মেশিন আছে, মানুষ আছে – মনোযোগ চাই

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার

লেখাঃ ডা. মো. মারুফুর রহমান অপু
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (চিকিৎসা জীবপ্রযুক্তি), এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদফতর।

ভারত সেরাম ইন্সটিটিউটকে অন্তত আগামী আরও কয়েক মাস ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে দেবেনা। ফলে বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন পাবার সময়টা আরও কয়েক মাস পিছিয়ে গেল। এটা নিয়ে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু আমাদের করার নেই৷ সরকার হয়তো কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করবে, তাতে আমরা সফল হবো কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তার চেয়ে চলুন ব্যাপারটিকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি।

যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলো এসেছে ফার্মা কোম্পানির রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট (আরএন্ডডি) এর হাত ধরে। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত গবেষণা কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় করছে বা করার সক্ষমতা আছে? আমাদের ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় ও শক্তিশালী উৎপাদন ও রপ্তানিতে, গবেষণা ও উন্নয়নে নয়। আমরা লো-মিডল ইনকাম দেশ হিসেবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পেটেন্ট রেস্ট্রিকশন এর আওতামুক্ত বিধায় মূল আবিষ্কারক কোম্পানিকে কোনো টাকা পয়সা না দিয়েই ঐসব ওষুধ এদেশে তৈরি করে বিক্রি করতে পারি। যে মুহূর্তে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ বলে ঘোষিত হবে সে মুহূর্তে এই সুবিধা থাকবেনা তখন কি করবো আমরা? আমাদের অল্প কিছু ফার্মা কোম্পানিতে আরএন্ডডি বিভাগ আছে। কিন্তু সেখানেও মূলত উৎপাদনমুখী কাজ হয়। নতুন কিছু তৈরি সংক্রান্ত কাজ হয়না বা সেই সক্ষমতাও নেই৷

বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে বৈশ্বিক দৌড়ে উসাইন বোল্ট হলেও গবেষণা ও জ্ঞান সূচকে একেবারে পেছনের সারিতে। আমাদের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধার মূল্যায়ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বার কিংবা কতজন সরকারি বেসরকারি চাকুরিতে ঢুকলো বা কতজন দেশের বাইরে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডিতে গেলো সে হিসেবে হয়৷ কতটি গবেষণা প্রবন্ধ হলো, কতটি সাইটেশন হলো এগুলো কেউ ভাবেনা৷ ভারত এদিক থেকে চিন্তাভাবনায় আরও এগিয়ে, সেখানে বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি পিএইচডি শেষ করার শর্ত গবেষণাপত্রে সীমাবদ্ধ না রেখে উদ্যোক্তা হবার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। সুতরাং ভারত নিজেদের ভ্যাকসিন বানাবে এবং অন্যের ভ্যাকসিন ও বানাবে আর আমরা পরনির্ভরশীল থাকব এটাই স্বাভাবিক। অথচ বাংলাদেশে অনেক কারণেই গবেষণা করা সহজ। উন্নত দেশে গবেষণা খাতে খরচের বড় অংশ যায় সংশ্লিষ্টদের বেতনে, জটিলতার বড় অংশ যায় নানা রকম অনুমোদন আদায়ে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বা ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে ফান্ড এনে নিজের বেতন জোগানোর ব্যাপার নেই। ফলে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই বা প্রয়োজন হলেও এদেশে বেতন অনেক বেশি নয়। অনুমোদন বা রেস্ট্রিকশনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে অনেক শক্ত রেস্ট্রিকশন নেই যা অন্যান্য দেশে আছে। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে নমুনা সংগ্রহও কষ্টকর নয়৷ দামী দামী যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় আমাদের জুড়ি নেই সুতরাং ভালো মানের গবেষণাগার তৈরি (আছেও বেশ কিছু) ও পরিচালনা খুব কঠিন কিছু না। সব মিলিয়ে পরিবেশ মোটামুটি তৈরি হয়েই আছে। এই খাতে অর্থাৎ গবেষণা ও তার মাধ্যমে নতুন পণ্য উৎপাদন বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল সেক্টরে যদি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে ব্যাপক বিনিয়োগ করা যায় (গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির মত) তাহলে খুব দ্রুতই আমাদের সক্ষমতা অর্জন সম্ভব। এর জন্য যেটা সবার আগে করতে হবে তা হলো গবেষণায় ইনসেনটিভ যোগ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যত বেশি গবেষণা করবেন তত বেশি তাদের আয় হবে বেতনের অতিরিক্ত (অনেকটা ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র‍্যাকটিসের মত), যে বিশ্ববিদ্যালয় যত বেশি গবেষণা করবে সে ততবেশি সরকারি বেসরকারি অনুদান পাবে, বেসরকারি খাতে এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা প্রাধান্য পাবে ইত্যাদি সুবিধা যদি চালু করা যায় তাহলে আমাদের বিসিএসমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন ধর্মী প্রোডাক্টিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত হওয়া খুবই সম্ভব। এমন শিক্ষানীতি নিয়ে কেউ ভাববেন কি?

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মেঘেরা অন্তরীণ || পর্ব-০৫

Mon Jan 4 , 2021
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার ডা. শুভদীপ চন্দ একজন প্রতিপক্ষ থাকা ভালো, নইলে মানুষের মন এমন যে ‘প্রতিপক্ষ’ বানিয়ে নেয়। মন থেকে কখনো ভিলেন তৈরি হয় না, সবসময় সুপার ভিলেন তৈরি হয়। মেয়েরা বিয়ের পর সতীন না পেলে স্বামীর অতীতকেই সতীন হিসেবে ধরে নেয়। একজন মানুষের গ্রামের বাড়ি, বাবা- […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo