রোগীর সাথে কম মানুষ থাকতে বলায় নারী চিকিৎসককে ধর্ষন ও ছুড়ি দেখিয়ে হত্যার হুমকি

রোগীর সুবিধার্থে কম মানুষ থাকতে বলায় নারী চিকিৎসককে ছুড়ি দেখিয়ে হত্যা এবং ধর্ষনের হুমকি

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগের এক নেতার হাতে হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দায়িত্বরত নারী চিকিৎসক। সাথে লাঞ্চিত হয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরী ও লিফটম্যানও।

ডা: নাজিফা আনজুম নিশাত প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক গ্রুপ এবং নিজ টাইমলাইনে এই ঘটনা প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে চিকিৎসক, সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যানের এমন লাঞ্চনার ঘটনা ঘটে।

হুমকি দেয়া ছাত্র লীগ পরিচয় দেয়া নেতা সরোয়ার হোসেন, ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

জানা গেছে- বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী তার ১৪/১৫ জন সহকর্মীসহ এপেন্ডিসাইটিসের এক রোগীকে নিয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসপাতালে প্রবেশের সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যানকেও লাঞ্চিত করেন তারা। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এপেন্ডিসাইটিসের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দায়িত্বরত মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে রোগীকে সিনিয়র চিকিৎসক দেখবেন বলে জানান। এ সময় সারোয়ার চৌধুরী নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পরিচয় দিয়ে তিনিসহ সবাই ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে উদ্যত আচরণ ও গালিগালাজ করেন। এতে ভয়ে লজ্জায় কেঁদে ফেলেন ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক। ঘটনার একপর্যায়ে সারোয়ার চৌধুরী ছুরি নিয়েও ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধাওয়া করেন। পরে হাসপাতালে দায়িত্বরতদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

নাফিজা আনজুম নিশাত জানান, ইউরোলজি বিভাগের রোগী আসলে, সেখানে গিয়ে দেখেন ১৫-১৬ জন ছেলে আছে। পেশেন্ট এর হিস্ট্রি নিতে নিতে খুব বিনয়ের সাথে বললাম, আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। একজন বললেন, আমাদের সামনেই ট্রিটমেন্ট দেন। আমি বললাম, পেশেন্ট কে এক্সপোজ করতে হবে। আর হসপিটালের তো একটা প্রটোকল আছে। তারা বললেন তারা সবাই থাকবেন এবং সবার সামনেই আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তারপর এদের মধ্যে একজন এর অনুরোধে বাকিরা বেরিয়ে গেলেন। তিনজন দাড়িয়ে থাকলেন। পেশেন্ট কে এক্সামিন করতে করতে আবার মানুষ ঢোকা শুরু করলো।

আমি তখন বললাম, “দেখুন আপনাদের আমি বারবার বলেছি আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। ” যথেষ্ট বিনয়ের সাথে। তখন এদের মধ্যে সরোয়ার নামের একজন বললো, “তোমার এমডিকে আমি কানধরে এনে দাড় করাবো। কর ট্রিটমেন্ট”। আমি তখন বললাম , কি বললেন আপনি? সে বললো, (আগুল উচিয়ে) “কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও”। আমি বললাম, “দেখেন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির জন্য যে ট্রিটমেন্ট , আপনার পেশেন্টের জন্যও একই ট্রিটমেন্ট। সবাইকে আমরা একই ভাবে চিকিৎসা দেই। এবং সবার জন্য একই নিয়ম। সুতরাং আপনাদের বের হতে হবে। “। এরমধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে CA, IMO রুমে গিয়ে ভাইয়া, আপুদের ঘটনা জানাই। তারপর সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে ,” তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো। **, ***,**** ,বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো। আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো. ..” আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর সি এ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে।”

এখানেই শেষ নয়, ঘটনার পর হাসপাতালের দুজন চিকিৎসককে মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।

খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন।

এ ব্যপারে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন ‘এখানে চিকিৎসকদের সাথে কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। আমার বন্ধুর শরীর বেশি খারাপ থাকার কারণে আমরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। যা ঠিক হয়নি। তবে এ ভুলবোঝাবুঝির সমাধান হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারী। নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় সারোয়ার চৌধুরীর একক আধিপত্য বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে এসে কর্মবিরতি পালন করেছেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তারা কাজে যোগ দেন।

উক্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এবং ঘটনার ভুক্তভোগী ডা: নাজিফা আনজুম নিশাত এর প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক গ্রুপের পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল।

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের আজকে দুপুরের ঘটনা। ইউরোলজির এক প্যাশেন্ট আসলো। ডিউটি ডাক্তার এর অনুরোধে আমি গেলাম পেশেন্ট রিসিভ করতে। কারণ আমার এডমিশন ছিল। গিয়ে দেখি প্রায় ১৫/১৬ জন ছেলে সাথে আছে। পেশেন্ট এর হিস্ট্রি নিতে নিতে খুব বিনয়ের সাথে বললাম, আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। একজন বললেন, আমাদের সামনেই ট্রিটমেন্ট দেন। আমি বললাম, পেশেন্ট কে এক্সপোজ করতে হবে। আর হসপিটালের তো একটা প্রটোকল আছে। তারা বললেন তারা সবাই থাকবেন এবং সবার সামনেই আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। তারপর এদের মধ্যে একজন এর অনুরোধে বাকিরা বেরিয়ে গেলেন। তিনজন দাড়িয়ে থাকলেন। পেশেন্ট কে এক্সামিন করতে করতে আবার মানুষ ঢোকা শুরু করলো। আমি তখন বললাম, “দেখুন আপনাদের আমি বারবার বলেছি আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান। ” যথেষ্ট বিনয়ের সাথে। তখন এদের মধ্যে সরোয়ার নামের একজন বললো, “তোমার এমডিকে আমি কানধরে এনে দাড় করাবো। কর ট্রিটমেন্ট”। আমি তখন বললাম , কি বললেন আপনি? সে বললো, (আগুল উচিয়ে) “কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও”। আমি বললাম, “দেখেন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির জন্য যে ট্রিটমেন্ট , আপনার পেশেন্টের জন্যও একই ট্রিটমেন্ট। সবাইকে আমরা একই ভাবে চিকিৎসা দেই। এবং সবার জন্য একই নিয়ম। সুতরাং আপনাদের বের হতে হবে। “। এরমধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে CA, IMO রুমে গিয়ে ভাইয়া, আপুদের ঘটনা জানাই। তারপর সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে ,” তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো। **, ***,**** ,বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো। আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো. ..” আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর সি এ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে। তার গালাগালির ভিডিও ও আছে। এই হল একজন ডিউটি ডক্টর এর নিরাপত্তার অবস্থা। আমরাও রোজা রাখি। আমাদেরও ক্লান্তি হয়, ক্ষুধা লাগে। কিন্তু পেশেন্টের প্রতি এসবের কোন আঁচ পরতে দেইনা। এত ঘটনার মধ্যেও সেই পেশেন্টের কাগজপত্র শক্ত করে আমার হাতে ধরা ছিল। তার ট্রিটমেন্ট ও দেয়া হয়েছে। যদিও তারা পরে DORB নিয়ে চলে যায়। কোথায় আমাদের নিরাপত্তা? রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে আমরা কতকাল জিম্মি থাকব???
ঘটনার ভিডিওঃ

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

৩৯তম বিসিএস জয়েনিং এবং কিছু প্রয়োজনীয় কথা।

Sat May 11 , 2019
গত কদিনে দেশে নারী চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু অনভিপ্রেত ইডেন্ট আমাকে ভাবিয়েছে। কিছু বিষয় সাধারণ ভাবে আলোচনা করবার মতো না। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করতে হচ্ছে। আমি সদ্য ৩৯ তম বিসিএস পাস করা নবীন সরকারি চিকিৎসকদের কথা বলছি। আমি এই সকল চিকিৎসক যে সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করত, […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo