। বিছানা, বালিশ, টেবিল। আমি এককোনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ধৃতরাষ্ট্রের মতো। আমি দেখতে পারি কিন্তু সব ঝাপসা দেখায়। সেদিন ভেবেছিলাম আরেকটি চশমা তৈরি করে রাখবো। পরে আর তা করা হয় নি। আজ এতোদিন পর আবার সেদিনের কথা মনে পড়ছে।

একজন অন্ধমানুষ অতীত দিয়ে বর্তমান দেখেন। বর্ণগুলো কীপ্যাডের কোথায় কোনটি আছে আমি জানি। অন্ধলোকদের খুব বিপদ আসলে। একজন সাহায্যকারী লাগে সবকিছুতেই।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

Mon Sep 21 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার আশঙ্কা আর সেশন জটের ভয় নিয়ে পার করছে এমবিবিএস ও বিডিএস এ অধ্যয়নরত মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা তাদের হতাশার কথা প্রকাশ করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তেমনই একটি পোস্ট শেয়ার করেছে এনাম মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী শোয়েব আহমেদ। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo