মুক্তিযুদ্ধ ও ডাক্তারের ভূমিকা: জাতীয় পতাকার মর্মার্থ

বুদ্ধিজীবি

যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য উপস্থিতি নির্ভর করে পূর্ব দিনে আহত সৈন্যদের নতুন করে উপস্থিতির উপর। যুদ্ধাহত সৈন্যদের আবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরিয়ে দেয়ার পিছনে যাদের ভূমিকা অনন্য, তারা হলো “মেডিকেল ডাক্তার রা। তাদের অক্লান্ত সেবা দেশের মুক্তিসেনা দের দিয়েছিল নতুন অনুপ্রেরণা।
ডাক্তাররাই জাতীয় পতাকার লালের যেই রক্ত ক্ষরন হচ্ছিল, সেই রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করে সবুজ বাংলা বিজয়ের জন্য ভূমিকা ছিল এই সেবক দের।
মুক্তিযদ্ধের ডাক্তারি নেতৃত্বের গোড়াপত্তনকারী হলেন ঢাকা মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগের জাঁদরেল প্রফেসর ডা: ফজলে রাব্বি। তিনিই ঢাকা মেডিকেলে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিতে টিম গঠন করেন। তার সাথে যুক্ত হন মিডফোর্ড হাসপাতালের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: আলিম চৌধুরী। মিডফোর্ডের ডাক্তার হলেও সেবার সার্থে বেশির ভাগ সময় তিনি ঢাকা মেডিকেলেই থাকতেন।
যুদ্ধে আহত রোগীদের অপারেশন রিলেটেড সব দায়িত্ব ছিল সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা: সামসুদ্দিন আহমেদের। তার সহযোগী হিসেবে সহকারী সার্জন ছিলেন ডা: আজহারুল হক ও ডা: এ বি এম হুমায়ুন কবির। এই দুজনে ইমার্জেন্সি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পেশেন্ট ভর্তি করার জন্যও অনেক প্রতিকূলতা পোহাতে হতো। অনেক সময় ডাক্তার দের হাসপাতালে প্রবেশ করতে হতো রোগী হিসেবে। ডা: আজহারুল হক কিছু রোগীর চিকিৎসা করতেন তার নিজস্ব বানানো ডিস্পেন্সারি ” সাঈদা ফার্মেসী ” তে। যেটা ছিল হাতিরপুলে।
ডা: ফজলে রাব্বি ডাক্তার ও মেডিকেল স্টুডেন্ট দের ভাগ করে দেন বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দিয়ে। প্রধানত ৩ টা ডাক্তার গ্রুপ ছিল। এদের অনেকেই অস্ত্রহাতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা এবং অসহায় বাঙালিদের চিকিৎসা করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা তিনভাগে বর্ণনা করা যেতে পারে- এক ভাগে যারা ঐ সময়ে কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের তৎপরতা, আরেকভাগে এই কলেজ থেকে পাশকৃত চিকিৎসকদের একটি অংশ যাঁরা অন্যান্য হাসপাতাল ও সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে কর্মরত ছিলেন কিনতু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এবং শেষভাগে যারা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ না করলেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের চিকিৎসা করেছেন। মজার বিষয় হলো – সেই সময়ে মুক্তিযদ্ধে মেডিকেল স্টুডেন্ট দের ভূমিকা অনন্য ছিল। ঢাকা মেডিকেলের ৫ম বর্ষের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম, নীপা লাহিড়ী, মোঃ হুমায়ুন ফরিদি, মোঃ হাসান শহিদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এমন ছাত্রছাত্রী সব মেডিকেলেই ছিল।
দেশের এই সব অবিসংবাদিত যোদ্ধাদের নাম হয়তো ইতিহাসের নামের তালিকায় সবার নিচে। কিন্তু তাদের নিভৃত সেবা যেসব মুক্তিযোদ্ধা রা পেয়েছিল, তারাই শুধু জানে এই সেবার মূল্য কতো ছিল। দেশের সব গুলো হাসপাতালের ডাক্তার গুলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সেবা দিয়েছিল নি:সার্থে। তবুও প্রাপ্ত জাতির কাছে এই সেবক দের অবস্থানের উন্নতি নাই। তবুও দু:খ নাই। এই দিন এমন থাকবে না হয়তো। কারন প্রখ্যাত ডেইলি মেইল ও দ্যা গার্ডিয়ান এর রিসার্চে বেরিয়ে এসেছে – ১৯৮৩ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ডাক্তার দের অবস্থান ও জনপ্রিয়তা আগের বেড়েছে, বরং কমেনি। এটা মূলে ছিল সেবা।

লিখেছেন ডা. সাঈদ সুজন

ডক্টরস ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিজয় উদযাপনঃ বিজয় ৭১

Tue Dec 16 , 2014
গত বছর ঢাকা ডেন্টাল কলেজে উন্মোচিত হয়েছিলো দেয়ালিকা ‘বিজয় নিশান’। পতাকার উপর এক টুকরো বাংলাদেশকে ধারণ করার প্রচেষ্টা করেছিলো ডি -৪৮ আর ডি-৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। চাওয়া ছিলো একটাই সবার মধ্যে বিজয়ের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া।’বিজয় নিশান্ִ যেন ক্যাম্পাসটায় প্রাণ সঞ্চার করে রেখেছিলো পুরো একটি বছর। তাদের প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। গত বছরের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo