মেয়েদের বিয়ে,মাতৃত্ত্ব ও ক্যারিয়ার….

আজ এক ভদ্রলোক এলেন চিকিৎসা নিতে। স্ত্রীকে আনেননি। কারন সে এজোস্পার্মিক। মজার ব্যাপার হোল তার দু’টো মেয়ে আছে যথাক্রমে ক্লাশ ফোর ও সেভেন এ পড়ে। স্ত্রীর বয়স ৪০। ইতোপূর্বে তিনটি এবরশনও হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম আবার বাচ্চা কিসের জন্য? উত্তরে জানাল তার আরও বাচ্চা লাগবে। ঠিক আছে। টেস্ট টিউব করতে হবে, খরচ ৪ লক্ষ টাকা, কোন নিশ্চয়তা নেই। উত্তর, অত টাকা কই পাব? তাহলে আবার যে বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন বাচ্চাকে খাওয়াবেন কি? আল্লাহ্‌ খাওয়াবে। তাইতো। সবইতো আল্লাহ্‌ করবেন। বাচ্চাও উনি দেবেন। এখানে কেন? আচ্ছা বলেন দু’টো মেয়ে থাকতে বাচ্চা চাচ্ছেন কেন? উত্তর, মেয়ের আর কি দাম!!

বলে কি এই লোক? জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কার কাছে এসেছেন? আপনার দেশ চালায় কে? দুই মেয়ের একজনকে গাইনোকলজীস্ট বানাবেন আর একজনকে প্রধান মন্ত্রী বানাবেন। তখন দেখিয়েনতো দাম কারে কয়! হা হয়ে তাকিয়ে রইল। শেষ প্রশ্ন, তাহলে কি আপনার কাছে আর আসবনা? না আমার কাছেও আসবেন না, অন্য কারো কাছেও যাবেন না।

এজোস্পার্মিক না হলে এই লোক নির্ঘাত আর একটি বিয়ে করত।

শুধু স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিতদেরই এই প্রবনতা নয়। শিক্ষিত সমাজেও মেয়েদেরকে কম মূল্যায়ন করার প্রবনতা ঢের আছে। কেন এই বৈষম্য? এই বৈষম্য থেমে নেই বিত্তশালী কিংবা উচ্চশিক্ষিতদের মাঝেও। তাই সারভাইভাল ফর দি ফিটেস্ট– এর জন্য মেয়েদের ক্যারিয়ার একান্ত বাঞ্চনীয়। কিন্তু সেই ক্যারিয়ার হতে হবে প্ল্যানড।

মাতৃত্ত্বও একটি অন্যতম ক্যারিয়ার। খেয়াল রাখতে হবে যেন পেশাগত ক্যারিয়ার গঠন করতে গিয়ে মাতৃত্ত্বের
ক্যারিয়ারে কেউ পিছিয়ে না পরে। তাহলে কি করা উচিত? ২৫ বছরের মধ্যে বিয়ে। যারা ডাক্তারী না পড়ে তাদের আরও আগেই হতে পারে। অর্থাৎ লেখাপড়া শেষ করার সাথে সাথেই বিয়ে করা উচিত। বিয়ের পরে টার্গেট থাকতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে দু’টো বাচ্চা নেবার। তা ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক।

তারপরে কত পরীক্ষা দিবে? কি কি পরীক্ষা দিবে? কত উপরে উঠবে? উঠতে থাক। কারন এ উঠার পথ কখনও বন্ধ হবে না। কিন্তু মা হবার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কিভাবে বন্ধ হবে?

সবমেয়েদের ডিম্বানুর পরিমান একই সমান থাকে না। গর্ভে থাকাকালীন ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহে এর পরিমান ৭০ হাজার থেকে ৭ লাখ পর্যন্ত থাকতে পারে। যাই থাকুক প্রতিনিয়ত নিজে নিজেই নষ্ট হয়ে যাবার ফলে ৩০ বছর বয়সে মাত্র ১২ শতাংশ টিকে থাকে। আর ৪০ বছর বয়সে তা মাত্র ৩ শতাংশে পৌঁছায়। সুতরাং যার ৭০০০০ দিয়ে শুরু তার অতি অল্প সময়েই ডিম্বানু শেষ হয়ে যাবে। এর সাথে যদি এন্ডোমেট্রিয়োসিস, সিস্ট অপারেশন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির অপারেশন, পেলভিক ইনফেকশন ইত্যাদি থাকে তাহলে আরও কমে যায়। ফলে অনেকেরই অল্প বয়সে ডিম্বানু শেষ হয়ে যায়।

তাই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য দেরীতে বিয়ে নয়, বাচ্চা নেয়া রহিত নয়। কে জানে কার কবে ডিম্বানু শেষ হয়ে যায়?

দ্রষ্টব্য: উদ্দেশ্য ভয় দেখানো নয়, তথ্য দিয়ে সচেতন করা।

উল্লেখ্য: এখানে এজোস্পার্মিয়া সেকেন্ডারী। হয় Y সেগমেন্ট ডিলিশন অথবা ভাস ডিফারেন্স ব্লক। ঐ রিজিয়নে কোন সার্জারীর কারনেও হতে পারে।

লেখক :
রাশিদা বেগম
শে, বা, চি, ম বরিশাল, ৮ম ব্যাচ।

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার :
নূর ই আফসানা
মুগদা মেডিকেল কলেজ
সেশন :২০১৫-১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

নিরাপদ সড়কের দাবীতে সারাদেশে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলো মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা

Thu Aug 2 , 2018
নিরাপদ সড়কের দাবীতে সারাদেশে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। Share on FacebookTweetFollow us

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo