লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি ওয়ান

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ মে ২০২০, শুক্রবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

শুনেছিলাম কৈলাসে যাওয়ার চেয়ে ফেরার সময়ই নাকি বেশি লোক মারা যায়! আমাদের লকডাউন অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম হতে যাচ্ছে। আমরা কেন লকডাউনে গেলাম, আর কেনই বা তা থেকে সরে যাচ্ছি- স্পষ্ট নয়। লোক রাস্তায় নামছে, আক্রান্ত হচ্ছে। আমার উপজেলায় আজ প্রথম দুইজন রোগী পাওয়া গেল। তিনজন ডাক্তার কনটাক্টে এসেছেন। ফলাফলঃ আতঙ্ক, ফিসফাস, স্ট্র‍্যাটেজি চেঞ্জ।

আজ একজন ডাক্তার সাহেবের স্ট্যাটাস পড়ছিলাম, কিভাবে তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেছেন। উনাকে কোভিড, নন কোভিড কেউ নিচ্ছিলো না। যখন নিলো তার বাবা নেই। তিনি লিখতে পারছিলেন না, প্রত্যেকটি শব্দ তার প্রফেশনাল ব্রাদারদের বিপক্ষে যায়। আরেকজন তার ইনবক্সের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। তিনি একটি হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, উত্তর আসলো- ‘আর লাগবে না। মা নেই।’ একজন লিখলেন ডাক্তার হওয়ায় তার স্ত্রীকে মালিক বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করছেন।

আমরা এমন এক সময় পার করছি যখন জীবন সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হচ্ছে ফেসবুকে। কোনো সিনেমা বা কোনো উপন্যাসের চেয়ে বেশি রূঢ়ভাবে, বেশি বাস্তব সম্মত হয়ে। মানুষ রোগ গোপন করছে। কোভিড পজিটিভ হয়েও বলছে না। পাছে তাকে হেনস্থা হতে হয়- এ ভয়ে। প্রত্যেকেই তার বয়স্ক বাবা মা শিশু বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত। গডফাদার সিনেমায় শুনেছিলাম ‘ইন সিসিলি, উইম্যান আর মোর ডেঞ্জারাস দ্যান শটগান’। প্রত্যেকেই এখন গডফাদার। প্রত্যেকেই শটগান-কামান-মিসাইল নিয়ে আছে! প্রাচীন গ্রীসে হাতে অস্ত্র নেই বোঝাতে যে হ্যান্ডশেক প্রথা চালু হয়েছিল, কোভিড এসে প্রথম সে প্রথার গোড়ায় কুঠারাঘাত করলো! এখন আর অস্ত্র রাখতে বাধা নেই।

এদিকে ২০০০ ডাক্তার আগেই নেওয়া হয়েছিল, আজ নার্স ৫০০০ জন নেয়ার ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হলো। তারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যাবেন। বিষয়টি সাহসের, বিষয়টি প্রশংসার। কিন্তু কতজন সদিচ্ছায় আর কতজন নিরুপায় হয়ে- সে বলা দুষ্কর। সবাই ভাবছেন কোভিড আর কতদিন, জীবন তো অনেকদিন। শেক্সপিয়রের সে বিখ্যাত প্যারাডক্স- ‘হোয়েন দ্যা হার্লিবার্লি’স ডান, হোয়েন দ্যা ব্যাটেল’স লস্ট এন্ড ঔন!’ ভাবি তাদের ব্যাটেল লস্ট এন্ড ঔন- হয়তো একসাথেই হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস, লাইক, শেয়ার, ট্যাগ- সবকিছুর উপরে বিধিনিষেধ এসেছে। আমরা আমাদের ধারনার চেয়েও বেশি গতিতে পিছন পানে ছুটছি। বদলে যাচ্ছি- টের পাই। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটা বা তিনটায়- ‘আজ ক’জন মারা গেল?’ ‘তিনজন, সাত জন, দশ জন’- কত অবলীলায় বলে ফেলি! হয়তো আর কিছুদিন পর কোনো স্ট্যাটাসই ভাবাবে না। যদি কেউ বলে উর্দুতে স্ট্যাটাস লিখতে। তখনো বলবো- ‘ঠিক আছে, লিখব।’
আমরা আমাদের মৃত দেহটিকে শ্মশানে টেনে নিয়ে চলছি!

আজ বিকেলে ইফতারির আগে আগে আকাশ কালো হয়ে গেলো। তারপর ঝুম বৃষ্টি, বাতাস। ধুম করে কারেন্ট চলে গেল। বদ্ধ জানালা দিয়েও পানি আসতে থাকলো। কালবৈশাখী ঝড়। আমরা অভ্যস্ত এ রুটিনে। তবু কেন জানি খুব ভয় করে।

কাল বৌদ্ধ পূর্ণিমা গেছে। আজ সুপার মুন। এ বছরের তৃতীয় ও শেষবার। মে মাসে বলে এক গালভরা নামও দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফ্লাওয়ার সুপার মুন। ভেবেছিলাম সামনের বছর থাকি কিনা, ‘শেষ’ সুপারমুনটা দেখে নিই। সেও আর হলো না। আকাশ ভর্তি কাল মেঘ!

আমরা না থাকলেও প্রাকৃতিক ঘটনাগুলো থাকবে। কেউ আমাদের মতো করে দেখবে। ভাববে। লিখবে। তাই না? ত বে আর কী…!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: শেরপুরে ৬ চিকিৎসকসহ আক্রান্ত ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী

Fri May 8 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ দেশে চলমান করোনা মহামারীতে দিনদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশে শনাক্তকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে দুইদিন আগে। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে পুরো দেশে চিকিৎসকসহ সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্রমাগত আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে আরো একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo