জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ডা. সুলতানা রাজিয়া’র ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ হাসপাতাল

দিন বদলের হাওয়া লেগেছে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। একসময় যা ছিল নানা অনিয়ম,দুর্নীতি ও প্রশাষনিক দুর্বলতার বেড়াজালে আবদ্ধ জীর্ণ হাসপাতাল। আজ তা হঠাত যেন জাদুর কাঠির ছোয়ায় বদলে গেছে আদর্শ হাসপাতালে,হয়ে উঠেছে রোগীদের আস্থার প্রতীক।

জাদুর কাঠি হাতে নিয়ে যিনি এই দিন বদলে নেতৃত্ব দিছেন তিনি হাসপাতালের নবনিযুক্ত উপপরিচালক ডাঃ সুলতানা রাজিয়া। এর পূর্বে তিনি ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সিভিল সার্জন হিসেবে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হোন । সময়ের হিসাবে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তার কর্মদিবস ৪ মাসেরও কিছু কম সময়। অথচ এই স্বল্প সময়েই তিনি তার কাজ দিয়ে হয়ে উঠেছেন সকলের ভরসার প্রতীক। আর তার সাথে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করছেন সকল চিকিৎসক,নার্স,কর্মকর্তা,কর্মচারীরাও।


একসময়ের অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এখন সহজেই মিলছে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। সকাল-বিকাল সাফ-সুতরোয় অদৃশ্য এখন চিরচেনা নোংরা আবর্জনার ভাগাড়। আর্থিক খাতেও এখন সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিদ্যমান।
নোংরা ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ব্যবহার অনুপযোগী টয়লেট সব কিছু এখন বদলে গেছে। সব হয়েছে ব্যবহার্য। জানালায় লেগেছে নতুন পর্দা । বহু বছরের সরকারী হাসপাতাল বলতে যে দৃশ্য আমাদের চোখে ভেসে উঠত তার সাথে একেবারেই মেলে না। বাহিরের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বদলে গেছে এ হাসপাতালের বাহিরের চেহারাও।
শুধু অভ্যন্তরীন কিংবা বাহ্যিক পরিবর্তনই নয়। আসল পরিবর্তন এসেছে কর্মরত সকলের মাঝে । সেবার মহান ব্রতে সকলেই এখন উজ্জীবিত। সময় মেনে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রোগী দেখছেন আউটডোর চিকিৎসকরা। টিকেট প্রদান করা হচ্ছে একটা পর্যন্ত ।

কনসালট্যান্টগণ নিয়মিত সকাল সন্ধ্যায় ইনডোরে রোগী দেখছেন। জরুরী বিভাগে আগে যেখানে রোগী দেখত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কিংবা কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। সেখানে এখন ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সী বা জরুরী সেবা দিচ্ছেন একজন ডাক্তার। ২৪ ঘন্টার জন্য দেয়া হয়েছে ট্রলীম্যান। চালু করা হয়েছে ইমার্জেন্সী ওটি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও এখানে নিয়মিত ৪শ থেকে ৫শ রোগী ভর্তি থাকেন । বেডে জায়গা না হওয়া মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতেন মহিলারা। মহিলাদের জন্যে তাই সম্প্রতি চালু হয়েছে আলাদা মহিলা ওয়ার্ড । গত ৭ আগস্ট হাসপাতালের উপপরিচালক রাজিয়া সুলতানা ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় নতুন মহিলা ওয়ার্ড ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন । অতিরিক্ত রোগীদের বেড দেয়া সম্ভব না হলেও অন্তত এতে করে মহিলা রোগীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে গেছে ।


সমৃদ্ধ করা হয়েছে হাসপাতালের দন্ত বিভাগ । রহস্যজনক আগুনে পুড়ে যাওয়া হাসপাতালের প্যাথলজি ও ব্লাড ব্যাংক দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা হয়েছে । আগে যেখানে জরায়ুমুখের ক্যান্সার নির্ণয়ে ভায়া করা হতো সপ্তাহে মাত্র দুদিন ,এখন সেখানে ছুটির দিনগুলো বাদে সব দিনই পরীক্ষা করা হচ্ছে ।
ডাঃ রাজিয়া সুলতানা বলেন,কিশোরগঞ্জ আমার নিজের জেলা। এই জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত। এই দায়িত্ব আমার কর্তব্যবোধকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি আমার জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে সকলের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার অনেক সীমাবদ্ধতা। হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগির সেবা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। এরপরও চিকিৎসক নার্স এবং অন্যান্য স্টাফদের আন্তরিকতার কারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি কিশোরগঞ্জ বাসীর সবার সমর্থন ও সহযোগীতায় কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে একটি সেবাবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারব। তেমনটি করতে পারলেই আমি আমার কাজের সার্থকতা খুজে পাব।
প্রকৃত অর্থেই ডাঃ সুলতানা রাজিয়া সেই সার্থকতার পথে হাটছেন। চিকিৎসা সেবা ও হাসপাতালের মান উন্নোয়নের পাশাপাশি তিনি রাখছেন তার কাজে স্বচ্ছতাও । বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত টাকার বিবরণী ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া বিগত অর্থবছরের ইউজার ফির প্রায় ৩০ লাখ টাকা জমা দেওয়ানো হয়েছে।

বন্ধ করা হয়েছে বদলী কামলা। এর বাইরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটেটিভদের জন্য সময়সূচী নির্ধারণ করে দিয়ে সেভাবে তদারকী করা হচ্ছে । দালাল মুক্ত করার প্রয়াসেও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নানা সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ডাঃ সুলতানা রাজিয়া বদ্ধপরিকর যে তিনি তার কর্মের মাধ্যমে যেভাবে এই স্বল্প সময়ে হাসপাতালটিকে বদলে দিয়েছেন। তা ধরে রেখে ভবিষ্যতে এই হাসপাতালটিকে তিনি নিয়ে যাবেন অন্যতম সেবাবান্ধব সেরা হাসপাতালগুলোর তালিকায় এই কামনাই আমরা করি।

খবর সূত্রঃ কিশোরগঞ্জ নিউজ

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

৪ মাসের বকেয়া ভাতার দাবিতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি!

Sat Oct 20 , 2018
বিগত চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে আছে, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এর ইন্টার্ন চিকিৎসকবৃন্দ। এছাড়া, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ দিন পার হলেও, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব ক্যাম্পাস চালু হয় নি। তাই, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অপ্রতুল ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে ইন্টার্নশিপ করছেন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo