লাইফ ইন লকডাউন, ডে সিক্সটি এইট

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুন ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

‘ইন ওয়ার, ইউ ডোন্ট মেক সোলজার্স আনহ্যাপি। ট্রাভেল এক্সট্রা মাইল এন্ড চ্যানেল সাম এক্সট্রা মানি টু এড্রেস দেয়ার গ্রিভেয়েন্সেস।’ – ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল এ রায় দিয়েছে। সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে, আদালত এসব ইস্যুতে আর মাথা ঘামাতে চায় না। ভারতে কোথাও কোথাও ডাক্তাররা বেতন পাচ্ছেন না। অভিযোগ আছে আবাসনের ব্যবস্থা সঠিকভাবে করা হয় নি।

এরকম রায় আমাদের দেশেও আসুক এমন চাই না। শুধু চাই কেউ একবার তাকিয়ে দেখুক। আরেকবার শুনুক আমরা কি বলি। কেউ একবার ফিল করুক। কেউ একবার উচ্চকণ্ঠে মৃত ডাক্তারদের নামগুলো পড়ুক। কেউ একটু মনোযোগ দিয়ে সন্তানদের হাহাকার গুলো দেখুক। এখন সব হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি হচ্ছে; কোনরকম হোটেলে এক ঘর ও তিন বেলা খাওয়া কী জুটানো যায় না?

ছেলেটি বেসরকারি ডাক্তার। বাসা টিকাটুলি। কোভিড পজিটিভ হয় দিন ষোলো সতেরো আগে। পুরোটা সময় হোম আইসোলেশনে ছিল। এখন তার মা হাসপাতালে ভর্তি। অক্সিজেন ডিমান্ড বেড়ে চৌদ্দ লিটারে দাঁড়িয়েছে। হন্যে হয়ে খুঁজছে প্লাজমা। পুরাকালে হনুমানের গন্ধমাদন পর্বত টেনে আনা সম্ভবত এর চেয়ে সহজ কাজ ছিল।

এর দায় কে নিবে? এরকম ঘটনা ঘটছে এবং ঘটেই চলেছে। কেন ডাক্তারদের পিতৃঘাতী মাতৃঘাতী বানানো হচ্ছে? কেন সুস্পষ্ট বিধান নেই সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই নিষ্কলুষ কোয়ারেন্টাইন এর? আমাদের পাঁচ তারকা হোটেল লাগবে না, কোনো প্রণোদনা লাগবে না, লাগবে না পিপিই-মাস্ক-গ্লাভস; শুধু একটি থাকার মতো ব্যবস্থা করে দিন। নিদেনপক্ষে ডিউটি শেষে মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই। সেটা সবার জন্য করুন। সরকারি ডাক্তার, বেসরকারি ডাক্তার, শহুরে ডাক্তার, গ্রামের ডাক্তার, ডেডিকেটেড ডাক্তার, নন ডেডিকেটেড ডাক্তার। কোনো করোনা রোগীর কপালে লেখা থাকে না- সে করোনা রোগী!

নক্ষত্র গুলোর যখন জ্বালানি ফুরিয়ে যায় সেগুলো সংকুচিত হতে থাকে। একসময় আর নক্ষত্র থাকে না, হয় ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর। আলো তো দূর, সামান্য তথ্যও আর বের হয় না। যে পরিচয় আগে ‘আলো’ দিয়ে ছিল তার নতুন পরিচয় হয় সর্বগ্রাসী অন্ধকার দিয়ে। আমরা কিছু নক্ষত্র মানবকে ব্ল্যাক হোলে পরিণত করছি। সব ট্রান্সমিশন বুঝতে কনটাক্ট ট্রেসিং লাগে না। সব ডেথ সার্টিফিকেট সবসময় সত্যি কথা বলে না। এটা একজন ডাক্তারের চেয়ে কে ভাল বুঝে!

এখন প্রতিটি দিন তার আগের দিনের চেয়ে খারাপ পরের দিনের চেয়ে ভাল। ডাক্তার মৃত্যুর হিসেব হচ্ছে, তাদের বাবা মায়েরটার হচ্ছে না। একটি বেড চেয়ে, একটি আইসিইউ সিট চেয়ে, এক ব্যাগ প্লাজমা চেয়ে লেখা পোস্ট গুলো পড়ি- চোখের জল ধরে রাখতে পারি না। ধীরেধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব সাহায্যের দরজা। টের পাই। সবাই আশীর্বাদ জমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। একজন মানুষের কাছে একবারই রিকোয়েস্ট করা চলে, দুইবার নয়। সবাই ‘রিকোয়েস্ট’টুকু জমিয়ে রাখতে চাচ্ছে নিজের জন্য।

উপজেলায় নষ্ট ইকো মেশিন ঠিক হবে- আমার ডাক পড়ে। কোয়ারেন্টাইন ফেলে যাই। সে পুরনো রাস্তা। আগে প্রতিদিন যেতাম, এখন কোনো কোনো দিন। দেখি পিচঢালা রাস্তা ভেঙ্গে একাট্টা। অথচ ছয় মাসও হয় নি রাস্তাটি মেরামত হয়েছিল। খুব রাগ লাগে। কোন দেশে আমরা বাস করি! যদি অন্যের শ্বাস চুরি করা যেতো কিছু মানুষ হয়তো তাও চুরি করতো। অসুস্থ দুর্বল হাড্ডিসার মানুষ গুলোর যে নামমাত্র হক সে চুরি করে খেতেও কারো বাঁধে না।

মাঠ গুলো সব সবুজ হয়ে আছে। ধান কাটার পর যে অবশিষ্ট গাছ সেগুলো দেখতেই ধানক্ষেতের মতো লাগছে। বাঙলার বর্ষা ‘সঞ্জিবনী’, মৃতকেও জীবন দিতে জানে। টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল সব ডুবে যেতে বসেছে। এম্বুলেন্সের ড্রাইভার বলে- স্যার এসব কিছুই থাকবে না, সব ডুবে যাবে। তখন নৌকা চলবে।

নেলসন মেন্ডেলাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার জেল খাটা নিয়ে। তিনি বলেছিলেন ‘দে কনসিডারড মি টু বি ইন জেল, বাট আই ওয়াজ অল দ্যা ওয়ে এ ফ্রি বার্ড। আই হ্যাড অল মাই এবিলিটি এন্ড পাওয়ার টু থিঙ্ক বিগ। ইউ সি, ফ্রিডম ইজ ইন এ পার্সোনস থট’।

ম্যান্ডেলার কথাগুলো কানে বাজে। দূরের ওই কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে মুক্ত ভাবতে ভাল লাগে। সব ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত, দুর্ভাবনা থেকে মুক্ত, হিসেব নিকেশ থেকে মুক্ত। ফ্রি লাইক এ বার্ড….!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনার দিনগুলি - ১৩ | অসহায় আত্মসমর্পণ

Mon Jun 15 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুন, ২০২০, সোমবার ডা. রায়হানুল আরেফীন জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালী আজ হাসপাতালে সবার শেষ যে রোগীটা দেখলাম, তিনি এসেছেন সোনাইমুড়ীর এক গ্রাম থেকে। এক ইএনটি চিকিৎসক সরাসরি আমার কাছেই পাঠিয়েছেন। স্টাফরা সবাই ক্লিনিং, গোছগাছের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় রোগীর ছেলে তাঁকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো। রাবেয়া খাতুন, বয়স […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo