লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড নাইনটি এইট

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ অক্টোবর ২০২০, বুধবার

ডা. শুভদীপ চন্দ

‘আমার রায়হানই যেন পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শেষ নাম হয়’ – রায়হানের মা। এক লাইনে এমন করুণ বিষাদমাখা কবিতা কী কখনো লেখা হয়েছে? একজন মা তার ছেলের মৃত্যু মেনে নিচ্ছেন। যার মৃত্যু হয়েছে ফাঁড়িতে পুলিশের লাঠি (গুলো)র আঘাতে, যার বিয়ে হয়েছে দেড় বছর আগে, যার আড়াই মাস বয়সী এক ছোট মেয়ে আছে, যার বাবা তার জন্মের আগে মারা গিয়েছেন। বাবার আদর কি লোকটির জানা ছিল না; জানতে পারলেন না শিশুর আঁকড়ে ধরা, স্ত্রীর সোহাগ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমেরিকা যাওয়ার টিকিট হাতে ছিল, করোনার জন্য তাও যেতে পারলেন না।

ছবিঃ প্রতীকি

ভালই হয়েছে! এমন দুর্ভাগা লোক কেন বেঁচে থাকবে?! পুলিশ বলছে গণপিটুনিতে মৃত্যু। আহা বেচারা! মরার পর প্রমাণ দিয়েছেন গণপিটুনি ছিল না। মার খেয়ে বারবার বুঝি ‘মা মা’ করছিলেন। আর করবেনই বা না কেন! নিজের পোশাকটিও নিজে পছন্দ করতে পারতেন না। মা সব করে দিতো। তার মা ছাড়া আর ছিলই বা কে? বাবা নেই, বোনটিও সপরিবারে আমেরিকায় বহুদিন। সে তো মরে বেঁচেছে এখন মায়ের কী হবে? স্মৃতি নিয়ে বাঁচার চেয়ে অনেক ভাল মরে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া।একটি কেস দুর্ভাগ্যক্রমে বেরিয়ে পড়েছে। কত মা যে এমন চাচ্ছেন তার ছেলের মৃত্যুই ‘শেষ মৃত্যু’ হোক তার হিসেব কে রাখে। খুব সহজ একজনকে মেরে ফেলা, গ্রেফতার করে হাজতে পুরে দেওয়া, ছিনতাই গণপিটুনির চার্জ লাগিয়ে দেয়া! কিছুই আটকায় না। কে পড়ছে? কজন জানে রায়হানের মায়ের কথা? সব চলছে যার যার রাস্তায়। যার জীবন তার তার। সারাদিন রক্ত পানি করে যে টাকা রোজগার হয় সেখান থেকে ট্যাক্স দিতে হয়। সে ট্যাক্সের টাকায় আইন হয়, অস্ত্র হয়, ফাঁড়ি হয়। লাশকাটা ঘর হয়। সে ঘরে যারা লাশ কাটে তাদের বেতন হয়। তারপর সবকিছু মিলে রাষ্ট্রের তরফ থেকে উপহার আসে ‘অপমৃত্যু’। আমরা আমাদের অপমৃত্যুর জন্য টাকা বিনিয়োগ করছি। তাই হয়তো সবকিছু ছেড়েছুড়ে আল্লাহকে সাথে নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিতে চেয়েছিল রায়হান। পারলো কই? আগে সম্মান করতাম যখন ছোট ছিলাম। এখন ভয় পাই। সুঠাম দেহের ইন করা চকচকে পোশাক পরা লোকগুলো দেখে ভয় পাই। রাস্তায় বাস ট্রাক, আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো, হিরোইনখোর কম বয়সী ছেলেগুলো দেখে ভয় পাই না। মৃত্যুকে আবার ভয় কীসের, ভয় তো মৃত্যুর পর লেগে থাকা কলঙ্ককে! এরা মারলে মেরে যাবে, ওরা মারলে এক ছিলিম কলঙ্কও গায়ে লেপে দিয়ে দিবে। মরা মানুষ আমি কালির দাগ মুছবো কি করে? সময় চলে যাবে। সব ভুলে যাব। তারপর একদিন আমিও মর্গে পড়ে থাকবো। হয় সড়ক দুর্ঘটনা, নয় পুলিশ হেফাজত, নয় এনেস্থিসিয়া ডাক্তারের ভুল। বিশ্বাস করবেন না কিছু। ভুল ভাবে রাস্তা পার হওয়া, ছিনতাইয়ের অভিযোগ, দুর্বল হার্ট লাঙ্গের গল্প- বিশ্বাস করবেন না। একদম বিশ্বাস করবেন না।

চিরকুটের লিরিকসটা ভুল। ‘একটা জীবন জানে এক জীবনের গল্প’। কই রায়হানের মায়ের জীবন তো আমরা সব জানি। উনি কাঁদবেন কাঁদবেন কাঁদবেন, তারপর মারা যাবেন। রায়হানের ছবিটা তার মৃত্যুর পরই দেয়াল থেকে নামিয়ে ফেলা হবে। বিচার ওই অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যাবে। মহাকাল ভুলে যাবে বিষাদ ভরা সবচেয়ে ব্যথাতুর এক কবিতার কবির নাম! এটাই ভবিতব্য।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

গোপালগঞ্জে চিকিৎসকের উপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ

Thu Oct 29 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার গত ২৩ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং থানায় ফোন করেন। পরে পুলিশ এসে আসামিকে গ্রেফতার করে। পরদিন ২৪ অক্টোবর (শনিবার) গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন এবং জেলা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo