লাইফ ইন লকডাউন, ডে টুয়েন্টি থ্রি

৩০ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

ইরফান খানের চোখ অস্থিরভাবে পায়চারি করতো, যেন কিছু খুঁজছে। আজ কিছুক্ষণের জন্য কোভিড আক্রান্ত এ পৃথিবীর সব দুশ্চিন্তা থেমে ছিল। টাইমলাইন এ মানুষটির ছবি ও তাকে হারানোর যন্ত্রণায় পূর্ণ হয়েছিল। কেন মাত্র তেপ্পান্ন বছর বাঁচলেন? কেন আরেকটু বেশি বাঁচলেন না? আমরা আমাদের সময়ের এক রূপালি হিরোকে হারালাম নীরবে। গত ক’দিনে আমরা আরো দুইজন হিরোকে হারিয়েছি। অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও ড. সা’দত হুসাইন। এ লোকগুলো আমাদের সময়কে অনেকখানি প্রভাবিত করেছিলেন।

কোভিড উনিশ বাস্তবে ঠিক উল্টো কাজ করছে। ঢেকে রাখছে কম উন্মোচন করছে বেশি। সাধারণের চোখে ডাক্তার, ডাক্তারের চোখে রোগী, কর্তৃপক্ষের চোখে কর্মচারী, কর্মচারীর চোখে মালিক, রাষ্ট্রের চোখে জনগণ, জনগণের চোখে সরকার- সব উন্মোচন করে দিচ্ছে। সবাই তার তার বিষদাঁত করে দিচ্ছে। একসাথে মিলেমিশে যে বাঁচা- সেখানে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কম ছিল, স্বার্থটাই বেশি ছিল- তা দেখিয়ে দিচ্ছে।

মহাভারতের যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের জয় হলেও আমরা সবাই দুর্যোধনের বংশধর। দুর্যোধন বলেছিলেন- ‘ধর্ম কি আমি জানি, কিন্তু তাতে আমার প্রবৃত্তি নেই। অধর্ম কি, তাও জানি, তবে তাতেও আমার নিবৃত্তি নেই’। নারায়ণগঞ্জে ডাক্তারের বাড়িতে যারা ঢিল মারলো- তারা কী জানে না তারা অন্যায় করছে? যে লোক এন 95 মাস্কের বাস্কে সাধারণ মাস্ক ঢুকিয়ে দিলো- তিনি কী জানতেন না? সারাদিন রোযা রেখে যে ব্যবসায়ী ইফতারে ভেজাল মেশাচ্ছে- সে কী জানে না?

আজ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। অভিযোগ বেড়েছে। অনেকেই পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন, পারছেন না। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং এখন সোশ্যাল এভয়েডিং এর রূপ ধারণ করছে। একদিকে দুশ্চিন্তা গ্রস্থ সমাজ, অন্যদিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন গোঁয়ার জনগোষ্ঠী। বিবেচনাবোধ নিয়ে কাজ করছেন না কেউই। এদিকে লকডাউন আর কতদিন থাকবে, থাকবে না উঠে যাবে- ধারণা নেই কারো। সবচেয়ে প্রচলিত মত হলো পাঁচ তারিখ থেকে লকডাউন উঠে যাচ্ছে।

আজ হাসপাতালে এক সাপে কাঁটা রোগী এসেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার করা হয়েছে। রোগীর লোক অনেক গালাগাল করলো। হুমকি ধামকি দিলো। বাঙলা ভাষায় অকথ্যভাষার স্টক যে কত সমৃদ্ধ বুঝতে পারলাম। এটি স্পষ্ট- গরিব বা গরিবানা সম্পর্কে আমাদের এক মুগ্ধতা আছে, রোমান্টিসিজম আছে। ততক্ষণ- যতক্ষণ সেটি দূর থেকে দেখা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে গরিবী এক চয়েজ। অপশিক্ষা, কর্মে অনীহা, ও বুদ্ধিহীনতার যোগফল। কেউ কারো দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ি নয়। গ্রাম আমাকে নিত্যনতুন অনেককিছু আবিষ্কার করাচ্ছে। আগে চশমাটি ছিল অন্যের, এখন চোখ জোড়া নিজের।

প্রেম ভালোবাসার বাইরেও এক জগত আছে। কোনো রাস্তা দিয়ে কেউ হাঁটতে না চাইলে সে রাস্তা মিথ্যে হয়ে যায় না। আমাদের অনেক কিছুই আমরা বেছে নিই নি। তবে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠি। অভ্যাসই চলতে চলতে একসময় ‘শান্তি’ হয়ে উঠে। যে নিজের একাকীত্ব উপভোগ করতে থাকে, তাকে সঙ্গী দেওয়া তাকে কারাদেশ দেয়ারই সমতুল্য।

নিরুপদ্রব জীবন, সাথে রমযান মাসের বিধিনিষেধ- সে শান্তি দিচ্ছে। বুঝতে পারছি না- কোথায় জানি এ লকডাউনের প্রতি একধরনের ভালোবাসা তৈরি হয়ে যাচ্ছে! হুট করে উঠে গেলে তখন ভাল নাও লাগতে পারে! মানুষের মন মস্তিষ্কের যুক্তিবিদ্যাকে ফলো করে না।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

নারায়ণগঞ্জে চালু হল প্রথম বেসরকারি পিসিআর টেস্ট ল্যাব

Thu Apr 30 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজঃ ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ২০২০ গতকাল (২৯শে এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেশের প্রথম বেসরকারি করোনাভাইরাস পিসিআর টেস্ট ল্যাব উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক এমপি। আজ বুধবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপগঞ্জে এই ল্যাব উদ্বোধন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী” গোলাম দস্তগীর গাজীর নিজস্ব অর্থায়নে ও উদ্যোগে রূপগঞ্জ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo