মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫
প্রতারণার অভিযোগে কুষ্টিয়ায় টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর করা হয়েছে এক নারী চিকিৎসককে। হামলার শিকার চিকিৎসকের নাম শারমিন সুলতানা। শহরের কোর্টপাড়া এলাকার লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে সোমবার (০৫ মে) এ ঘটনা ঘটে। হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার বরাতে জানা গেছে, মারধরের শিকার নারী চিকিৎসক থানা থেকে বাড়ি ফিরেছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ তাঁকে স্বামী চিকিৎসক মাসুদ রানার জিম্মায় দেন।রাতেই তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, “যাঁরা মারধর করেছেন, তাঁরা শুধু অনুমান করছেন—এই নারীই প্রতারণা করেছেন। বাস্তবভিত্তিক কোনো প্রমাণ এখনো দিতে পারেননি।”
চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী মাসুদ রানা প্ল্যাটফর্মকে বলেন, “টোটালি ফেক ঘটনায় আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। কোন একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা যেসব অভিযোগ দিচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।আমরা নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করব।”
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে গেলে সেখানে অপেক্ষমাণ ১৫ থেকে ২০ জন নারী শারমিন সুলতানার ওপর হামলা চালান। তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সড়কে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় তাঁর চুল ধরে টানাহেঁচড়া করা হয় এবং পোশাক ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়। সেখানে তাদের বলতে শোনা যায়, “টাকা নিয়েছিস, টাকা ফেরত দে।”
নারী চিকিৎসকের স্বামী মাসুদ রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্ত্রীকে রক্ষা করতে চাইলে তিনিও হামলার শিকার হন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নেয়।
হামলাকারীদের অভিযোগ, চাকরি ও বিভিন্ন ভাতার কথা বলে তিনি অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি কাউকে চাকরি দেননি এবং সেই টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এলাকার খাদিজা খাতুনের সাথে প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “জমি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে ডা. শারমিন। প্রলোভন দিয়ে টাকা নিয়েছে সে। এখন টাকাও ফেরত দেয় না, জমিও দেয় না। আমার মতো অনেকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে এই ডাক্তার। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা এই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” তবে টাকা দেয়ার কোন প্রমাণ তার কাছে আছে কী-না বা কোথায়, কখন, কীভাবে তিনি টাকা দিয়েছিলেন এ বিষয়ে জিগ্যেস করা হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও পুনরায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, “সেখানে অনেকটা মবের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। খবর পেয়ে ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। যে অভিযোগে ওই চিকিৎসকের ওপর হামলা করেছে, হামলাকারীদের কাছে সেগুলোর কাগজপত্রসহ তথ্যপ্রমাণ চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস