বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভোগান্তি নিরসনে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর অভিমত

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬শে জুলাই, ২০২০, রবিবার

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাস দুর্যোগে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সকলের ভোগান্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন,

“করোনা সংকটের সময় বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদেরকে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে। যেখানে ছাঁটাই করা হয়নি, সেখানে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটি দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না। এটি একটি অমানবিক পদক্ষেপ এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকদের উচিৎ এই অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়া তাদের নৈতিক এবং আইনগত দায়িত্ব।”

তিনি বলেন,

“বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় তীব্র সংকট তৈরি হয়। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল সাধারণ চিকিৎসা এবং করোনা চিকিৎসা দুটোই বন্ধ করে দেয়। সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণে আস্তে আস্তে বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। কিন্তু প্রথম একমাস অধিকাংশ হাসপাতালে প্রায় সব ধরনের চিকিৎসাই বন্ধ ছিল। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকরা অনেক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ওয়ার্ডবয়কে চাকরিচ্যুত করে। অনেকের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেককে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটি দেওয়া হয়। এর ফলে চিকিৎসা সেবায় যারা বেসরকারি খাতে কাজ করছেন তাদের একটি বড় অংশ চরম আর্থিক সংকট এবং মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। অনেক হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা হলেও অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চালু হয়নি এবং অনেক বেসরকারি হাসপাতালই সীমিত আকারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এর ফলে যেটা হচ্ছে যে, প্রচুর চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে নিম্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এই বিষয়টির দিকে লক্ষ্য করা উচিৎ।”

বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন,

“বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশের চিকিৎসা কাঠামোতে অনেক অবদান রেখেছে। বিশেষ করে, আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলো মোট রোগীর প্রায় ৬০ ভাগ চাহিদা মেটায়। কাজেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো অন্য সময়ে নিশ্চয়ই মুনাফা করেছে। এই বেসরকারি হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই। তাই সাময়িক সংকটের জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত করা, তাদেরকে চাকরিচ্যুত করাটা অন্যায় এবং এটা করা উচিৎ না।”

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ আরো বলেন যে,

“আমরা হাসপাতাল মালিকদের সমস্যাগুলো বুঝি। কিন্তু পারস্পারিক আস্থা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমস্যাটির সমাধান করা যেতে পারে। পুরো বেতন না হোক অর্ধেক বেতন দেওয়া বা হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে কিছু অংশ করে বেতন দিয়ে যাওয়া উচিৎ। এর ফলে একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। এই সংকট চিরকাল থাকবে না। কিন্তু যদি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি এ রকম আচরণ করে তাহলে ভবিষ্যতে হাসপাতাল পরিচালনায় যে পারস্পারিক আস্থা এবং বিশ্বাস, তা নষ্ট হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন,

“একটি হাসপাতাল কেবল মালিকদের উদ্যোগে চলতে পারে না। সেখানে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনারসহ প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যকর্মীর অবদান রয়েছে। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফসলই হলো একটি বেসরকারি হাসপাতাল। কাজেই তাদেরকে এখন ছুড়ে ফেলে দেওয়াটা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয় এবং কাম্য নয়। আশা করি, বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা এ ব্যাপারে সদয় দৃষ্টি দেবেন।”

তথ্যসূত্র : Bangla Insider (২৬শে জুলাই, ২০২০, রবিবার)

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে একই দিনে শেবাচিম এর দুই কৃতী ছাত্রের মৃত্যু

Mon Jul 27 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ করোনা মহামারীতে শহীদ হলেন আরো দুজন চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন ডা. এনায়েত উল্লাহ এবং ডা. বদিউজ্জামান হীরা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ডা. এনায়েত উল্লাহ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ১২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেদ্দাতে আল রাইয়ান ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo