লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড সিক্সটি সিক্স

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

কোনো ছেলে যখন বড় হয় তখন শুধু সে-ইই বড় হয়। সে তার সবকিছু নিয়ে বড় হয়। তার কীর্তিমান ছেলেকে দেখিয়ে বলে ‘আমার ছেলে’, সুশীলা যোগ্য মেয়েকে দেখিয়ে বলে ‘আমার মেয়ে’। এখানে অন্যের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো দাম নেই। মুকুটের সাথে সংযুক্তি নিয়ে তিনি গর্ববোধ করছেন, মুকুট করছে কিনা এ প্রশ্ন তার কাছে অবান্তর।

অন্যদিকে কোনো মেয়ে যখন বড় হয় সবকিছুকে বড় করে তারপর বড় হয়। তার সৌন্দর্য তার স্বামীর জন্য, তার ছেলেমেয়ের সাফল্য তার সাফল্য, সমাজ গর্ব করলে সে গর্বিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার সৌন্দর্যের মালিকানাও নিজের কাছে রাখে না। স্বামী ও বাস্তবতার কাছে সত্ত্ব দিয়ে দেয়।

ছবি – প্রতীকী

খুব কাছ থেকে এক সার্জনকে দেখেছি। তিনি শহরের সেরা সার্জন। উপচে পড়া সাফল্য তিনি উপভোগ করতেন। তার প্র‍্যাক্টিস, ওটি, সেমিনার, ছাত্র পড়ানো সবকিছু নিয়েই তিনি। রোগীরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতো, তিনি বলতেন ‘হ্যাঁ এটা আমার কাজ; কোনো যেনোতেনো কাজ নয়’। রোগীদের তিনি ভালোবাসতেন কিন্তু সে ভালোবাসা অন্যরকম। ততটুকুই যতটুকুতে তার নাম জড়িত। সমবেদনা বিহীন ভালোবাসা। ছুড়ি বসাতে তার হাত কাঁপতো না, কারন তিনি জিততে চান। তার স্ত্রী গায়নীর ডাক্তার, তাকে নিয়েও তিনি গর্বিত। তার একমাত্র কারণ উনি তার স্ত্রী।

অন্যদিকে ম্যাডামকে দেখতাম সবসময় তটস্থ থাকতেন। তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর নাম একবারে নিতেন কোনো অপারেশনের আগে। নিজের সুন্দর চেহারা নিয়েও ছিলেন অসচেতন। যতটুকু থাকলে স্বামীর ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যোগ্য স্ত্রীর সুনাম থাকে ততটুকুই সাজতেন।

পরিবার নিয়েও দুইজনের দৃষ্টিভঙ্গি দুই রকম ছিল। স্যার ছেলেমেয়েদের খুব ভালোবাসতেন। কিভাবে তাদের আরো ভাল যায়গায় পৌঁছানো যায় চেষ্টা করতেন। কিন্তু সাফল্যের ফর্মুলা তার নিজস্ব হতে হবে। তারা কি ভাবছে না ভাবছে এসব নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। অন্যদিকে ম্যাডামের কাছে আগে তারা। তাদের চাওয়ার সাথে স্বামীর চাওয়া মিলিয়ে তারপর তার চাওয়াটি ঠিক করে নিতেন।

এখন তারা দুইজনই অবসর জীবন যাপন করছেন। স্যার বলছিলেন ‘আমার সবকিছু অর্জন বাচ্চাদের মায়ের জন্য সম্ভব হয়েছে’। আমার মনে হচ্ছিলো এখানেও তার অহমিকা আছে। ‘দেখো আমি তোমাকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। এর চেয়ে বেশি কি করতে পারি?’ অবসরে এখন তিনি শিল্পমনা, বুদ্ধিজীবী। অপরদিকে ম্যাডাম বলছিলেন তিনি ধন্য অত সুন্দর সারাউন্ডিংস পেয়ে। এমন কেয়ারিং হাজব্যান্ড পেয়ে, এমন ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে পেয়ে, গুণধর ছেলে পেয়ে। যেন তিনি বড় নন, সবাই মিলে তাকে টেনে হিঁচড়ে বড় করেছে। এর যোগ্যও তিনি নন। অবসরে তিনি এখন আরও বেশি পারিবারিক।

মানুষ ব্যর্থতায় ভিন্ন-ভিন্ন আচরণ করে, সাফল্যে প্রায় একিরকম। সফল লোকগুলোর এ ধারাই দেখেছি। পরিবার, আত্মীয় স্বজন, চাকুরিতে। স্কয়ারের এক কনসালটেন্টকে বলতে শুনেছিলাম তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলছেন- ‘তুমি জানো তুমি কাকে দাঁড় করিয়ে রাখছো? দেশের একজন সেরা কার্ডিয়োলজিস্টকে তুমি এমনি এমনি দাঁড় করিয়ে রাখছো!!!’

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

স্বাস্থ্যকর হার্টের জন্য মানা উচিত ৫টি টিপস

Tue Sep 29 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এই বছর, বিশ্ব হার্ট দিবসে, ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন আমাদের হৃদয়ের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগকে দমন করার কয়েকটি সহজ উপায় সম্পর্কে কথা বলেছেন৷ যার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন আপনার সুস্থ হৃদয়। এই সময়ে, পৃথিবী যখন মহামারীর সাথে যুদ্ধ করছে তখন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo