ট্রান্সফ্যাটজনিত মৃত্যুঃ ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার

বিশ্ব জুড়ে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে প্রশংসনীয় অগ্রগতি হলেও থেমে নেই এতে মৃত্যু। গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত ‘Who Report on Global Trans Fat Elimination ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫ টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায়, তার ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট।

১৫ টি দেশের তালিকায় আরও রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া ও স্লোভেনিয়া এবং এই দেশ গুলো ইতোমধ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত সর্বোত্তম নীতি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ সব ফ্যাট, তেল এবং খাবারে প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ গ্রামে সীমিত করা অথবা পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল- পিএইচও’র উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বাকি ১১টি দেশকে (বাংলাদেশ, ইরান, ভারত, মেক্সিকো, নেপাল, পাকিস্তান, কোরিয়া, মিশর, আজারবাইজান, ভুটান, ইকুয়েডর) দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ পর্যন্ত মোট ৫৮টি দেশ ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের নীতি গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ৩২০ কোটি (৩.২ বিলিয়ন) মানুষ সুরক্ষা পাবে। তবে নীতিমালার অভাবে এখনও ১০০টির অধিক দেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাট প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেন,

এমন একটা সময় যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে লড়াই করছে এবং আমাদের অবশ্যই একইসঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হবে। এর মধ্যে অবশ্যই অসংক্রামক রোগ মোকাবিলার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, কারণ করোনাভাইরাসে এগুলো আরও ত্বরান্বিত হয়ে অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বিশ্ব অর্জনের যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে আমাদের কোনাভাবেই বিলম্ব করা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।”

এ বছরের প্রতিবেদনে দুইটি বিশেষ ইতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

প্রথমত, ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের জন্য যে সমস্ত দেশ নতুন আইন বা নীতি গ্রহণ করেছে তারা এ বিষয়ে সর্বোত্তম পন্থাই বেছে নিয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় ব্রাজিল, তুরস্ক এবং নাইজেরিয়ার নাম।

দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), প্যান অ্যামেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন (পাহো), গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) অঞ্চল ভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে অধিক রাষ্ট্রে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

তবে এই অর্জনের বিপরীতে একটি শঙ্কার বিষয় হলো, উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশসমুহ ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সর্বোত্তম পন্থা গ্রহণ করলেও নিম্ন বা নিম্নমধ্যম আয়ের কোন দেশই এধরনের নীতিমালা এখনও গ্রহণ করতে পারেনি।

ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার

 

রিজলভ টু সেইভ লাইভস (আরটিএসএল) এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডা. টম ফ্রিডেন বলেন,

“বিশ্ব জুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশসমূহ জনস্বাস্থ্যের জন্য সাশ্রয়ী পন্থা খুঁজছে। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত করার মাধ্যমে একইসঙ্গে জীবন ও অর্থ দুটোই বাঁচবে এবং সেইসঙ্গে হৃদরোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উপর চাপও কমানো যাবে।”

অতিসম্প্রতি ঢাকার শীর্ষ স্থানীয় পিএইচও (পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) ব্র্যান্ডসমূহের নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পেয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর গবেষকগণ। গবেষণায় ঢাকার পিএইচও নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা ডব্লিউএইচও এর সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। এমতাবস্থায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা কার্যকর করার দাবি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিসিপিএস প্রশিক্ষণের অনুমোদন পেলো চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ

Mon Sep 14 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, সোমবার গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ রোজ শনিবার রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ”বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস” (বিসিপিএস) প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদন পেলো চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ। ৫ বছরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে অনুমোদন পায় এ মেডিকেলটি।  চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo