বিশ্ব স্ট্রোক দিবস ২০২৫: প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ বুধবার

২৯ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এই দিবস রাখার উদ্দেশ্য হলো স্ট্রোক সম্পর্কে লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ।” স্ট্রোক রোগীকে আমরা যেন জরুরি ও যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারি।

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপন শুরু হয়েছিলো ২০০৬ সালে ২৯ অক্টোবর। ঐ দিন বিশ্ব স্ট্রোক সংস্থা গঠন করা হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো স্ট্রোক ঝুঁকি, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যাতে জীবন বাঁচানো যায় এবং অক্ষমতা কমানো যায়।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় এক কোটি ৫০ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৬০ লাখ লোক মারা যান এবং ৫০ লাখ লোক আজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে পরেন।

বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যু হয় এই রোগে। দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। বর্তমানে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভুগছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষণায় জানা গেছে, প্রতি ছয়জনের একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় ২১২ জন নিউরোসার্জন রয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন ১ হাজার ৬০০ জন নিউরোসার্জন।

স্ট্রোক হলো একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা যা মস্তিষ্কে রক্ত বা পুষ্টি সরবরাহ ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হয় এবং মস্তিষ্কের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যদি যথাযথ সময় চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তাহলে রোগী কোনো এক অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে হবে অথবা মারা যেতে পারে।

স্ট্রোক সাধারণত ৩ প্রকার হয়ে থাকে। যথা:

১) ইস্কেমিক স্ট্রোক: সবচেয়ে বেশি স্ট্রোক হয়ে থাকে হলো ইস্কেমিক স্ট্রোক। এতে রক্ত জমাট বাঁধে এবং মস্তিষ্কো অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

২) হেমোরেজিক স্ট্রোক: এতে রক্ত নালী ফেটে যেতে পারে।

৩) ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক স্ট্রোক: এই স্ট্রোক ক্ষণস্থায়ী থাকে। একে অনেক সময় মিনি স্ট্রোক বলে থাকে।

লক্ষণ

১) কথা বলতে এবং বুঝতে অসুবিধা

২) পক্ষাঘাত বা অসাড়তা

৩) দৃষ্টিশক্তির অসুবিধা

৪) হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যথা

৫) হাঁটতে অসুবিধা

ঝুঁকি

যারা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছে, তারা হলো:

১) বয়স: বয়স বাড়লে স্ট্রোক ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে আজকাল ২০-৩০ বছরের বয়সী মানুষদের মধ্যে স্ট্রোক দেখা যায়।

২) লিঙ্গ: মহিলা থেকে পুরুষের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

৩) ডায়াবেটিস: যাদের ডায়বেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

৪) ধুমপান: যারা ধুমপান বেশি করে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আমি একটি কাল্পনিক গল্প বলি। সৈয়দ মাহফুজ মনোয়ার চট্রগ্রামে একটি স্কুলের শিক্ষকতা করে। সে প্রতিদিন ধুমপান করত, একদিন হঠাৎ করে তার এক হাত অবশ হয়ে গেছে। হাসপাতাল নিয়ে গিয়ে জানতে পারে যে তার স্ট্রোক হয়েছে। পরে চিকিৎসা নেওয়ার তার ঐ হাতে কাজ করতে পারে না। অতএব ধৃমপান থেকে সাবধান থাকেন।

৫) উচ্চ রক্তচাপ: যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।

৬) মানসিক অশান্তি: যারা মানসিকভাবে স্ট্রেস নিয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক সম্ভাবনা দেখা দেয়।

৭) অতিরিক্ত ওজন: যাদের ওজন অতিরিক্ত থাকে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

নির্ণয়

আমরা স্ট্রোক লক্ষণ দেখে বুঝি যে এই রোগীর স্ট্রোক হয়েছে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা সাধারণত যা যা দেখি:

সিটি স্ক্যান: ব্রেনের সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কোথাও কি রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা সেটা জানতো পারি।

এমআরআই: ব্রেনের এমআরআই মাধ্যমে আমরা রক্তজমাট বাঁধা স্পষ্ট বুঝতে পারি।

শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে স্ট্রোক আক্রান্ত হয়েছে কিনা।

প্রতিরোধ

আমরা সাধারণত স্ট্রোক থেকে বাঁচতে পারবো সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। যেমন:

১) ধুমপান পরিহার করতে হবে।

২) চর্বিযুক্ত বা বাইরের খাবার কম খেতে হবে।

৩) ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে হবে।

৪) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে হবে।

৫) চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

আমরা একটি জিনিস ভুল করি, সেটি হলো আমরা সাধারণত মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসনকে আমরা হার্ট স্ট্রোক বলি। সেটি আমাদের ভুল কথা। মেডিকেলের ভাষা স্ট্রোক বলি মস্তিষ্কের রোগ। হার্টের কোনো স্ট্রোক হয় না। হার্টে ব্যথাকে অ্যানজাইনা পেক্টোরিস বলি এবং হার্টের সমস্যাকে আমরা বলি মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন।

এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo