সাংবাদিকের মিথ্যাচার বনাম সত্য ঘটনা

কিছুদিন আগে নর্থ ইস্ট মেডিকেল হাসপাতালে এক শিশুকে তাপ দিতে গিয়ে শিশুটি পুড়ে গেলো।

যে শিশু পুড়ে গেছে, তার বাবা মা নর্থ ইস্টের এমন গর্হিত কাজের কোন প্রতিবাদ করলো না, এমনকি নর্থ ইস্ট ত্যাগ পর্যন্ত করলো না। তারা বরং নর্থ ইস্টে চিকিৎসা চালিয়ে গেলো।

এদিকে শিশুর আত্মীয়স্বজনেরা কোন প্রতিবাদ না করলেও, প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠলো প্রতিবাদী জনতার মনে। ফেইসবুকে নিউজের পর নিউজ শেয়ার হতে থাকলো!! “শিশুটির দায়ভার কি নর্থ ইস্ট নিবে??” একেকজনের কলমে আগুন ঝরতে থাকলো।

কথা হইলো, প্রতিবাদী জনতা এত প্রতিবাদ করছে, কিন্তু শিশুটির আত্মীয়রা চুপ কেন?? তারা কেন নর্থ ইস্টের নামে মামলা করছে না??

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো, শিশুটিকে portable heater দিয়ে তাপ দেওয়া হচ্ছিলো একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যা একজন স্টফ নার্স সেট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাচ্চার আত্মীয়দের একজন portable heater টি বাচ্চার শরীরের কাছে নিয়ে আসেন এবং তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেন। কারণ উনার মনে
হচ্ছিল বাচ্চা তাপ ঠিক মত পাচ্ছিল না। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাচ্চার শরীর পুড়ে গেলো।

এইজন্যে রোগীর আত্মীয়রা প্রতিবাদের মধ্যে নাই। তারা নর্থ ইস্টেই চিকিৎসা চালিয়ে গেলেন।

কিন্তু এদিকে ফেসবুকে প্রতিবাদী জনতার বজ্রকন্ঠ প্রতিবাদে আকাশ বাতাস কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।

মাঝখান থেকে অজস্র শেয়ার। লাইক আর লাইক!! পুরাই সেলিব্রেটি!!

বাংলাদেশে ফেসবুক টা এখন এরকম ই। সবাই নিজের একটা মতাদর্শ নিয়ে ক্ষাপ মেরে বসে থাকে। যখন ই নিজের মত প্রমাণের উপযুক্ত কথাবার্তা কানে আসে, সাথে সাথে শেয়ার আর জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস। সত্য না মিথ্যা সেটা বিচারের সময় নাই। আমার পক্ষের হলে সেটা তো সত্য হবেই। আর আমার বিপক্ষের হলে সেটা মিথ্যা হবার ই সম্ভাবনা বেশি।

আবেগী জনতার এসব সস্তা আবেগ এখন বিরক্ত লাগে।

শুধু চিকিৎসা না, সবক্ষেত্রেই এই জিনিসটা লক্ষনীয়।

ফেসবুকের আরেকটা সমস্যা, এখানে চারশো কিংবা পাঁচশো লাইক পেয়ে গেলে মানুষ নিজেকে বুদ্ধিজীবী ভাবতে শুরু করে। মনে মনে ভাবনা আসে, “আইনস্টাইনের মত হয়তো এতটা ট্যালেন্ট নাই, তবে কাছাকাছি তো হবে। না হলে কি আর এমনি এমনি পাঁচশো লাইক কামাই হইছে??”

কিন্তু লাইক দিয়ে যে গরুরও কোন ফায়দা হবে না,সেটা বুঝার ক্ষমতা “কোন এক অজ্ঞাত কারণে” বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে নেই।

সস্তা পোস্ট দিয়ে এরা উপুর্যুপরী লাইক অর্জন করতে থাকে। মাঝখান থেকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় বিদ্বেষ।

ফেসবুকের এসব আবেগী “পাঁচশো+ লাইক বিশিষ্ট” সস্তা লিখক(!!)দের বর্জন করা উচিত।

আপনি যদি বলদ না হয়ে থাকেন, তবে এসব নিউজ পোর্টাল আর ফেবু লেখকদের কথায় ফাল লাফ না মেরে নিজের মাথার খুলির ভিতরে যে জিনিসটা আছে, ওটা কাজে লাগান। বুঝার চেষ্টা করেন। নিরপেক্ষভাবে জানার চেষ্টা করেন।

না পারলে, ক্রিয়েটিভ কিছু করার চেষ্টা করেন। কিছু না পারলে মাটি কাজ করেন। ফায়দা হবে। তবু হুদাই বলদের লেখায় লাফ দিয়ে নিজেকেও বলদের তালিকাভুক্ত করবেন না। দোহাই লাগে।

…..
Abdul Aziz Abdullah

drferdous

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

Australia for Doctors

Sun Mar 19 , 2017
In last five years I have received so many email and Facebook SMS. Doctors from Bangladesh are asking about Australia. I tried my best to give correct information as possible as I can. Lately seeing more questions so I have felt I should write something about it. First of all […]

You May Like

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo