শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
যশোরের মনিরামপুরে নিজ বাড়িতেই ‘অপারেশন থিয়েটার’ গড়ে তুলেছেন কথিত ডাক্তার পরিচয়ধারী প্রতারক রশিদা বেগম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরিয়েই নিজেকে ‘সার্জন’ পরিচয় দিয়ে প্রায় ২০ পর ধরে পাইলস, টিউমারসহ নানা জটিল রোগের অপারেশন করছেন মৃত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট (ডিএমএফ) মো. আব্দুর রশিদের স্ত্রী রশিদা বেগম। নিজেকে প্যারামেডিকেল ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মনিরামপুর, কেশবপুর, সাতক্ষীরা, বরিশাল অঞ্চলে তিনি এ চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রশিদা বেগম উপজেলার হাজরাকাটি বেলতলায় নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন অপারেশন থিয়েটার। কোন ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসার নামে আনস্টেরাইলড ব্লেড ও কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে চলছে অপারেশন। শুধু তাই নয়, রোগী আসতে না পারলে নিজেই কাপড় কাটার কাঁচি হাতে চলে যান রোগীর বাড়িতে। রোগীর বাড়িতে বসেই করেন জটিল অপারেশন। এতে মারাত্মক ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা যাওয়ার পাশাপাশি, অঙ্গহানিও হয়েছে অনেকের।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এই ভুয়া চিকিৎসকের অপারেশনের ফলে অনেক রোগী মারাত্মক ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ পচন ধরা ক্ষতের শিকার হয়েছেন। আবার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।
সরেজমিনে রশিদা বেগমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ঘরে মধ্যে রোগী দেখছেন রাশিদা খাতুন। খাটের নিচে, ওপরে ও চেয়ারের ওপর গজ ও রক্ত মাখা তুলা পড়ে রয়েছে। অন্য আরও একটি ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে ওষুধের প্যাকেট। কোথাও হাইজিনের বালাই নাই! ঘরের দেয়ালে ঝুলছে সিরিঞ্জ ; খবর কালবেলার।
এদিকে রশিদা বেগম অপচিকিৎসায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কেশবপুর উপজেলার চাঁদড়া গ্রামের আছিয়া বেগম নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রশিদা খাতুনের বিরুদ্ধে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। কয়েকবার স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করার উদ্যোগ নিলে রশিদা খাতুন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত আছিয়া বেগমের ছেলে আনিচুর রহমান বলেন, আমার মাকে রশিদা বেগমকে দেখাই। দেখে বলেন, জটিল সমস্যা। অপারেশন করতে হবে। পরে রশিদা বেগম বাড়িতেই অপারেশন করেন। বাড়িতে আনলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে আমার মা মারা যান।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাড়িতে এসে রশিদা বেগম পাইলস অপারেশন করেন। কীভাবে অপারেশন করেছে জানতে চাইলে বলেন, প্রথমে অবশ করে নেন। তারপর কাপড় কাটা কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এ অপারেশনের কারণে আমার জীবন থেকে ভালো খাবার বন্ধ হয়ে গেছে এবং মলদ্বারের বামপাশ নষ্ট হয়ে গেছে।
অভিযাগের বিষয়ে রশিদা বেগম জানান, তার স্বামী প্যারামেডিকেল ডাক্তার (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট) ছিলেন। তার কাছ থেকে হাতে কলমে কাজ শেখা। তার মৃত্যুর পরে আমি চিকিৎসা দিচ্ছি। আমি সার্জারি ডাক্তার না হয়ে অপারেশন করেছি।
রোগীর মৃত্যু বিষয়ে তিনি বলেন, অপারেশনের পর তো আর কোনো দ্বায় দায়িত্ব আমার থাকে না। অপারেশন পর্যন্ত আমার দায়িত্ব।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদেক রাসেল বলেছেন, ভুয়া ডাক্তার রশিদা বেগমকে হাতেনাতে ধরার জন্য কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তিনি বাড়ি থেকে বারবার পালিয়ে গেছেন। তাকে আটকের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস