মেডিকেল বর্জ্যের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা, হতে পারে নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি

[প্লাটফর্ম নিউজ, ৩জুন, ২০২০, বুধবার]

করোনা মহামারীর পূর্ব থেকেই বাংলাদেশে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা বিরাজমান ছিল। মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে কোনো সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়নি। যার ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী সহ সর্বসাধারণ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর ফলে বিপুল পরিমাণে বেড়েই চলেছে বিপজ্জনক মেডিকেল বর্জ্য।

হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দের ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামগুলি (পিপিই) প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও) থেকে জানানো হয়েছিল যে পিপিইর প্রতিটি সেট এক সময় ব্যবহারের পরে বিপজ্জনক মেডিকেল বর্জ্য হয়ে যায়। পিপিই ছাড়াও অন্যান্য ধরণের বিপজ্জনক বর্জ্য যেমন ফেসিয়াল টিস্যু, গজ টুকরা, মাস্ক, অক্সিজেন মাস্ক, ন্যাসোফেরেঞ্জিয়াল সোয়াবের টেস্ট টিউব, স্যালাইন ব্যাগ, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, সূঁচ ইত্যাদি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।

দেশে করোনাভাইরাস উপসর্গ ধরা পড়ার পরে শুধুমাত্র একমাসে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভসসহ সংশ্লিষ্ট প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন। শুধু ঢাকায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭৬ টন। যার বড় একটি অংশ যত্রতত্র ফেলার কারণে মাটি ও পানিতে মিশছে। এতে মাটি ও পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার কারণে ভয়াবহভাবে গণসংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানান এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এস ডো) নামের সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এসব প্লাস্টিক বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্কাশন না করা হলে এগুলো থেকে মাটি, পানি ও বায়ুসহ পরিবেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভয়াবহ দূষণ দেখা দিবে। বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এই কর্মীরা সংক্রমিত হলে তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ আরো বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা নগরীতে কয়েক হাজার পরিছন্নতা কর্মী কাজ করেন। এই পরিছন্নতা কর্মীরা আক্রান্ত হয়ে পড়লে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় একটি সংকট তৈরি হবে।

“পরিবেশের কথা চিন্তা করলে, আমরা এসব বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলছি। একসময় সেটা আমাদের খাদ্য চক্রে মিশে যাচ্ছে। কারণ ক্ষতিকর রাসায়নিক গাছপালা শুষে নেয়, পরবর্তীতে যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে এখনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।”

বলছেন “এসডো” এর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা।

বেসরকারি এই সংস্থাটি বলছে, এসব বর্জ্যের ফলে অ্যাজমা, ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগে আগাম মৃত্যু, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা লাগা, চর্মরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, ব্লাডপ্রেশার, শিশুদের স্বল্পবুদ্ধি হওয়ার মতো সমস্যার তৈরি হতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন,

“এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের সংস্থাগুলো রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। নিয়মিত আলোচনা চলছে এবং এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। যত্রতত্র এসব আবর্জনা না ফেলে জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে। নইলে এটি আরো কঠিন হবে।”

পরিশেষে বলা যায় যে, সঠিক ও পর্যাপ্ত নির্দেশিকা বজায় রাখার মাধ্যমে যদি সঠিক ভাবে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ করা না যায়, তবে কোভিড-১৯ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং আগামী দিনগুলিতে আরও বেশি প্রাণ
কেড়ে নিতে পারে এই ভাইরাস।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি নিউজ
নিজস্ব প্রতিবেদক/তাসমি তামান্না ঐশি

Ruhana Auroni

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

একজন করোনাজয়ী ডা. ফাহিমের যুদ্ধ

Wed Jun 3 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ জুন ২০২০, বুধবার রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফাহিম জালাল- করোনাযুদ্ধে যিনি লড়ছেন প্রথম দিন থেকেই, করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সুস্থ হবার পরও থেমে নেই তার লড়াই। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে নেমে পড়েছেন নতুন লড়াইয়ে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo