মঙ্গলবার, ১৯ আগষ্ট, ২০২৫
বাংলাদেশে বিদেশি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসকদের (ইনফার্টিলিটি) অননুমোদিত কার্যক্রম বন্ধে মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেবিলিটি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এফএসএসবি)।
সোমবার (১৮ আগস্ট) এফএসএসবির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজা বেগম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক রাশিদা বেগম ও সাইন্টিফিক সেক্রেটারি অধ্যাপক মারুফ সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে এ হস্তক্ষেপ চায় সংগঠনটি।
এফএসএসবির অভিযোগ, ভারতীয় কিছু বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিএমডিসির অনুমোদন না নিয়েই দেশে প্রবেশ করে সরাসরি রোগী দেখছেন এবং ফার্টিলিটি মেলাগুলোকে ‘কালেকশন সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে যেমন চিকিৎসা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে, তেমনই প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী।
দেশীয় চিকিৎসকদের অগ্রগতিতে বাধা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে চ্যালেঞ্জ
প্রতিবাদলিপিতে জানানো হয়, দুই মাস আগে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে একটি ফার্টিলিটি মেলায় অননুমোদিতভাবে রোগী দেখার ঘটনায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বিএমডিসি থেকে সতর্কতামূলক নোটিশ জারি হলেও এসব কার্যক্রম এখনো বিভিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, দেশে বর্তমানে এফসিপিএস ও এমএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রায় ৭০-৮০ জন তরুণ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসক রয়েছেন, যারা রোগীদেরকে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে সক্ষম। অথচ এসব দক্ষ চিকিৎসকদের উপেক্ষা করে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অননুমোদিত কার্যক্রম রোগীসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একইসঙ্গে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অপচয় হচ্ছে।
প্রতিবাদলিপিতে উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, এসব বিদেশি চিকিৎসক অনেক সময় অজ্ঞাতনামা ডোনার ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, যা ইসলামী শরীয়াহ ও বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এতে রোগীরা না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে এর জটিল সামাজিক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছে এফএসএসবি।
এফএসএসবির তিন দফা দাবি
এই পরিস্থিতিতে এফএসএসবি তিনটি সুস্পষ্ট দাবিও উত্থাপন করেছে। দাবিগুলো হলো—
- বিদেশি চিকিৎসকদের অননুমোদিত রোগী দেখা বন্ধে বিএমডিসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
- বিদেশি ফার্টিলিটি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত মেলা বা প্রমোশনাল কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
- গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
আশাবাদ ব্যক্ত করে এফএসএসবির নেতৃবৃন্দ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দেশের চিকিৎসা খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট ভারতীয় ‘প্রশান্ত ফার্টিলিটি রিসার্চ সেন্টার’ এর চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিএমডিসি। পরে রোববার (১৭ আগস্ট) সাময়িক নিবন্ধন না থাকা থাইল্যান্ডের দুই চিকিৎসকের রোগী দেখাসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এ ছাড়া ২৬ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইকো এক্সপোর উদ্যোগে তিন দিনের ফার্টিলিটি এক্সপোতে ভারত ও থাইল্যান্ডের চিকিৎসকদের রোগী সেবা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। একই দিন অভিযান চালিয়ে ওই মেলা পণ্ড করে দেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।