অবসরের দিনে পেনশন মঞ্জুর করলেন চিকিৎসক

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ আগস্ট, ২০২০, মঙ্গলবার
জেলা সদর হাসপাতাল, নেত্রকোনার অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন আব্দুল গনি মিয়া। গত ১৫ আগস্ট, ৫৯ বছরে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন।

জেলা সদর হাসপাতাল, নেত্রকোনার তত্ত্বাবধায়কের অফিসে ১৫ আগস্ট (শনিবার) এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন, তত্ত্বাবধায়ক ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো। এই অনুষ্ঠানে একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে মো. আবদুল গনিকে ৫৯ (ঊনষাট) বছর পূর্ণ হওয়ায় গণকর্মচারী অবসর আইন, ১৯৭৪-এর (৪) ধারা মোতাবেক ১৬ আগস্ট, ২০২০ তারিখে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হয়। এছাড়াও পাওনা ছুটি সাপেক্ষে ১৬/০৮/২০২০ হতে ১৪/০৮/২০২১ পর্যন্ত এক বছরের অবসরোত্তর ছুটি (পি.আর.এল) এবং ১৮ মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ লাম্পগ্র‍্যান্ট করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো।

ছবিঃ অফিস আদেশ

এই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি ব্যক্তিগত প্রোফাইলে লিখেন,

“দশ বছর আগে আমার আম্মা সরকারি চাকরি (শিক্ষকতা) থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বহু ঘোরাঘুরি করেও পেনশনের টাকা না পেয়ে, শেষে অডিটরকে ৩৬,০০০ টাকা উৎকোচ দিয়ে তিনি তাঁর পেনশনের টাকা তুলতে পেরেছিলেন। তখন আমি সংকল্প করি, আমি যেদিন পেনশন মঞ্জুরকারী কর্মকর্তা হব, সেদিন পেনশন প্রার্থী ব্যক্তির সব কাগজপত্র সঠিক থাকলে একদিনের মধ্যে পেনশন মঞ্জুর করব। এখন আমি আমার আওতাধীন তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ। মানুষের উপকার করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। চাকরি জীবনের শেষ দিনটিতে একজন অবসরপ্রার্থী বিনা-কষ্টে অবসরাদেশ পেয়ে যতটুকু শান্তি পেয়েছেন, আমার দীর্ঘদিনের সংকল্প পূর্ণ হওয়ায় (আমার) আনন্দ এর চেয়ে কম নয়।”

ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্ল্যাটফর্মকে জানান,

“সরকারি হাসপাতালে কোন মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, সেজন্য কাজ করতে চাই। কোন পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, কোন ক্ষেত্রেই যাতে অসুবিধা নাহয় সেজন্য অবকাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। হাসপাতালে যেসকল চিকিৎসক কাজ করছেন, তাঁদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। চিকিৎসকদের জন্য একটা সুন্দর অফিস, যথাযথ আবাসন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা – চিকিৎসার পরিবেশ আরো সুন্দর করবে। আমি এগুলো নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। তাছাড়া সরকারি চেয়ারে বসে মানুষ যাতে বিনা পয়সায় সার্ভিস পায় তা নিশ্চিত করবো। আমার মত চেয়ারে যারা আছেন, সে সকল কর্মকর্তাদেরও বলব তাঁরা যেন সবাইকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসটুকু দেন, কোন রকম হয়রানি ছাড়া।”

ছবিঃ অফিস সহকারী আব্দুল গনির বিদায় সংবর্ধনায় পেনশনের অফিস আদেশ পাঠ

সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০” এ,
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন মঞ্জুরিতে বিলম্ব না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও মাসিক সুবিধার টাকা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা চলে যাবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ শুধু পেনশন এর বিষয়টি দেখার জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিবে।

এই আদেশটি জারি হয় গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পেনশন প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা দূর হবে বলে জানান, ডা. জয়নাল। তিনি চিকিৎসকদের পেনশন প্রাপ্তির ব্যাপারে চিকিৎসক, অফিস, অডিট, ডিজি অফিস/মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। বলেন,

“একজন চিকিৎসক যিনি পেনশন নিবেন, তাঁকেই সব কাগজ পত্র সংরক্ষণ করতে হবে এবং জমা দিতে হবে। ৩০ বছর আগের জয়েনিং লেটার হোক, বা অন্যান্য কাগজপত্রগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। তবে কিছু জায়গায় হয়রানি করার অভ্যাস আছে৷ সেক্ষেত্রে অভিযোগ করা হলে দ্রুত সমাধান পাওয়া সম্ভব। কোন কারণে দ্রুত সমাধান করা না গেলে, তা অদক্ষতা হিসেবেও বিবেচনা করা হবে। এই সেক্টরে আসলে আরো বেশি স্টাফ দরকার, যাতে দ্রুত কাজ করা যায়।”

অফিস সহায়ক আব্দুল গনি মিয়ার অবসরের একদিনের মধ্যে পেনশন মঞ্জুর, এই ঘটনাটি দৃষ্টান্তমূলক। পেনশনের দীর্ঘসূত্রিতা এবং হয়রানির নজির এ দেশের যেকোন সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে অনেক বেশি। দেশকে একটা দীর্ঘ সময় ধরে সার্ভিস দেওয়ার পরও, বিভিন্ন নিয়মের কারণে হোক অথবা সিস্টেমের মারপ্যাঁচেই হোক – ভোগান্তি অনেক৷ এর মাঝেই আশার আলো দেখালেন ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো। নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তিনি আশা করেন একদিন ডিজিটাল ফরম্যাটেই দ্রুত পাওয়া যাবে পেনশন, দূর হবে সকল সিস্টেমের দীর্ঘসূত্রিতা।

Subha Jamil Subah

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সন্ধানী ক্র্যাক প্লাটুন মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার পদ্মার চর এলাকায় ত্রাণ বিতরন

Tue Aug 18 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ অগাস্ট ২০২০, মঙ্গলবার গতকাল ১৭ আগস্ট(সোমবার), মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার তেউটিয়া ইউনিয়নের পদ্মার চর অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরণ করেছে মেডিকেল এবং ডেন্টাল ছাত্র- ছাত্রী দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর ক্র‍্যাক প্লাটুন ভলান্টিয়ার টিম মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা। সন্ধানী চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাধারণ সম্পাদক তানজীমুল হাই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo